জখম ৪, ধৃত ৭
জুটমিলে শ্রমিক জোগানোর বরাত ঘিরেই রণক্ষেত্র খড়দহ
জুটমিলে শ্রমিক সরবরাহের বরাত কে পাবে, সেই নিয়ে বিবাদ। আর তার জেরে দুষ্কৃতীদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজি, গুলি চালাচালিতে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল খড়দহ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি বেশ কয়েকবার খড়দহ জুটমিলের কাছে একই কারণে বোমাবাজি হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ: বিবদমান দু’টি গোষ্ঠী গত লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত সিপিএমের মদত পেয়ে এলেও এখন তারা তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায়।
পুলিশ জানায়, রবিবার রাত দশটা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে খড়দহের বাবুঘাট দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। দু’তরফই প্রচুর বোমাবাজি করে, তাতে জখম হয় এক পক্ষের তিন জন। বদলা নিতে সোমবার সকালে বিরোধী গোষ্ঠী বাবুঘাটের এক মাঝিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। কোমরে গুলি লেগে তিনি আরজিকরে চিকিৎসাধীন। থমথমে এলাকায় প্রচুর পুলিশ ও র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছে। ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) অনিল কুমার এ দিন
ঘটনাস্থলে যান। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এ দিন রাত পর্যন্ত দু’পক্ষের সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছে মিলেছে দু’টো দেশি রিভলভার। স্থানীয় একটি স্কুলের ভিতর থেকে বোমা তৈরির প্রচুর কৌটো ও মশলা উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্কুলটিতে এখন বড়দিনের ছুটি চলছে।
বিবাদের সূত্রপাত কী ভাবে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর: বন্ধ খড়দহ জুটমিল পুনরুজ্জীবনে কেন্দ্র ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। মিল চালু হলে প্রায় চার হাজার শ্রমিক ফের কাজ পাবেন। আগে ওখানে শ্রমিক জোগানের বরাত ছিল রাজু খান ও সন্তোষ নায়েকের হাতে, যাদের নামে পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ। এখন মণীশ শুক্ল নামে আর এক জন ওই বরাত পেতে উঠে-পড়ে লেগেছে। অন্য দিকে রাজুরা চাইছে, মণীশ যেন কোনও ভাবেই বরাত না-পায়। পুলিশের তথ্য, মিল-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি সাড়ে তিনশো টাকা। কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে ঠিকেদারেরা জনপিছু দৈনিক ১০০ টাকা ‘কমিশন’ বাবদ আদায় করতে পারবে।
আর এই ‘কমিশন’ ঘিরেই যত গন্ডগোল। উপরন্তু টিটাগড়ে সিইএসসি-বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই নিয়ে যে ফলাও ব্যবসা, তাতে দখলদারির টক্করও রয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে। পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে মণীশের দলবল বাবুঘাটে গিয়েছিল সন্তোষকে নিকেশ করতে। কিন্তু আগাম খবর পেয়ে যাওয়ায় সন্তোষই আগে তাদের উপরে চড়াও হয়। মণীশের ছেলেরা বোমা ছুড়তে ছুড়তে পালায়। তবে সন্তোষের দলের হামলায় ভ্রমর দাস, জয়প্রকাশ চৌধুরী এবং রমেশ রাজভড় ওরফে নন্দলাল নামে তিন জন জখম হয়। তারাও আরজিকরে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, ওই তিন জনের বিরুদ্ধে এলাকায় গুন্ডামির অভিযোগ রয়েছে।
রবিবারের ঘটনার রেশ না-কাটতেই এ দিন সকালে পাল্টা হামলা চালায় মণীশেরা। প্রকাশ চৌধুরী নামে বাবুঘাটের এক মাঝিকে তার বাড়ির সামনেই গুলি করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, রবিবার সন্তোষের দলবল প্রকাশের নৌকোতেই গঙ্গা পার হয়ে পালিয়েছে বলে মণীশেরা সন্দেহ করেছিল।
বিবদমান দু’পক্ষই তৃণমূলের আশ্রিত বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে সম্পর্কে দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য কী?
দলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “দু’দলই সমাজবিরোধী। পুলিশকে বলেছি অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে।” শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল নেতা তথা ভাটপাড়ার বিধায়ক ও পুর চেয়ারম্যান অর্জুন সিংহ অবশ্য বলেন, “মণীশ আদৌ জড়িত নয়।
টিটাগড়-খড়দহে সমাজবিরোধী দৌরাত্ম্য যে ভাবে বাড়ছে, তাতে প্রশাসন ও দলকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।” অন্য দিকে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিতাভ বসুর মন্তব্য, “এই ঘটনা তৃণমূলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পরিণতি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.