মনের ধাঁধা কাটিয়ে চলে গেলেন অ্যাডার
নের খবর কে রাখে?
অবশ্যই শরীর। না হলে, মনের ভাল-খারাপ সবেতেই কেন সাড়া দেয় শরীর? বহু দিন আগে এই প্রশ্নই তুলেছিলেন মনোবিদ রবার্ট অ্যাডার। শরীর-মনের বহু জটিল ধাঁধার সমাধান করে গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে মারা গেলেন রচেস্টার স্কুল অফ মেডিসিনের প্রাক্তন অধ্যাপক অ্যাডার। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
আগেকার দিনে মা-ঠাকুমারা বলতেন, ‘বেশি চিন্তা করিস না, অসুস্থ হয়ে পড়বি।’ অ্যাডারই প্রমাণ করেছিলেন যে, এই মন্তব্যের বৈজ্ঞানিক সত্যতাও রয়েছে। গতানুগতিক জৈব-রসায়নের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি বলেছিলেন, “শরীর আর মনের একটা অদৃশ্য যোগাযোগ রয়েছে।” মানসিক অবস্থা যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে, তা প্রথম বলেছিলেন তিনিই। তবে সে সময়ে ওঁর কথাকে নেহাতই গল্পকথা বলে উড়িয়ে দেন অনেকেই। পরে অবশ্য বিজ্ঞানীরা তাঁর যুক্তি মানতে বাধ্য হন। আর অ্যাডারের পথে হেঁটেই মনোবিজ্ঞানে আসে আমূল পরিবর্তন।
বললেই তো হল না। প্রমাণ চাই। এক দল ইঁদুরের দেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন অ্যাডার। পেটে ব্যথা হয়, এমন একটা রাসায়নিক মিষ্টি জলের সঙ্গে মিশিয়ে বিজ্ঞানীরা খেতে দেন ইঁদুরগুলোকে। প্রথম কয়েক দিন খেয়ে নিলেও, কিছু দিন পর থেকেই তারা আর ওই মিষ্টি জল খেতে চায় না। এর পরই শুরু হয় আসল পরীক্ষা। এ বার জোর করে ওই জল খাওয়ানো শুরু হয়। কিছু দিন পরেই মারা যায় ইঁদুরগুলো। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের জন্যই তাদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরে বোঝা যায়, ওই জোর করে মিষ্টি জল খাওয়ানোতেই যত বিপত্তি। এর ফলেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও ইঁদুরগুলোর মৃত্যু হয়। যদিও জলের মধ্যে এমন কোনও রাসায়নিক ছিল না যা থেকে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। শুধুমাত্র ইঁদুরগুলোর অপছন্দই তাদের মৃত্যুর কারণ। বিজ্ঞানের ভাষায় এরই নাম ‘প্লাসেবো এফেক্ট’।
তাঁর দেখানো এই নতুন ভাবনা অনুসরণ করেই বতর্মানে মনোবিদেরা ‘স্ট্রেস’ এবং শারীরিক প্রক্রিয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক তা বোঝার চেষ্টা করেছেন।
মনোবিদ রবার্ট অ্যাডার
মনোবিদ্যার মূল বক্তব্য অনুসারে প্রত্যেক ব্যক্তিরই পরিবর্তিত বা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কিছু সহজাত ক্ষমতা থাকে। কিন্তু যখন পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে পরে, তখন ব্যক্তি এক অদ্ভুত উত্তেজনা, চাপ এবং সময়বিশেষে অবসাদও অনুভব করে। এই অস্বস্তিকর অনুভূতিই মনোবিদ মহলে ‘স্ট্রেস’ নামে পরিচিত। ‘স্ট্রেস’ এর কারণগুলিকে সাধারণ ভাবে ‘স্ট্রেসর’ বলা হয়। মনোবিদ হ্যানস সিলির (১৯৩৬) মতে, যখন মানুষ কোনও স্ট্রেসরের সম্মুখীন হয়, প্রথমেই সে তার সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে চেষ্টা করে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে। এই ধাপটিতে মূলত উত্তেজনা হঠাৎ করে বেড়ে যায় (অ্যালার্ম স্টেজ)। কিন্তু এতে যদি সে সফল না হয় তখনও তার প্রাথমিক উত্তেজনা বজায় থাকে। এই দ্বিতীয় ধাপটি ‘স্টেজ অফ রেজিস্ট্যান্স’ নামে পরিচিত। যদি এর পরেও ব্যক্তিকে এই লড়াই চালিয়ে যেতে হয়, তখন তৃতীয় ধাপটি আরম্ভ হয়। এই অবস্থায় ব্যক্তির সমস্ত ক্ষমতা-শারীরিক এবং মানসিক, তলানিতে এসে ঠেকে (‘স্টেজ অফ এক্সশন’)।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই সমস্ত অভিজ্ঞতার ফলে ব্যক্তি মানসিক দিক দিয়ে অনেক সময় ভেঙে পরে, তার আত্মবিশ্বাস কমে যায়, খুব সহজে উত্তেজিত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। উত্তেজনার ফলে শরীরে ‘কর্টিসোল’ নামে এক ধরনের রাসায়নিক নিষ্কৃত হয়। এটি যদি বেশি ক্ষরিত হয়, তা হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে মৃত্যু হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ‘স্ট্রেস’ হৃদ্রোগ, ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, আ্যলার্জি, এই সমস্ত কিছুর আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে ‘স্ট্রেসে’র ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
‘স্ট্রেস’ বর্তমান জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এর ক্ষতিকর প্রভাবকে কী ভাবে কমানো যায়, তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মনোবিদেরা। রবার্ট অ্যাডারের দেখানো পথ ধরেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.