বিচ্ছিন্ন কলসীপাড়া
কাঁটা তারের বেড়া নেই। এমনকী ছিটমহলও নয়। অথচ ছিটমহলের মতো বিছিন্নতায় বিষণ্ণ মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কলসীপাড়া। নেই পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ, সেচ ও স্বাস্থ্য পরিষেবা। একমাত্র প্রাইমারি স্কুল ভরসা ছেলেমেয়েদের। গোটা মহল্লায় মাধ্যমিক পাশ আছেন দু’জন। নিয়ন্ত্রিত চলাচল ব্যবস্থার জন্য ওই ‘নেই রাজ্যের’ বাসিন্দারা স্বচ্ছন্দে নিজেদের খাঁচা বন্দি মানুষের সঙ্গে তুলনা করেন। কেন গ্রামের নাম কলসীপাড়া? প্রশ্ন শুনে হাসলেন প্রবীণ মহম্মদ আমানুল্লা। উত্তর না-দিয়ে পাটকাঠির আঁচড়ে মাটিতে ছবি আঁকলেন। সরু গলার নীচে ঝুলে ডিমের মতো অংশ। ঠিক যেমনটা থাকে মাটির তৈরি জল রাখার আধারে। বললেন, “এটাই আমাদের গ্রাম। কলসীর মতো আদল তাই নাম হয়েছে কলসীপাড়া।” গ্রামে ঢোকার মুখে রয়েছে বিরাট লোহার গেট। ঠিক যেন কলসির মুখে আটকে আছে প্লেট। প্রায় ৮ কিলোমিটার কলসীপাড়ার ৩ দিক ঘিরে বাংলাদেশের পানবাড়ি ও কুচলিবাড়ি গ্রাম। মাঝবয়সী বাবুল হোসেনের কথায়, “এখানে মানুষ অদৃশ্য খাচায় বন্দি।” এলাকার জমির পরিমান ৬৯ একর। জনসংখ্যা ৮০০। সেচের সুবিধা নেই। কুয়ো খুড়ে জল তুলে ভুট্টা, তামাক ও সবজির চাষ করেছেন বাসিন্দারা। কিন্তু অনেক কষ্টে ভাল আবাদ করেও স্বস্তি নেই। ফসল ওঠার পরে হাটে পৌছনোর কথা ভেবে চুল ছিঁড়তে হয় চাষিদের।
কলসীপাড়ার জামালদহ বালা পোখরি প্রাইমারি স্কুল। ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।
উত্তরপাড়ার যুবক মেহবুব রহমান বলেন, “এ বার টম্যাটোর ফলন ভাল হয়েছে। কেমন করে হাটে নিয়ে যাব ভাবছি।” রাস্তা বলতে ভাঙাচোরা মেঠো পথ। সম্প্রতি জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্পে মাটি ফেলা হয়েছে। ধুলো উড়ছে। ওই রাস্তা দিয়ে খেতের ফসল নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ধাপরা হাটে পৌছতে দম ফুরিয়ে যায়। কলসীপাড়া থেকে ইচ্ছে মতো যাতায়াতের সুযোগ নেই। তাই চাষিদের সময় মেপে চলতে হয়। বুধবার ও শনিবার ধাপরায় হাট বসে। ওই দিন সকাল ছ’টায় লোহার গেট খোলার পরে শুরু হয় হাটে পৌছনোর তৎপরতা। সন্ধ্যা ৮টায় গেট বন্ধ হওয়ার আগে বাড়িতে ফিরতে হয় তাঁদের। বেহাল রাস্তার জন্য অনেক হিসেব কষে তবেই ২০ কিমি দূরে মহকুমা সদর মেখলিগঞ্জ অথবা ৩০ কিলোমিটার দূরে ব্লক অফিস চ্যাংরাবান্ধায় যান বাসিন্দারা। কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জিতেন রায় বলেন, “রাস্তা পাকা করার দাবি অনেক দিনের। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সহজে কাজ সম্ভব হচ্ছে না।” কলসীপাড়ায় বিদ্যুৎ অধরা। গ্রামের পেট চিরে বয়ে চলেছে সতী নদী। নদী গর্ভে বিঘার পর বিঘা জমি নষ্ট হয়েছে। বাসিন্দারা ভাঙন প্রতিরোধের দাবি তুলেছেন। গ্রামে স্কুল বলতে জামালদহ বালা পোখরি প্রাইমারি স্কুল। দু’বছর আগে ঝড়ে চাল উড়ে যাওয়ার পরে মেরামত হয়নি। স্কুলকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার দাবি উঠেছে। প্রধান শিক্ষক গিরীন্দ্রনাথ রায় জানান, ২০০৬-এ প্রাইমারি স্কুল তৈরির পরে গ্রামের ছবি বদলেছে। স্কুল অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হলে গ্রাম উপকৃত হবে। মেখলিগঞ্জের বিডিও সপ্তর্ষী নাগ আশ্বস্ত করেন, “রাস্তা ও বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্কুলটিও উন্নত করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.