আমরি-র অগ্নিকাণ্ডের সময়ে ওঁরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে। আমরি সংলগ্ন সেই পঞ্চাননতলা বস্তির বাসিন্দাদের সংবর্ধনা দিতে গিয়ে একটি প্রশ্নেই প্রবল নাজেহাল ছিলেন পুলিশকর্তারা, কত জনকে দেওয়া হবে ‘বীরের সম্মান’? দু’দিন ধরে এই নিয়ে টানাপোড়েন চলার পর সোমবার রাতে ঠিক হয়, আপাতত ৬৬ জনকে জানানো হবে এই সম্মান। আজ, মঙ্গলবার যাদবপুরে কলকাতা পুলিশের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ৬৬ জনের হাতে সম্মান-স্মারক তুলে দেবেন।
প্রথমে কিন্তু এই সংখ্যাটা ছিল ১০। পুলিশ সূত্রেই সে কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, ঠিক ছিল, তাঁদের গ্রিন পুলিশে চাকরিও দেওয়া হবে। কলকাতার এক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে ওই ১০ জনের নাম ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এত জনের মধ্যে থেকে ১০ জনকে বাছতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ওই পুলিশকর্তা। পরে ঠিক হয়, ওই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৬ করা হবে। তাতেও সমস্যা মেটেনি। তার পর সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠিক ছিল, আপাতত ৫৬ জনকে সম্মান জানানো হবে। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীও সেই সংখ্যা ঘোষণাও দেন। কিন্তু রাতে পুলিশ কমিশনারের ঘরে বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আপাতত ৬৬ জনকে সম্মানিত করা হবে। প্রত্যেকে পাবেন পাঁচ হাজার টাকা এবং একটি মেডেল। তবে তাঁদের গ্রিন পুলিশে নিয়োগ করা হবে কি না, সে ব্যাপারে সোমবার কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি পুলিশকর্তারা।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পরে আরও কাউকে চিহ্নিত করা হলে, তাঁকেও সম্মানিত করা হবে। এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত মৃত ৯০ জনের পরিবারপ্রতি এক জনকে চাকরি দেওয়ার বিষয়টিও অনুমোদন পায়। সে কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তবে অনেকেই হয়তো এই চাকরি নেবেন না। ওই ঘটনায় অনেক পরিবারের যিনি একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। যাঁরা চাকরি চাইবেন, তাঁদের দেওয়া হবে।” এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। মৃতদের পরিবারপিছু রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার যথাক্রমে ৩ লক্ষ ও ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। আহতদেরও ১ লক্ষ টাকা করে দেবে কেন্দ্র। |
রবীন্দ্র সরোবরে সাফারি পার্কে আমরি-কাণ্ডে মৃতদের স্মৃতিতে
কলকাতা পুলিশের তৈরি সৌধের আবরণ উন্মোচনে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র |
আমরি-র মুকুন্দপুর ও সল্টলেক শাখার বিরুদ্ধেও কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকারে রয়েছি বলে কী যা খুশি করব? ঢাকুরিয়া আমরি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছিলাম। তাই সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” আমরি-র ঘটনায় বিচারবিভাগীয় কমিশন কার নেতৃত্বে গঠিত হবে, সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি বলেও এ দিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিচারপতির নাম ঠিক হয়নি। খুঁজে দেখা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কর্মরত কোনও বিচারপতিকে নিয়ে কমিশন তৈরি হতে পারে না। কিন্তু, তেমন
কেউ হলে আমি খুশি হতাম।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “৩৪ বছরের বাম শাসনের পর দমকল খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘাস জমে গিয়েছে।
বাম শাসনে অনেক গাড়ি কেনা হয়েছিল, সেগুলি ব্যবহার করা হয়নি। সিঁড়ি কেনা হয়েছে। কিন্তু তা রাখার জায়গা করা হয়নি। সব মিলিয়ে এই ব্যবস্থাকে আধুনিক করা হবে। দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগকেও আরও শক্ত করতে হবে।” এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও যে প্রশাসনিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে, সে কথা জানান পুলিশ কমিশনার রঞ্জিৎকুমার পচনন্দা।
এ দিন বিকেলে মহাকরণে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আমরি-র ঘটনায় শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়। এর আগে, এ দিন দুপুরে রবীন্দ্র সরোবরের সাফারি পার্কে মৃতদের স্মৃতির উদ্দেশে কলকাতা পুলিশের তৈরি সৌধের আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, রবীন্দ্র সরোবরের ওই অস্থায়ী স্মৃতিসৌধটিকে দ্রুত স্থায়ী করা হবে। এ দিন সেনাবাহিনীর বিজয় দিবস অনুষ্ঠানেও আমরি-র ঘটনায় মৃতদের স্মৃতিতে ২ মিনিট নীরবতা পালন করেন ইস্টার্ন কম্যান্ডের জেনারেল অফিসার ইন-কম্যান্ডিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিক্রম সিংহ এবং অতিথি ও দর্শকরা।
|
আমরি-কাণ্ডে মৃত্যু বেড়ে ৯৪
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আমরি অগ্নিকাণ্ডে অসুস্থ আরও এক রোগী সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁর নাম সুপ্রিয় গুহ (৪৮)। বাঁকুড়ার বাসিন্দা সুপ্রিয়বাবু কিডনির সমস্যা নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে আমরিতে ভর্তি হন। এই নিয়ে আমরি-কাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৪। যদিও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা ৯০। অন্য দিকে, এ দিন রবীন্দ্র সরোবরের অনুষ্ঠানস্থল থেকে মুখ্যমন্ত্রী বেরনোর সময় তাঁর কাছে পৌঁছে যান ত্রিপুরার বাসিন্দা পরিতোষ দাস। তাঁর অভিযোগ, শুক্রবার থেকে আমরি-তে তাঁর চিকিৎসাধীন দাদার খোঁজ মিলছে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লালবাজারের এক পুলিশকর্তাকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। |