অভিযোগ সাঁতুড়ির গ্রামে
ডাইনি অপবাদে আদিবাসী একঘরে পরিবার
ডাইনি অপবাদ নিয়ে এক আদিবাসী পরিবারকে নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি থানার ধ-ভাঙা গ্রামে। গ্রামের ষোলো আনা সালিশি সভা বসিয়ে ওই পরিবারকে আর্থিক জরিমানা করেছে বলেও অভিযোগ। শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্যদের দাবি, ষোলো আনার ‘ফতোয়া’য় তাঁদের গ্রামে ‘একঘরে’ করেও রাখা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি। আপাতত পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। দীর্ঘদিন অসুখে ভুগে ওই দিন মারা যান গড়শিকা পঞ্চায়েতের অর্ন্দত এই ধ-ভাঙা গ্রামের প্রৌঢ় বিয়ো বাস্কে। এর পরেই মৃতের তিন ছেলে ও গ্রামের মাতব্বেরা সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, গ্রামেরই বাসিন্দা কাহারাম বাস্কে ও তাঁর বৌদি ‘ডাইন’ ও ‘ডাইনি’ হওয়ায় তাঁদের ‘কুনজরে’ বিয়ো বাস্কের মৃত্যু হয়েছে। পেশায় রাজমিস্ত্রি কাহারামের অভিযোগ, মাতব্বরদের নির্দেশে ওই দিনই তাঁকে ও তাঁর বৌদি লক্ষ্মীমণি বাস্কেকে মৃতের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। অসুস্থ দাদা বড়কা বাস্কেকেও টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কাহারাম বলেন, “বিয়োর ছেলে চাঁদরায়, শুকদেব ও সীতারাম মিলে আমাদের হুমকি দেয়, হয় ওদের বাবাকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। না হলে আমাদের পুড়িয়ে মারা হবে। সেই সময় গ্রামের কিছু মাতব্বরও সেখানে ছিলেন। ওদের কত বোঝানোর চেষ্টা করলাম, আমরা ডাইনি নই। ওরা কিছুই না শুনে আমাদের মারধর করে।”
কোনও রকমে পালিয়ে বাড়িতে ফিরে নিজের স্ত্রী ও দশ বছরের ভাইপোকে পাশের বেলডাঙা গ্রামে এক আত্মীয়ের কাছে রেখে আসেন কাহারাম। এর পরে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে সাঁতুড়ি থানায় গিয়ে পুলিশকে সব জানান। রাতেই পুলিশ যায় ধ-ভাঙা গ্রামে। পুলিশের হস্তক্ষেপেই তখনও চাঁদরায়দের বাড়িতে আটকে থাকা লক্ষ্মীমণিদেবী ও তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। রাতেই পুলিশের সাহায্যে কাহারাম বাড়িতে নিয়ে আসেন স্ত্রী ও ভাইপোকে। কাহারামের দাবি, “মৃত বিয়ো বাস্কের তিন ছেলে আর গ্রামের তিন মাতব্বরের বিরুদ্ধে থানায় তিনি লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ শুধু বলে বিষয়টা দেখছি।”
পুলিশ অবশ্য পরে ফের গ্রামে যায়। কিন্তু সমাজের ‘নিয়মের’ বাইরে গিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়ায় বুধবারের পর থেকে গ্রামে তাঁদের ‘একঘরে’ করে রাখা হয়েছে বলে কাহারামের অভিযোগ। তাঁর আরও অভিযোগ, “শনিবার বিকেলে আমাদের সালিশি সভায় ডেকে পাঠিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়ার শাস্তি হিসাবে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ষোলো আনা। তবে আমি টাকা দিতে রাজি হইনি।”
কাহারাম আরও জানান, মঙ্গলবার ঘটনার পরেই তিনি সিপিএমের গড়শিকা লোকাল কমিটির সম্পাদক বিবেকানন্দ রায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। স্থানীয় বিজেপি নেতা সুশান্ত কেওরার অভিযোগ, “অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন সিপিএম নেতারা।” এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিবেকানন্দবাবুর দাবি, “ধ-ভাঙা গ্রামের ঘটনাটি নিছকই ঘরোয়া বিবাদ। খবর পেয়ে গ্রামে যাই। বিবাদ ওঁরা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলেছেন। জরিমানা করার কথা সত্যি নয়।”
বিবেকানন্দবাবু এ কথা বললেও জরিমানার কথা মেনে নিয়েছেন অন্যতম অভিযুক্ত চাঁদরায় বাস্কে। তাঁর বক্তব্য, “সমাজের নিয়ম ভেঙে পুলিশের কাছে যাওয়ার জন্যই ষোলো আনা জরিমানা করেছে।” বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ অবশ্য তিনি অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “বাবা মারা যাওয়ার পরে ষোলো আনাই কাহারাম ও তার বৌদিকে ডাইনি সাব্যস্ত করে। ষোলো আনা ওই পরিবারকে সমঝে চলতে বলেছে। ওদের এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।”
এই পরিস্থিতিতে কাহারামের আশঙ্কা, “পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গ্রামেও একঘরে করে রেখেছে। এর পরে আরও বড় বিপদ হতে পারে।” যদিও রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, পুলিশ বারবার ওই গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে, যাতে অভিযোগকারী পরিবারের উপরে হামলা বা ওই জাতীয় কিছু না হয়। তিনি বলেন, “আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব বিষয় হওয়ায় ঘটনাটি স্পর্শকাতর। তাই সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.