অভাবের ঘরে রক্তাক্ত দেহ দম্পতি, ছেলেমেয়ের
নটন ছিল সংসারে। আর ছিল গৃহকর্তার মানসিক রোগ।
সোমবার সেই যুবক গৃহস্বামী, তাঁর স্ত্রী এবং দুই কিশোর ছেলেমেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেল কাঁকুড়গাছির একটি সরকারি আবাসনে তাঁদের ভাড়ার ফ্ল্যাটেই। একসঙ্গে গোটা পরিবারের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে পুলিশ। তাদের অনুমান, স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক। ঘরে পাওয়া গিয়েছে রক্তমাখা শাবল।
পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন প্রবীণ দাস (৩৮), তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা দাস (৩২), ছেলে প্রশান্ত দাস (১৪) এবং মেয়ে দীপশিখা দাস (১২)। মহিলা এবং তাঁর দুই সন্তানের দেহ ঘরে পড়ে ছিল রক্তাক্ত অবস্থায়। ক্ষতচিহ্ন ছিল তাঁদের মাথায়, শরীরের অন্য জায়গাতেও। আর গৃহকর্তাকে উদ্ধার করা হয় ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায়। কলকাতা পুলিশের ইস্ট সুবারবন ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “প্রবীণ স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে খুন করে আত্মহত্যা করেছেন কি না, এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছেন।”
আবাসনের ঘরে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। সোমবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
প্রবীণের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পড়শিরা জটলা করছেন। ফরেন্সিক দল ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহে ব্যস্ত। এসেছেন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন। ঘরের ভিতরে জায়গায় জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ পুলিশ ময়না-তদন্তের জন্য চারটি দেহই নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রবীণের ঘরের সামনে এক চিলতে জায়গা। সেখানে মোটরসাইকেল রাখার একটি স্ট্যান্ড খুলেছিলেন তিনি। ওখানেই জিনিসপত্র রাখেন এক সব্জি বিক্রেতা। ভাড়া বাবদ মাসে ১০০ টাকা নিতেন প্রবীণ। ওই সব্জি বিক্রেতা জানান, এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ তিনি প্রবীণকে ডাকেন। সাড়া মেলেনি। সব্জি বিক্রি করে ফিরে বেলা সাড়ে ৩টেয় তিনি ফের প্রবীণকে ডাকেন। তখনও কোনও সাড়া মেলেনি। দরজা ঠেলে তিনি দেখেন, ভিতর থেকে বন্ধ। তার পরেই স্থানীয় লোকজনকে ডাকেন ওই সব্জি বিক্রেতা। খবর দেওয়া হয় মানিকতলা থানাতেও।
দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, প্রবীণকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যার দেহ সোফায় পড়ে ছিল। প্রশান্তের দেহ ছিল মেঝেতে, রান্নাঘরের সামনে। আর দীপশিখার দেহ পড়ে ছিল খাটের কাছে। ফরেন্সিক বিভাগের কর্মীরা জানান, ওই মহিলা আর তাঁর ছেলেমেয়ের মাথায় এবং দেহের অন্যান্য অংশে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গিয়েছে রক্তমাখা চুল। ঘরে এবং রান্নাঘরে কয়েকটি পাত্রে ভাত ও তরকারি রাখা ছিল। ঘরে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, মৃতদের মধ্যে দু’জনের মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরিয়ে এসেছিল। ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করার আগে খাবারে বিষাক্ত কিছু মেশানো হয়েছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। তবে ঘরে কোনও বিষের কৌটো মেলেনি।
দুই সন্তান-সহ দম্পতির অপমৃত্যুর পর আবাসিকদের জটলা।
সোমবার কাঁকুড়গাছির আবাসনে। ছবি: সুদীপ আচার্য।
স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, প্রবীণ প্রাইভেট গাড়ির চালক ছিলেন। তাঁর সংসারে অর্থাভাব ছিল। কয়েক মাস আগে চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল প্রবীণকে। মাস তিনেক সেখানে ভর্তি ছিলেন তিনি। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ১৫-১৬ বছর আগে কাঁকুড়গাছিতে দমকলের কার্যালয়ের পিছনে ১৭ নম্বর বাগমারি লেনের ওই আবাসন (বিআরএস-১০)-এ ছ’নম্বর বিল্ডিংয়ের একতলায় আট নম্বর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন প্রবীণ। স্থানীয় বিধায়ক পরেশ পালের উদ্যোগে প্রতি বছর যে-গণবিবাহ হয়, সেই রকম একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় সন্ধ্যাদেবীর। প্রবীণ তখন গাড়ি চালাতেন। বছরখানেক আগে অসুস্থতার জন্য তাঁর কাজ চলে যায়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে প্রবীণ এক ব্যক্তির গাড়ি চালাতে শুরু করেন। সন্ধ্যা কয়েকটি বাড়িতে রান্না করতেন। কয়েক দিন আগেই তাঁদের ছেলে প্রশান্ত নবম এবং মেয়ে দীপশিখা পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছিল।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.