মকরস্নানের দিনেও ভুগতে হল পুণ্যার্থীদের
নকনে ঠান্ডায় তাঁরা সারারাত অপেক্ষা করেছেন লট-৮ জেটিঘাটে। ভেবেছিলেন রবিবার মকর-স্নানের ভোরে নিশ্চিন্তে পৌঁছে যাবেন সাগরতটে। ‘পুণ্যস্নান’ সারবেন। কিন্তু বিধি বাম! ভোর ৫টায় মুড়িগঙ্গায় ভাটা। শনিবার প্রশাসনিক অব্যবস্থার জন্য যে দুর্ভোগ দিনভর নাকাল করেছে পুণ্যার্থীদের, রবিবারেও তার থেকে মুক্তি মিলল না। ‘মাহেন্দ্র ক্ষণে’ ডুব দেওয়া হল না দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা লাখো পুণ্যার্থীর।
রবিবার ভোর ৫টা। কাকদ্বীপের লট-৮ জেটিঘাট তখন কুয়াশায় মোড়া। ঠান্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার পুণ্যার্থী। অপেক্ষা করছেন কচুবেড়িয়া যাওয়ার ভেসেলের জন্য। হঠাৎই মাইকে ঘোষণা, ‘ভাটার জন্য ভেসেল চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে’। ভিড়ের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রকাশ্য ক্ষোভে পরিণত হল।
মিলিয়ে দিল মেলা। রাজনীতির ঝান্ডা হাতেই সাগরে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা তীর্থযাত্রী।
সেই ভিড়ে দাঁড়িয়ে নানা জনকে বারে বারে সময় জিজ্ঞাসা করছিলেন উত্তরপ্রদেশের আজমগড় থেকে আসা ইরাবতী দেবী। বয়স ষাট পেরিয়েছে। আপাদমস্তক মোটা চাদরে ঢাকা প্রৌঢ়ার মুখে একরাশ বিরক্তি। সঙ্গে দুশ্চিন্তাও। আর বোধহয় ‘মাহেন্দ্র ক্ষণ’-এ স্নান করা হল না! প্রৌঢ়ার কথায়, “শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে ডায়মন্ড হারবারে চলে এসেছি। তার পরে যানজটে আটকে যাই। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ কাকদ্বীপে পৌঁছই। তার পরে তো পুলিশ বাস আটকে দিল। সকালে ৫ কিলোমিটার হেঁটে লট-৮ এ এসেছি। এখন দেখুন কী অবস্থা। সকাল ১১টার মধ্যে সাগরে পৌঁছতে না পারলে মাহেন্দ্র ক্ষণে স্নান করা হবে না।”
ঠিক একই ভয় করছিলেন উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা রামবিলাস যাদব, বিহারের হনুমন্ত সিংহেরা। যাঁদের অনেকেই এ দিন ওই সময়ের মধ্যে সাগরে পৌঁছতে পারলেন না। কেননা, মুড়িগঙ্গায় পুরোদস্তুর ভেসেল চলাচল শুরু হল সকাল সাড়ে ৯টার পরে। লট-৮ থেকে ভেসেলে কচুবেড়িয়া যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। সেখান থেকে গাড়িতে সাগর ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের পথ। তার পরে প্রায় মিনিট পঁয়ত্রিশ হেঁটে সাগরতট। সকাল ৮টা নাগাদ লট-৮ ঘাটে ভিড় লক্ষাধিক ছুঁল। তা সামলাতে হিমশিম খেল পুলিশ। কেননা, কোনও বাধাই মানতে চাইছিলেন না পুণ্যার্থীরা। মূলত তাঁদের চাপেই কিছু ক্ষণ পরে একটি জেটি দিয়ে ভেসেল চালানো শুরু হয়।
কপিলমুনির আশ্রমে বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী।
কচুবেড়িয়াতেও একই ছবি। স্নান সেরে ফেরার ভেসেলের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে পুণ্যার্থীরা। পরে যাঁরা ফিরলেন, তাঁরাও বাস পেতে নাকাল হলেন। কেননা, অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডে জায়গা না পেয়ে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ’য়ে শ’য়ে বাস দাঁড়িয়ে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে, প্রায় ৮ কিলোমিটার জুড়ে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। যেমন, অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর থেকে আসা নাগরাজ বললেন, “আগেও গঙ্গাসাগর এসেছি। কিন্তু এ বারের মতো অব্যবস্থা দেখিনি। যাতায়াতের পথে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হল। প্রশাসন আরও একটু সক্রিয় হতে পারত।” এক ধাপ এগিয়ে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “গঙ্গাসাগরের ইতিহাসে এই সরকার বিশৃঙ্খলার নজির সৃষ্টি করল।”
তবে, শনিবার রাতের মধ্যে যাঁরা সাগরে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তাঁরা নির্বিঘ্নেই ‘পুণ্যস্নান’ সেরেছেন। পুজো দিয়েছেন কপিলমুনির আশ্রমে। সেই দলে রয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিজেপি নেত্রী উমা ভারতীও। পরে লট-৮ জেটিঘাটে অব্যবস্থার অভিযোগের জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “মেলার ঠিকঠাক প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছিল। প্রাকৃতিক কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সাফল্যের সঙ্গেই কাজ করেছে।” মেলা প্রাঙ্গণে জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “খেয়াল রাখতে হবে এ বার মেলায় ৮ লক্ষেরও বেশি লোক হয়েছে।” তবে, জেলা প্রশাসনের মতে, সংখ্যাটা অত বেশি নয়। এক কর্তার দাবি, মকর-সংক্রান্তিতে স্নানের জন্য চার লক্ষ পুণ্যার্থী এসেছেন। যা গত বারের দ্বিগুণ।
সবে মিলে... গঙ্গাসাগরে মকরসংক্রান্তির স্নান। রবিবার।
শনিবার সাগর থেকে ফেরার পথে দিল্লির পুণ্যার্থীদের নিয়ে আসা একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সতের পোল এলাকার নয়ানজুলিতে পড়ে যায়। ৬ জন জখম হন। রবিবার রত্নেশ্বরপুরের কাছে বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা মেরে একটি বাস পাশের খেতে নেমে যায়।

ছবি: সুদীপ আচার্য



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.