মুখোমুখি...
রুনা লায়লা এমন গাইলেন,
‘সাধের লাউ’-এর যন্ত্রণাটাই রইল না
ত্রিকা: ‘ভূমি’র সদস্যদের মধ্যে মতভেদ হয়েছিল এই কিছু দিন আগে। অন্যান্য ব্যান্ড-এর সদস্যদের মধ্যেও মতের অমিল হচ্ছে। ভাঙন ধরছে। যে যার মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাইছেন শিল্পীরা। ‘দোহার’-এও কি এমন আশঙ্কা আছে?
কালিকাপ্রসাদ: না, অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে এমন আশঙ্কা করছি না।

পত্রিকা: কী করে এত নিশ্চিত হচ্ছেন? সময়টা যখন ভাঙনেরই।

কালিকাপ্রসাদ: কারণ এখনও আমরা একটা পরিবারের মতোই। এখানে আমি দেখি সৃজনশীল দিকটা। আর রাজীব (দাস) দেখে প্রশাসন। গানও গায়। এ দুটোই তো একটা দলের প্রধান দিক। তাই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব অটুট থাকলে দলও অটুট থাকবে।

পত্রিকা: কিন্তু এক সময় ‘দোহার’ থেকেও দু’জন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী চলে গিয়েছিলেন...

কালিকাপ্রসাদ: দু’জন নন, ন’জন নানা ভাবে গেছেন। কিন্তু যাঁরা বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা দলের প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন না। নিজেদের মতো চলতেন। সেই জন্যই একসঙ্গে থাকা সম্ভবপর হল না। কিন্তু দল ভাঙেনি।

পত্রিকা: ১২ বছর ধরে ‘দোহার’ টিকে আছে। ব্যান্ডের এই ধুন্ধুমার জনপ্রিয়তার দিনে কী করে শ্রোতাদের বশ করে রাখছেন?

কালিকাপ্রসাদ: দেখুন প্রথম কথা, ব্যান্ডের সঙ্গে আমাদের তুলনা হয় না। আমরা লোকগান গাই। নতুন গান লিখি না বা গাই না। আমাদের গানে পশ্চিমী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হয় না। সেই জন্যই ‘দোহার’ গানের দল। ব্যান্ড নয়। শুধু লোকগান বলেই আমাদের একটা নিজস্ব বাজার তৈরি হয়েছে।

পত্রিকা: আপনারা আসার পর বেশ কয়েকটি লোকগানের দলও এসেছে। তারা আসার পরও কী ভাবে আপনাদের বাজারটা একচেটিয়া।

কালিকাপ্রসাদ: আমাদের সুর খেলানোর কায়দা, বিভিন্ন মেঠো বাদ্যযন্ত্র যেমন ঢোল, খোল, মাদল, ধামসা, সারিন্দা, ডুবকি, খঞ্জনি বাজিয়ে গানের সঙ্গে যে ভাবে ধ্বনির বাতাবরণ তৈরি হয় সেটাই ইউএসপি। মাদকতাটাই আসল।

পত্রিকা: শুধু লোকগানই গাইবেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?

কালিকাপ্রসাদ: লোকগানের মূল রূপ রস গন্ধ, মানে অরিজিন্যালিটি ধরে রাখার জন্যই লোকগান গাইতে শুরু করি।

পত্রিকা: বলতে চাইছেন অন্য শিল্পীরা যে লোকগান করেন তাতে অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি থাকে।

কালিকাপ্রসাদ: হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই থাকে। মাস অ্যাপিল বাড়ানোর জন্য কথা সুর সব বদলে দেওয়া হয়। নির্মলেন্দু চৌধুরী মহান শিল্পী। কিন্তু তিনিও ‘সোহাগ চাঁদবদনি’ গানের আসল কথাগুলো বদলে ছিলেন। ‘সাধের লাউ’ একটি বিরহের গান। কিন্তু রুনা লায়লার গায়কি এমন ছিল যে যন্ত্রণাটা রইলই না। তার পর সিনেমা-টিনেমায় যে ভাবে ‘সাধের লাউ’ গাওয়া হয়েছে সেটা ভয়ঙ্কর।

পত্রিকা: তাতে কী হয়েছে? লোকে তো সে সব গান শুনেছে। আনন্দ পেয়েছে।
কালিকাপ্রসাদ: লোকে শুনলেই যে সেটা মহৎ শিল্প হল তা নয়। ঋত্বিক ঘটকের ছবি অনেকেই দেখেননি, তার মানে সেটা মহৎ শিল্প হল না?
পত্রিকা: নির্মলেন্দু চৌধুরী তা হলে মহৎ শিল্পী নন?
কালিকাপ্রসাদ: অবশ্যই মহৎ শিল্পী। উনি যেটা করেছেন, সেটা ওঁর রুচি।

পত্রিকা: নির্মলেন্দু চৌধুরী, বা শচীন দেব বর্মনরাও লোকগান গাইতেন। ‘দোহার’ এত বছর ধরে লোকগানকে কতটা এগোল?

কালিকাপ্রসাদ: নির্মলেন্দু চৌধুরী, আব্বাসউদ্দিন, হেমাঙ্গ বিশ্বাস.... এঁদের মতো মহান লোকশিল্পীদের সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না। বড় জোর বলা যায় আমরা তাঁদেরই জ্বালানো মশাল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

পত্রিকা: এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মানে এক ধরনের সমৃদ্ধি বা বিস্তার। সেটা কতটা হয়েছে?

কালিকাপ্রসাদ: অনেকটাই। আগে কখনও কলেজ সোশ্যালে লোকগীতি হত না। এখন হয়। কলেজের ছেলেরা যখন ব্যান্ড তৈরি করে অনুষ্ঠান করে দু’-তিনটে সাধারণ গান গাওয়ার পর চলে যায় লোকগানে। সিনেমাতেও আসছে লোকগান। লোকগান চলে এসেছে মেনস্ট্রিম ইন্ডাস্ট্রিতে। এই ভাবেই লোকগান প্রসারিত হয়েছে। আমরা খুব শিগ্গির একটা ওয়েব সাইট খুলতে চলেছি যেখানে আমাদের সংগ্রহের লোকগান তো থাকবেই। সেই সঙ্গে পাওয়া যাবে সেগুলি কী ধরনের গান, রচয়িতা কে সে সম্পর্ক জোগাড় করা তথ্য।

পত্রিকা: শোনা যায় ‘দোহার’কে অনেক উদ্যোক্তা ব্যান্ড হিসেবে অনুষ্ঠান করতে ডেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন ওই সব ঢোল খোল ধামসা মাদল দেখে।

কালিকাপ্রসাদ: হ্যা। সেটা কখনও কখনও শুরুর দিকে হয়েছে। কিন্তু শেষমেশ আমরা আসর জমিয়ে চলে এসেছি। এমনও দেখেছি আমাদের গাওয়া ‘গাঞ্জার চিরল চিরল পাত’, ‘খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন’, ‘দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা’ এই সব গানের সঙ্গে কলেজের পুরো অডিটোরিয়াম নাচছে। গাম্ভীর্যের মুখোশ সরিয়ে নাচছেন প্রফেসররাও।

পত্রিকা: বছরে এই ভাবে ক’টা অনুষ্ঠান করেন?

কালিকাপ্রসাদ: শ’দেড়েক তো বটেই।

পত্রিকা: শুধু লোকগানের ওপর ভরসা করে চিরকাল চলবে?
কালিকাপ্রসাদ: সংগ্রহে আছে সাড়ে পাঁচ হাজার গান। আমার কাকা অনন্ত ভট্টাচার্য ছিলেন শিলচরের মানুষ। সেখানকার আকাশে বাতাসে গান। তিনি এই সব গান সংগ্রহে রেখে গেছেন বলে আমরা গাইতে পারব। আমরা গাই বাউল, কীর্তন, ঝুমুর, ভাটিয়ালি, চটকা, ভাওয়াইয়া। লোকগান বাঁধার প্রসেসটা কন্টিনিউয়াস চালাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। আমাদের দলের সদস্যেরা সে সব গান সংগ্রহ করে আনছে। আনবেও।

পত্রিকা: লোকে বলে, ‘দোহার’ মানে শুধুই কালিকাপ্রসাদ। আপনারই একনায়কতন্ত্র...

কালিকাপ্রসাদ: নান্দীকার মানে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, অন্য থিয়েটার মানে বিভাস চক্রবর্তী। তার মানে তো কি এটাই যে ওঁরাই দল চালাচ্ছেন? নিশ্চয়ই নয়। যেহেতু আমি দলটাকে নিয়ে গোড়া থেকে ভাবনাচিন্তা করেছিলাম তাই আমার নামটা ঘটনাক্রমে সামনে এসে পড়ে। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব ভূমিকায় ঋত্বিক, অমিত, সত্যজিৎ, মৃগনাভি, নিরঞ্জন রয়েছেন। ওঁরা ছাড়া এ দল অচল।

পত্রিকা: এ সব কথা শোনায় ভাল। কিন্তু ভাবুন তো এক বার, ‘দোহার’ আছে কিন্তু কালিকাপ্রসাদ নেই..

কালিকাপ্রসাদ: অসম্ভব কিছু নয়। বিশ্বাস করি ব্যক্তির থেকে দল সব সময়ই বড়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.