‘পান-দোষে’ কমছে হাওড়া সেতুর আয়ু
পান, গুটখা চিবিয়ে স্তম্ভের গায়ে যত্রতত্র থুতু ফেলায় জং ধরে ক্ষয়ে যাচ্ছে হাওড়া সেতু। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন এমনই যে, একটু একটু করে ক্ষয়ে হাওড়া সেতু ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ওই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করে যারা, সেই কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন এই কথা।
প্রতি দিন হাজার হাজার বাস ও গাড়ি যাতায়াত করে ওই সেতু দিয়ে। শুধু গাড়ি নয়, হাওড়া সেতুর দুই ফুটপাথ ধরে রোজ গঙ্গা পারাপার করেন কয়েক লক্ষ মানুষ। তাঁরা অনেকেই পান, গুটখার মতো নেশার নানা জিনিস খান। থুতুও ফেলেন সেতুর রেলিংয়ে। আর তাতেই ঘটছে বিপত্তি। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মদনলাল মিনা বলেন, “পান ও গুটখার থুতু স্তম্ভের গায়ে লেগে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে সেতুর রেলিং ও হ্যাঙারে জং ধরে যাচ্ছে। তার থেকেই একটু একটু করে ক্ষয় হচ্ছে সেতুর। এ রকম ঘটনা ২০০৭ সালেও ঘটেছিল। স্তম্ভের ‘হ্যাঙার হুড’ ক্ষয়ে যাওয়ায় আমরা তখন সব হ্যাঙার হুড পাল্টে ফেলি। কিন্তু ফের জং ধরছে। এ বার ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি।”
পোর্ট ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া সেতুতে মোট হ্যাঙারের সংখ্যা ৭৮। সেগুলি ‘মাইল্ড স্টিল’ দিয়ে তৈরি। গুটখা বা জর্দা-পান চিবোনোর পরে থুতু ফেললে তার সঙ্গে মিশে থাকে অ্যাসিড। ওই অ্যাসিডের সঙ্গে ইস্পাতের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলেই সেতুর ধাতু একটু একটু করে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।
‘চিত্রিত’ হাওড়া সেতু। ছবি: রণজিৎ নন্দী
২০০৭ সালে সমস্ত হ্যাঙার পাল্টে ফেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। পোর্ট ট্রাস্টের কর্তারা বলেন, হাওড়া সেতু কলকাতার গর্ব। দেশেরও গর্ব। এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ পোর্ট ট্রাস্টের হাতে থাকলেও সাধারণ মানুষেরও কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। পর্যটকেরা এই সেতু দেখতে আসেন। যাঁরা এই সেতু দিয়ে রোজ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন, তাঁদেরও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে যত্নশীল থাকতে হবে। সেতুর রেলিংয়ে কেউ থুতু ফেললে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করা নাগরিকদেরও কর্তব্য। সেতুর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারও চালিয়েছে। কিন্তু ২০০৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় শহরের অনেক মানুষই যে হাওড়া সেতু নিয়ে সচেতন নন, সেটাই ফের প্রমাণিত। পোর্ট ট্রাস্ট সূত্রে খবর, ওই সেতু দিয়ে রোজ গড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন। কে কোথায় থুতু ফেলছেন, পুলিশের পক্ষে তা দেখা কার্যত অসম্ভব।
তবে, এ বছর হ্যাঙার না পাল্টে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বলেন, “দেখা গিয়েছে, হ্যাঙারের নীচের অংশই গুটখার থুতু পড়ে বেশি নষ্ট হচ্ছে। তাই হ্যাঙারের নীচের অংশটুকু ফাইবার গ্লাস দিয়ে মুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সহজে যাতে চুরি করা না যায়, এমন ভাবেই ফাইবার গ্লাস ওই হ্যাঙারগুলিতে লাগানো হবে। ওই ফাইবার গ্লাস পরিষ্কারও করা যাবে জল দিয়ে। এই কাজে খরচ হবে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা।” পোর্ট ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। ওই ফাইবার গ্লাসে প্রয়োজনে হাওড়া সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সচেতনতার বিজ্ঞাপনও দেওয়া হতে পারে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.