ছেলের স্মৃতিতে দম্পতির ৩০ লক্ষ রামকৃষ্ণ মিশনকে
কালে মারা গিয়েছে একমাত্র সন্তান। সেই ছেলের স্মৃতি রক্ষার্থে মুর্শিদাবাদের সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনকে ৩০ লক্ষ টাকা দান করলেন বিমলচন্দ্র ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী বুলবুলদেবী। ওই টাকায় তাঁদের দাতব্য চিকিৎসালয়টির আধুনিকীকরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মিশন কর্তৃপক্ষ।
বিমলবাবু রাজ্য উদ্যানপালন দফতরের অবসরপ্রাপ্ত অধিকর্তা। তাঁর ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার দেবাঞ্জন (ডাকনাম মুকুল) পুণেতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। সেখানে ভাড়াবাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকতেন।
২০১০-এর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কয়েক দিনের জন্য বুলবুলদেবী কলকাতায় এসেছিলেন। দেবাঞ্জন তখন পুণেতে একা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই বাড়িতেই তাঁর দেহ পাওয়া যায়। দেবাঞ্জন যে সংস্থায় চাকরি করতেন, তারাই পুলিশকে খবর দিয়েছিল।
বিমলবাবু বলেন, “কী করে ছেলে মারা যায়, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, হৃদরোগে ও মারা গিয়েছে। কিন্তু ভিসেরা-পরীক্ষার ফল এখনও পাইনি।” তবে বিমলবাবুর সংযোজন, “হজমের একটা সমস্যা ছিল মুকুলের। ওই রাতে খাওয়া-দাওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিল কি না, জানি না।” তিনি বলেন, “ছেলে যে সংস্থায় চাকরি করত, তারা এর পরে যে টাকা আমাদের দেয়, তার পুরোটা দান করে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
সারগাছি আশ্রমে বিমলচন্দ্র ঘোষ ও বুলবুলদেবী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
মিশন কর্তৃপক্ষকে হাসপাতাল গড়ার জন্য ওই টাকা দেওয়া ছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কেও তিন লক্ষ টাকা দিয়েছেন ওই দম্পতি। বিমলবাবু বলেন, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফাইবার অপটিক্স অ্যান্ড অপ্টো-ইলেকট্রনিক্স’ বিভাগে প্রতি বছর যিনি প্রথম স্থান অধিকার করবেন, তাঁকে দেবাঞ্জন ঘোষ স্মৃতি স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। তিন লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রয়েছে। তার বাৎসরিক সুদের টাকায় ২০১১ সাল থেকে ওই পদক দেওয়া চালু হয়েছে।”
কলকাতায় রুবি হাসপাতালের কাছে একটি আবাসনে থাকেন ঘোষ পরিবার। বিমলবাবু জানান, ২০০৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম টেক পাশ করেন দেবাঞ্জন। ২০০৮-এর অক্টোবরে কর্মসূত্রে পুণে চলে যান। বুলবুলদেবী বলেন, “ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এবং রাতে ছেলের সঙ্গে আমার কথা হয়। ফোন রেখে দেওয়ার সময়েও জানতাম না, ওর সঙ্গে সেই শেষ কথা।”
দম্পতির বক্তব্য, “মুকুলই তো চলে গেল! ওর মৃত্যুর পরে ওর অফিস থেকে যে টাকা পেয়েছিলাম, তা নিয়ে কী করব! চেয়েছিলাম, টাকাটা ভাল কাজে লাগুক।” সারগাছির এই আশ্রমের বর্তমান সম্পাদক বিশ্বময়ানন্দ মহারাজের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় ছিল আগে থেকেই। তাঁর কাছ থেকেই বিমলবাবুরা জানতে পারেন, অর্থের অভাবে সারগাছিতে মিশন পরিচালিত দাতব্য চিকিৎসালয়টির আধুনিকীকরণ করা যাচ্ছে না। তখনই সেখানে দান করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
মুর্শিদাবাদের সারগাছির এই রামকৃষ্ণ মিশন ১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৯১৩ সালে তৈরি হয় দাতব্য চিকিৎসালয়টি। বিশ্বময়ানন্দ মহারাজ বলেন, “বিমলবাবুদের দান করা অর্থে টেলি-মেডিসিন, এক্স-রে যন্ত্র কেনা হবে ও আধুনিক প্যাথোলজি কেন্দ্র গড়া হবে। অর্থের অভাবে এত দিন ইচ্ছা থাকলেও সে কাজ আমরা করতে পারিনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.