মনোরঞ্জন...
টলি পরিবার
য়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব। ১০ ডিসেম্বর।
যে রাতে দেখা হল এক বিরাট যৌথ পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের। এমনিতে যে পরিবারকে আমরা টলিউড বলে ডাকি।
কী রকম সেই ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন?
পরিবারের ছোট ছেলে ইন্ডাস্ট্রির হার্টথ্রব দেব বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখেই এগিয়ে গেলেন পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে। পরিবারের অভিভাবক, ইন্ডাস্ট্রির ‘বুম্বাদা’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বড় দাদাসুলভ স্নেহে পুরস্কারে জেতা ব্ল্যাকবেরি তুলে দিলেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মহেন্দ্র সোনির হাতে। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, যিনি আগের বারের ক্যুইজের প্রতিযোগী, এ বার মঞ্চে না থাকলেও প্রতিযোগীদের স্টেজের সিঁড়ি অবধি এগিয়ে দিলেন অসামান্য সৌজন্যে। পরিবারের ফচকে ছেলে আবির চট্টোপাধ্যায় দর্শকাসনে বসে পিছনে লেগে গেলেন মঞ্চে বসা সমবয়সী প্রতিযোগীদের। তাঁকে সঙ্গ দিতে এগিয়ে এলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রতরা। আর মঞ্চের ওপর থেকে তাঁদের উদ্দেশে দাঁত কিড়মিড় করলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। প্রশ্রয়ের হাসি ছড়ালেন প্রসেনজিৎ। “আমার buzzer কাজ করছে না, আমি খেলব না” বলে বায়না জুড়লেন ইন্দ্রাণী হালদার। নিজের ভুল উত্তরে নিজেই হেসে লুটোপাটি খেলেন কোয়েল।
জিৎ আর শ্রাবন্তী সমানে খুনসুটি করে গেলেন নিজেদের মধ্যে। আবার সকলকে অবাক করে ‘সপ্তপদী’র ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’-এর বাইকটা যে বিএমডব্লিউ-র তৈরি সে উত্তরটাও জিৎ দিয়ে দিলেন অনায়াসে।
টালিগঞ্জে শুধুই প্রতিযোগিতা? শুধুই এই রোলটা ও কেন পেল, ওর সঙ্গে ওই প্রযোজকের কেন বন্ধুত্ব তার খড়খড়ে হিসেব? ভুল।
সে রাতে আরসিজি-তে থাকলে বুঝতেন এই ইন্ডাস্ট্রি, যার গ্রাফ নাকি এখন ঊর্ধ্বগামী, সেখানে পারস্পরিক সম্মান ও সখ্যের কী অনাবিল স্রোত। সেখানে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। তাই বলে মানবিক সদর্থক গুণগুলোর অভাব নেই ছিঁটোফোঁটাও।
এত বড় পরিবারের এত নামী সদস্যদের একসঙ্গে করাটা কিন্তু সহজ ছিল না। ও যদি থাকে আমি নেই এ জাতীয় ইগো নয়। মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এত বড় স্টারদের ডেট পাওয়াটা। ১২ জন প্রতিযোগী এতটাই ব্যস্ত যে তাঁদের পেতে হলে নিদেন পক্ষে তিন মাস আগে বুক করতে হয়। কিন্তু শুধুমাত্র পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্কের সৌজন্যে অন্য সব কাজ ফেলে, সিডিউল পাল্টে প্রসেনজিৎ, জিৎ এবং দেব ইন্ডাস্ট্রির ত্রিমূর্তি রাজি হয়ে গেলেন। এ যেন একই মঞ্চে শাহরুখ, আমির আর সলমন। এর আগে কোনও অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান, কোনও চ্যারিটি শো যা পারেনি।
ছবি দেখতে ক্লিক করুন...
সুপারহিরোদের একসঙ্গে হাজির করা যদি বিরাট চ্যালেঞ্জ হয় তা হলে পাঁচ জন নায়িকাকে রাজি করানোও কম কঠিন ছিল না। ঋতুপর্ণা, কোয়েল, শ্রাবন্তী, স্বস্তিকা, ইন্দ্রাণী। ইন্দ্রাণীকে আবার উড়ে আসতে হয়েছিল মুম্বই থেকে। অন্যরাও বাতিল করলেন স্টেজ শো, নাটকের রিহার্সাল, শু্যটিং, ডাবিং। হাসিমুখে। কারণ: পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর আকর্ষণ!
এত দূর তো ভালই এগোলো। কিন্তু স্টার বলে কথা! স্টেজে উঠে, খেলা এগোলে যদি ঝামেলা বাধে?
এখানেও অভিনবত্ব। ম্যাচ রেফারি রাখা হল ইন্ডাস্ট্রিতে যাকে নাকি সব চেয়ে প্রভাবশালী মানুষ বলা হয় ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের সেই শ্রীকান্ত মোহতাকে। ঝামেলা হল নাকি স্টেজে? ক্যুইজ চলাকালীন? হল তো। ঠিক যে রকম বড় পরিবারে হয়। মতবিরোধ। মনোমালিন্য। তার পর সব শান্ত। ঠিক যে ভাবে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া মেটে। বাড়ির বৌরা ফের দলবেঁধে আড্ডা মারে। বাড়ির কর্তা হয়ে বকে দিলেন শ্রীকান্ত। মিষ্টি হেসে প্রবোধ দিলেন উত্তেজিত প্রতিযোগীদের। ব্যাস! ঝামেলা শেষ। ওই যে বললাম ক্যুইজটা বাহানা ছিল।
আর স্টেজের সামনে যাঁরা?
এক একটা টেবিলে গোল করে বসেছেন তনুশ্রী, পার্নো, সোহিনীরা। স্টেজের ওপরে একে তাকে লক্ষ করে পরম-আবিরের মন্তব্যের বৃষ্টি। সঙ্গে প্রচ্ছন্ন হুমকিও “এটা বলে দিলাম। তোর গিফটটা আমার কিন্তু।”
আবহ এতটাই পারিবারিক যে প্রাজ্ঞতার হিসেব মুছে ঠিক উত্তর নিয়ে তরজায় পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী আর আবির। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ভুরু কুঁচকে বললেন, “এই উত্তরটাও পারছে না?” স্টেজের ওপরের প্রতিযোগীরা না পারলে নীচে চলছে ঠিক উত্তর বলে কো-স্পনসর আরিশ-এর গিফট হ্যাম্পার পাওয়ার কাড়াকাড়ি। যাতে ব্যস্ত মিঠু চক্রবর্তী, শর্মিলা সিংহ ফ্লোরা, সৌমিলি বিশ্বাস, সাহেব চক্রবর্তীরা। দর্শকাসনে রানা সরকার, অগ্নিমিত্রা পল, চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা, টেলিভিশন অ্যাঙ্কর রেশমি বাগচি, অভিষেক দত্ত আর রায়া ভট্টাচার্যের মুখে সেই দেখে স্মিত হাসি। হাসি প্রযোজক নীতেশ শর্মা, শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশিক মুখোপাধ্যায়, সুজয় কুট্টির ঠোঁটেও।
বৈঠকি এই আড্ডায় হাই প্রোফাইল অতিথিও ছিলেন। ক্যুইজ তো প্রায় থেমে যাওয়ার জোগাড় যখন ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ঢুকলেন। বাড়ির অনুষ্ঠানে হ্যান্ডসাম কোনও পুরুষ এলে মেয়েদের মধ্যে যেমন গুঞ্জন ওঠে এখানেও তাই হল। দাদাকে ক্যুইজ মাস্টার-এর ভূমিকা পালনের অনুরোধ করলেন সঞ্চালক মীর। সৌরভ রাজি। চার দিকে তখন চাপা দীর্ঘশ্বাস!
অন্য হাই-প্রোফাইল অতিথি বনি কপূর সোজা এলেন দুবাই থেকে। শুধুমাত্র এই অনুষ্ঠানের জন্য। তাঁকে দেখে বাড়ির ছেলেদের জিজ্ঞাস্য “বৌকে নিয়ে এল না কেন রে?”
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ওপর রাউন্ডের শেষে প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা হাসতে হাসতে বললেন, “পরের বার এ রকম রাউন্ড থাকলে যার ওপর প্রশ্ন তাকেও উত্তর দিতে দিয়ো।”
এত আনন্দের মধ্যেও দাঁতে দাঁত চেপে একটা প্রতিজ্ঞা নিল টালিগঞ্জ। ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে আমরির ভয়াবহ আগুনে চলে যাওয়া মানুষগুলোর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। ঋতুপর্ণা, যিনি বন্ধুকে হারিয়েছেন আমরির দুর্ঘটনায়, বিধ্বস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তাব আনলেন। তাঁর প্রস্তাবকে সমর্থন জানালেন প্রসেনজিৎ। সামনে বসে থাকা আনন্দবাজার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক অভীক সরকারের দিকে তাকিয়ে বললেন, “অভীকবাবুর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি আমরির ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে।” তৈরি হল এক ম্যাজিক মুহূর্ত। যেখানে সৌহার্দই শেষ কথা। এটা হল অনুষ্ঠানের শুরুতেই। সুরটা স্বভাবতই আর নিছক ক্যুইজের আবর্তে আটকে রইল না। তার কিছু আগেই সবাই হাতে পরেছেন কালো ব্যান্ড আমরির দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
আর দেড় ঘণ্টা পরে এল সেই মুহূর্ত। বড় মার্জিনে এগিয়ে থাকা প্রসেনজিৎ-সৃজিতের জোরালো টিম-এর নাকের ডগা থেকে শেষ রাউন্ডে জয় ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন ঋতুপর্ণা-স্বস্তিকা। প্রসেনজিৎ-সৃজিত জিতবেনই-এই ভাবনাটা এতটাই জোরালো ছিল যে শেষ রাউন্ডের সঞ্চালক গৌতম ভট্টাচার্য আর ম্যাচ রেফারি দু’জনেই বললেন, “এই রাউন্ডে প্রসেনজিৎ খেলতে আসুন।” কিন্তু জিততে এতই মরিয়া তখন এই দল যে সেই সৃজিতকেই পাঠালেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু শেষ রক্ষা হল কই? সৃজিত একটা প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলেন আর ঋতুপর্ণা পরপর ঠিক উত্তর দিয়ে গেলেন বাঘা বাঘা সব প্রশ্নের: কোন বাংলা ছবিতে একটি ফুটবল ক্লাব ন্যান্টেশ্বর শিল্ড জেতে?
সত্যজিৎ রায়ের কোন ছবিতে রবি ঘোষের চরিত্রের নাম ছিল নটবর মিত্র?
তপন সিংহের ‘বৈদূর্যরহস্য’তে সুচিত্রা সেনের এক আত্মীয় অভিনয় করেন। মেয়ে না নাতনি?
ফাইনাল রেজাল্ট: জয়ী ঋতুপর্ণা-স্বস্তিকা। রানার্স: প্রসেনজিৎ-সৃজিত।
ঋতুপর্ণা-স্বস্তিকা এবং অন্য প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। টাইটেল স্পনসর অম্বুজা রিয়্যালিটির তরফে মঞ্চে ছিলেন হর্ষ নেওটিয়া। ডেটাবাজারের হয়ে পরিচালক সুমন ঘোষ। আর বনি কপূর। পুরস্কার ছিল ব্ল্যাকবেরি টর্চ, ট্যাবলেট পি সি, আর আরিশের গিফট হ্যাম্পার। আর এক স্পনসর রোলেক্স-এর তরফে বিদেশি ব্র্যান্ডের সানগ্লাস। অনুষ্ঠান সফল করতে হাত বাড়িয়েছিলেন ব্লু চিপ প্রোজেক্টস, এএমএস কংক্রিট, সিগ্রামস, অ্যাড টাচ। টেলিভিশন পার্টনার ছিল সঙ্গীত বাংলা।
ছিল ফেয়ার প্লে-র পুরস্কারও। সব চেয়ে কম স্লেজিং করার জন্য সেটা জিতলেন ইন্দ্রাণী হালদার-অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর জুটি। তাঁদের দু’টি আই-প্যাড টু উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেস নিবাসী ডা. কালীপ্রতপ চৌধুরী।
এ বার পেটপুজোর পালা। ফুড স্পনসর ওহ! ক্যালকাটার আতিথেয়তায় চিংড়ি থেকে মটন কী ছিল না সেখানে! এখানেও বড়দের জোর করে খেতে পাঠালেন ছোটরা। মেয়েরা একে অপরের পোশাক নিয়ে গল্প করলেন। অর্পিতা এগিয়ে এসে ঋতুপর্ণাকে অভিনন্দন জানালেন।
পরমব্রত অনুযোগ করলেন, “আগের বারের প্রশ্ন কিন্তু বেশি কঠিন ছিল।” সৃজিতকে ঘিরে খুনসুটির বহর দেখে হো হো করে হাসলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। প্রসেনজিৎ কেন তাঁর ব্ল্যাকবেরি মহেন্দ্র সোনিকে দিয়ে দিলেন তাই নিয়ে কপট অনুযোগে তাঁকে ঘিরে ধরল ছোটরা। দেব অসীম ধৈর্যে একের পর এক ছবি তুললেন আরসিজিসি-র কর্মীদের সঙ্গে। জিৎ আড্ডায় মজে গেলেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, প্রসেনজিৎদের নিয়ে। ইন্দ্রাণী হালদার তো স্বস্তিকা আর ঋতুপর্ণাকে আদরে ভরিয়ে দিলেন বারবার। নারীশক্তির জয় বলে কথা!
ক্যুইজ? সত্যিই ওটা একটা মস্ত বাহানা ছিল!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.