অসিযুদ্ধ
জাহির, পন্টিংকে ছাপিয়ে শিরোনামে ডিআরএস
ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ল প্রথম দুপুরেই! তথাকথিত সম্প্রীতির সিরিজের উদ্বোধন হল অশান্তি দিয়ে। যার প্রকোপটা আগেই আন্দাজ করা যাচ্ছিল। তিন অক্ষরের সেই বিভাজনধর্মী শব্দবন্ধ। ডি আর এস। পুরো কথা ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম।
মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম দিনের শিরোনাম কে হতে পারেন চা বিরতির পরেও আন্দাজ করা যাচ্ছিল না। পন্টিং? উমেশ? নাকি জাহির? চূড়ান্ত বিচারে হয়ে গেল ডিআরএস। দুই অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান তাঁদের কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। একজন মাঠে দৃশ্যত করলেন। মাইকেল হাসি। আর একজন টেস্টে নবাগত এড কাওয়ান। ঐতিহাসিক ভাবে দেখা গিয়েছে শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটাররা ম্যাচ রেফারির দ্বারা অনেক কম দণ্ডিত। বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশের ম্যাচ রেফারিরা এঁদের বিরুদ্ধে কড়া সিদ্ধান্ত নিতেই চান না। এখানে ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মদুগলে কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা কৌতূহলের বিষয়।
তবে দুই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার পরিষ্কার আইন ভেঙেছেন। মাইকেল হাসি প্রথম বলে আউট হয়ে যে গালাগাল দিতে দিতে মাঠ ছেড়েছেন যে কোনও টিভি রিপ্লে দেখাবে। আর একজন এড কাওয়ান তাঁর কট বিহাইন্ড নিয়ে প্রখর দেশপ্রেমী অস্ট্রেলীয় শিবির ছাড়া কারও সমস্যা থাকার কথা নয়। অথচ তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সটান বললেন, “সবাই দেখেছেন কী হয়েছে। রিপ্লে দেখেছেন। আমার প্রতিক্রিয়া দেখেছেন। আমার নতুন করে আর কী বলার থাকতে পারে?” এই পর্যন্ত তা-ও ঠিক ছিল। এর পর কাওয়ান বলতে শুরু করলেন, “এই সব আউটে খেলার গতিবেগটাই অন্য দিকে ঘুরে যায়। দেখলেন তো। আমি তো একজন ক্রিকেটের ক্রেতা হিসেবে চাইব হট স্পটের সাহায্য নেওয়া হোক। ডিআরএসের সাহায্য নেওয়া হোক। কেন আইসিসি গোটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্বে একই নিয়মের সাহায্যে খেলা পরিচালনা করবে না? কেন ভিন্ন ভিন্ন সিরিজে এক এক রকম নিয়ম থাকবে?”
প্রথম বলে আউট। মেজাজ হারিয়ে মাঠ ছাড়ছেন মাইক হাসি। সোমবার মেলবোর্নে। ছবি: গেটি ইমেজেস
কাওয়ান এমনিতে সুবক্তা। লেখালেখি করেন। টেস্ট খেলার আগেই ক্রিকেটের ওপর বই লিখে ফেলেছেন। সাধারণ সময় নিজের কলামে কথাগুলো লিখলে হয়তো মনে করা হত যুক্তিসঙ্গত কথাই বলছেন। কিন্তু সিরিজ চলাকালীন এই ভাবে কথা বলা মানে প্লেয়িং কন্ডিশন এবং আম্পায়ারের ওপর প্রকাশ্য অনাস্থা। সিরিজের আচরণবিধি ভঙ্গ। ধোনি এর পঞ্চাশ শতাংশ কথা বলে বিশ্বকাপের সময় রূঢ় ভাবে সতর্কিত হয়েছেন। কাওয়ান তিনি তো আজকের ছেলে। এখনই এত সাহস কোথা থেকে পেলেন?
নাকি গোটা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহল ডিআরএস নিয়ে ভারতের ভূমিকার বিরোধী বলে সেই কোরাসে গলা মেলালেন? চ্যানেল নাইন যেমন সিরিজের প্রথম দিন থেকেই ভারতের ডিআরএস না মানা নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার। মার্ক টেলর আর টনি গ্রেগ ধারাভাষ্যে এ দিন বারবার বললেন, আজকের দু’টো বিতর্কিত আউটই টিভি আম্পায়ারের ‘রেফার’ করার পদ্ধতি থাকলে হত না। চ্যানেল নাইন আরও খাপ্পা। যেহেতু তারা ভারতকে বারবার বলেছিল, ডিআরএসের জন্য আমাদের প্রযুক্তি এখন প্রায় নিখুঁত। অতীতে যা ছিল তার চেয়ে অনেক উন্নত। কিন্তু বিসিসিআই মেনে নেয়নি।
ভারতীয় দলের প্রভাবেই ভারতীয় বোর্ডের এই অবস্থান। সেখানে ডিআরএস বিরোধী মুখ্যত দু’জন। সচিন আর ধোনি। এঁদের কথা হল আমরা তখনই এটা মানব যখন সিস্টেমটা একশো ভাগ ত্রুটিহীন হবে। অস্ট্রেলিয়া যেমন হয়তো সিস্টেমটা ত্রুটিহীন করতে পারবে, তেমনই বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার মতো অনেক দেশ রয়েছে যারা পারফেকশন আনতে পারবে কি না ঘোর সংশয়। তা ছাড়া যেহেতু সর্বাংশে এটা যন্ত্রচালিত নয়, মনুষ্যেরও গুরুত্বপূর্ণ হাত থাকে। সেখানে কী ভরসা যে সব কিছু স্বচ্ছ ও সুচারু উপায়ে চলবে? বরঞ্চ শ্রীলঙ্কায় এক বার রান আউটের রিপ্লে দেখানোর সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে স্যাম্পেল বদলে দেওয়া হয়েছিল। যে আউট হয়েছিল সে এর ফলে বেঁচে যায়। কারণ টিভি আম্পায়ারকে ভুল রিপ্লে দেখানো হয়।
বিতর্কিত সেই মুহূর্ত: আউট হচ্ছেন কাওয়ান। ছবি: এএফপি।
দু’বার ডিআরএস পদ্ধতিতে খেলে ধোনির ভারতের খুব তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে। বিশ্বকাপ ম্যাচে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের ইয়ান বেল-কে সতেরো রানে তারা এলবিডব্লিউ করেও ন্যায্য আউট পায়নি। বেল ৬৯ করে দেন। ইংল্যান্ডও নির্ঘাৎ হারা ম্যাচ টাই করে দেয়। বেল এলবিডব্লিউ ছিলেন নিজেও জানতেন। ক্রিজ ছেড়ে তাই বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। ডিআরএস পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা তাঁকে ফেরত আনে। ডিআরএসের প্রযুক্তি অনুযায়ী স্টাম্প থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত দূরত্বের বলকে সে ট্র্যাক করতে পারে। কিন্তু এর বাইরে কারও প্যাডে লাগলে যদি সেই ডেলিভারি মিডল স্টাম্প বরাবর সোজা না হয়, ডিআরএস হদিস পায় না। বেলের ক্ষেত্রেও তাই নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেনি।
ভারতীয়দের মনোভাব তাই অপরিবর্তিত, যে আগে প্রযুক্তি নিজেরা ঠিক করো। তার পর মানার প্রশ্ন। আর বাকি পৃথিবী উল্টো মনে করে যে এর ফলে যদি নিখুঁত না হয়েও আম্পায়ারের ভুলের পার্সেন্টেজ কমানো যায়, সেই উপকারটাই বা প্রযুক্তি থেকে নেব না কেন?
সোমবারের ঘটনার পর অবশ্য ভারতীয় বোর্ডের বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে অন্য সব দেশের লড়াই আরও উচ্চকিত হবে। লর্ডস আগেই ছিল। এ বার মেলবোর্ন!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.