|
|
|
|
|
আগুন লাগার সময় নিয়ে ধোঁয়াশা |
৪৮ মিনিট পরে খবর
এল কেন, তদন্তে পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা |
|
আমরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টে ২০ মিনিটে আগুন লেগেছিল ঢাকুরিয়ায় তাঁদের হাসপাতালের ‘অ্যানেক্স’ বিল্ডিংয়ে।
লালবাজার কন্ট্রোল রুম বলছে, তাদের কাছে আগুন লাগার খবর পৌঁছয় শুক্রবার ভোর ৪টে ৮ মিনিটে। ১০০ নম্বরে ফোন করে কোনও এক জন ওই খবর দিয়েছিলেন।
লেক থানা বলছে, তারা লালবাজার কন্ট্রোল থেকে আগুন লাগার খবর পায় ভোর ৪টে ১০ মিনিটে।
দমকল জানাচ্ছে, লালবাজার কন্ট্রোল থেকে তাদের কাছে আগুনের খবর আসে ভোর ৪টে ১২ মিনিটে।
খবর পেয়ে লেক থানাও দমকলে ফোন করে। দমকল তাদের জানায়, লালবাজার কন্ট্রোল থেকে ইতিমধ্যেই তারা খবর পেয়ে গিয়েছে।
অর্থাৎ, আমরি কর্তৃপক্ষের দাবি মানলেও প্রশাসনের কাছে আগুনের খবর পৌঁছেছিল ৪৮ মিনিট পরে। যদিও সে দিন বরাত জোরে বেঁচে যাওয়া কয়েক জন রোগী এবং লাগোয়া বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের ধারণা, বৃহস্পতিবার রাত দু’টো থেকে আড়াইটের মধ্যে আগুন লেগেছিল। সে ক্ষেত্রে নষ্ট হয়েছে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা অমূল্য সময়।
তা ছাড়া, আগুন যখনই লেগে থাকুক না কেন, পুলিশ বা দমকল কাউকেই আমরি কর্তৃপক্ষ তা জানাননি বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে দাবি গোয়েন্দা পুলিশের। এটাকেই হাসপাতালের তরফে চরম গাফিলতি বলে ধরে নিয়ে মামলা সাজাচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, “হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ যদি ৩টে ২০ মিনিটেও পুলিশ কিংবা দমকলকে খবর দিতেন, তা হলে অন্তত পৌনে এক ঘণ্টা আগে দমকল সেখানে পৌঁছতে পারত। সে ক্ষেত্রে আরও অনেক রোগীর প্রাণ বাঁচত।” সোমবার কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন অবশ্য বলেন, “১০০ নম্বরে যে ফোনটি এসেছিল, সেটি ওই হাসপাতালের কোনও কর্মী করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
|
আমরির অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের স্মরণে আয়োজিত পদযাত্রায়
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: অশোক মজুমদার। |
ওই রাতে হাসপাতালের কর্মরত বেশ কয়েক জন নার্স, নিরাপত্তা কর্মীর, উদ্ধার হওয়া রোগী এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন, তিনতলা-চারতলায় কালো ধোঁয়া পৌঁছেছে রাত সওয়া তিনটে নাগাদ। অর্থাৎ, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ আগুন লাগার যে সময় পুলিশকে জানিয়েছেন, তা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না তদন্তকারীদের। সে দিন রাতে রোগীদের অনেকেই তাঁদের বাড়ির লোকেদের ফোন করে আগুন লাগার কথা জানিয়েছিলেন। অনেক রোগীর আত্মীয়ও ওই রাতে হাসপাতালে ছিলেন। তাঁদের কাছেও এই ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হবে বলে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন।
সোমবার পর্যন্ত হাসপাতালের ধৃত ছয় ডিরেক্টর এবং কয়েক জন প্রশাসনিক কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। ওই রাতে হাসপাতালের দায়িত্বে যে অফিসার ছিলেন, তাঁর বয়ানও নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তার কাছে নির্দিষ্ট সময়েই খবর পৌঁছেছিল। কিন্তু তিনি বা হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী বা কর্মীদের কেউ কেন দমকল, লালবাজার বা লেক থানায় বিষয়টি জানালেন না, সেটাই পুলিশের কাছে বিস্ময়ের ঠেকছে। বিশেষ করে হাসপাতালে যখন আগুন নেভানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না।
বিভিন্ন সূত্রে যে সব তথ্য সংগ্রহ করা গিয়েছে, তার ভিত্তিতে তদন্তকারীরা মনে করছেন, সরাসরি দমকল বা পুলিশে খবর দেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী বা অন্য কর্মীদের নিশ্চয়ই কোনও সমস্যা ছিল। লেক থানা এবং দমকল সূত্রে লালবাজার জেনেছে, আমরি-র মূল ভবনের উল্টো দিকে আমরি ইন্সটিটিউট অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড হর্মোনাল ডিসঅর্ডার কেন্দ্রের দোতলায় মাস তিনেক আগে আগুন লেগেছিল। সেটাও গভীর রাতে। এক নিরাপত্তারক্ষী তাঁর মোবাইল ফোন থেকে দমকলে সেই খবর দিয়েছিলেন। দমকল এসে পরিস্থিতি সামলায়। কিন্তু পরে এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। কেন তিনি কাউকে না জানিয়ে দমকলে সরাসরি খবর দিতে গেলেন, তা নিয়ে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে জেরার মুখে পড়তে হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
সেই কারণেই হাসপাতালের কোথাও আগুন লাগলে দমকলে খবর দেওয়া যাবে না বলে কর্মীদের প্রতি কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “হাসপাতালে আগুন লাগার খবর বাইরে বেরিয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানের বদনাম হতে পারে ভেবে অনেক ক্ষেত্রেই খবর চেপে রাখার একটা প্রবণতা রয়েছে। সেই প্রবণতা থেকেই এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”
তদন্তকারীরা জেনেছেন, আমরি-র ক্যাফেটেরিয়ায় মাস চারেক আগে মাংস রান্না করতে গিয়ে আগুন লেগেছিল। বছরখানেক আগেও একটি তলার সিলিং-এ আগুন লাগে। দু’বারই হাসপাতালের কর্মী, নিরাপত্তাকর্মীরা তা নিভিয়ে দেন। দমকল বা পুলিশের কাছে সেই খবর পৌঁছয়নি। এ বারের অগ্নিকাণ্ডেও হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ একই ভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন কি না, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ঘটনার সময় হাসপাতালের ‘স্মোক অ্যালার্ম’ কেন বন্ধ করা ছিল তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সোমবার আমরি হাসপাতালে গিয়ে কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের দাবি, আমরি-র গ্রেফতার হওয়া ডিরেক্টররা জানতেন যে, ওই হাসপাতালে অগ্নিবিধি ভাঙা হয়েছে। কারণ এ বিষয়ে ২৯ অগস্ট হাসপাতালের তরফে দমকলের কাছে হলফনামা দেওয়া হয়। আমরি-র এক কর্মী বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এর প্রতিনিধি হিসেবে ওই হলফনামা জমা দিয়েছিলেন। বেসমেন্ট থেকে সমস্ত দাহ্য পদার্থ সরিয়ে নেওয়া এবং সেখানে অগ্নিবিধি মানার বিষয়ে হাসপাতালের হলফনামা পাওয়ার পর, ৬ সেপ্টেম্বর দমকল আমরি-কে শর্তসাপেক্ষে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট দেয়। ৪ ডিসেম্বর তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
দময়ন্তীদেবী এ দিন বলেন, ধৃতেরা ছাড়া আমরি-র বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে আর কারা রয়েছেন (ওই বোর্ডে সরকারি দু’জন অফিসারও আছেন) এবং তাঁদের ভূমিকা কী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|