সম্পাদক সমীপেষু...
নেতাদের বলেছি, চোলাই নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেননি
আমরা যারা সাধারণ নাগরিক অনেক সময় অন্যায়, অনিয়ম বা অত্যাচার দেখলে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে পারি না। বা প্রতিবাদ করতে ভয় পাই, অনেক সময় লেখালেখির দ্বারা প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদ দাবি করি। গ্রাম্য জীবনে চোলাই মদ কী ভাবে একের পর এক সংসারকে ধ্বংস করছে, পরিবারের রোজগেরে পুরুষটি কী ভাবে ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে অকাল মৃত্যুর কোলে চলে যাচ্ছে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে একবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিলাম। গ্রামের কয়েক জন যুবক মিলে রাস্তা দিয়ে যাওয়া ড্রাম-ভর্তি সাইকেল বোঝাই করে চোলাই মদের বড় এজেন্টদের ধরে ড্রাম ফাঁসিয়ে দিই এবং আর কোনও দিন যেন গ্রামে না-দেখি তার ফরমান দিই। পরের দিন সকালেই আমার বাড়ির সামনে একদল মানুষ সমবেত হয়ে কাজের দাবি করে। কারণ, ওরা সব চোলাই মদের খুচরো বিক্রেতা। তাদের পাল্টা চাপ আর হুঙ্কারে ভুল হয়েছে বলে সে যাত্রা রেহাই পাই। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বদের কাছে যখন চোলাই মদ কারবারে কঠোর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করতাম তখনই তাঁরা বলতেন, গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু গ্রাম্য জীবনে দেখি, মদ বিক্রেতা ও ক্রেতা মিলিয়ে সংখ্যাটা কম নয়। তাদের হুঙ্কারের সামনে বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে? প্রত্যেকেরই তো মানসম্মান ও প্রাণের ভয় আছে। অন্য সময়ে যাঁরা গণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন, তাঁরা কেন এই কারবার বন্ধের জন্য আন্দোলনের কর্মসূচি না-নিয়ে বরং পরোক্ষে মোটা টাকা পার্টি ফান্ডে চাঁদা নিয়ে সমর্থন করেন?
আজ বিষক্রিয়া বেশি হওয়ায় বহু মানুষের একসঙ্গে মৃত্যুর মিছিল দেখে সরকার, প্রশাসন সকলেই নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু এই চোলাই মদের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া বিষয়ে কেউ কি ভেবেছেন কখনও? যারা চোলাই খায় তারা শুধু একা মরে না, পরিবারের আরও পাঁচ জনকে তিলে তিলে মারে। আমার শিক্ষকতার জীবনে এই বিষয়ে প্রতিদিন খোঁজখবর রাখি এবং দেখি বহু ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে কেবলমাত্র চোলাই মদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়। গ্রামে চোলাই মদের রমরমা আর সর্বশিক্ষা মিশন পাশাপাশি চলতে পারে না। একবার বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে এক অভিভাবক পিতা আকণ্ঠ পান করে টলতে টলতে একটি ক্লাস ঘরে ঢুকে পড়ে আর ঘটনাক্রমে দশম শ্রেণির সেই ক্লাসে তারই মেয়ে ক্লাস করছিল। মাতাল ব্যক্তিকে স্কুল থেকে তৎক্ষণাৎ বের করে দিই কিন্তু পরে ওই ছাত্রীটি লজ্জায়, ঘৃণায় স্কুলে আসতে চায়নি।
গরিব পরিবারগুলিকে এই ভাবে ধনেপ্রাণে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় যে ভাবে শেষ করা হচ্ছে, তা রোধ করার দায় কি প্রশাসনের নেই? সরকার ২ টাকা কেজি চাল দিয়েই কি তার দায়িত্ব শেষ করতে চাইছে? ২ টাকা কেজি চাল দেওয়ার সঙ্গে মদের গ্লাসটা কেড়ে নেওয়ার দায়িত্বও সরকারকেই নিতে হবে। যদি প্রশাসন তৎপর, কঠোর ও মানবিক হয় তা হলে গ্রামাঞ্চলে এক মাসের মধ্যেই অবৈধ চোলাই বিষের কারবার বন্ধ হতে বাধ্য। প্রশাসন কঠোর হলে গণ আন্দোলন না-হলেও গণ-নজরদারি গড়ে উঠতে পারে। তার আগে প্রশাসনকে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। এর জন্য তো টাকা লাগবে না শুধু প্রচেষ্টা, কাজ করার ধারা পরিবর্তন করতে হবে। অপরাধের উৎসমুখগুলি বন্ধ করতে পারলে সরকারকে কোষাগার শূন্য করে ক্ষতিপূরণের বোঝাও বহন করতে হবে না।
কলকাতা ‘রাজধানী’ থাকল না কেন?
নিরূপম সোম ‘শতবর্ষ পরে কী হতে পারত’ (৮-১২) শীর্ষক লেখায় বলেছেন, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের জন্যই রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে চলে যায়নি। বঙ্গভঙ্গ রদ হোক বা না-হোক, রাজধানী দিল্লিতে যেতই।
প্রকৃত প্রস্তাবে রাজধানী দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার পশ্চাতে বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটা বড় ভূমিকা ছিল। বঙ্গভঙ্গজনিত গণ বিক্ষোভের পর রাজধানীকে কলকাতায় রাখা সরকার সমীচীন বোধ করেনি। তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জের প্রেরিত বার্তায় বলা হয় ‘The peculiar political situation which has arisen in Bengal since the partition makes it eminently desirable to withdraw the Government of India from its present provincial environment.’ হার্ডিঞ্জেরই ওই বার্তায় আরও জানানো হয়, ‘events in Bengal are apt to react on the viceroy and the Government of India to whom the responsibility for them is often wrongly attributed. The connection is bad for the Government of India; bad for the Bengal Government and unfair to the other provinces, whose representatives view with great and increasing jealousy the prominence of Bengal.’
বাঙালি ভদ্রলোকদেরও দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তাদের প্রতিবাদী চরিত্রের জন্যই বাংলা থেকে রাজধানী সরিয়ে নেওয়া হল। বাঙালির জনক্ষেত্রে প্রদেশের অবনতিবোধের ধারণার এই হল সূত্রপাত। যা পরবর্তী কয়েক দশক ধরে চলছিল। ১৯১৭ সালে কলকাতা কংগ্রেসে ভূপেন্দ্রনাথ বসুও তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করলেন, রাজধানী সরিয়ে নেওয়ায় ইংরেজ সরকার বঙ্গপ্রদেশকে শাস্তিমূলক ভাবে ছোট পরিসরে আবদ্ধ রেখে বন্দি করেছে ‘cabinned; cribbed and confined.’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.