আবার কেন্দ্রের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর চাপানউতোর শুরু! এ বারে চিনের জেলে বন্দি ভারতীয়দের মুক্তির ‘কৃতিত্ব’ নিয়ে।
হিরে চোরাচালানের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চিনের জেলে বন্দি ২২ জন ভারতীয়। যার অধিকাংশই গুজরাতি। তাঁদের কারও বাড়ি সুরাত, কারও মুম্বই। নরেন্দ্র মোদী গত মাসে বিনিয়োগের সন্ধানে চিন সফরে গিয়ে সে দেশের সরকারকে এই বন্দিদের মানবিক কারণে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানান। গুজরাত সরকারের দাবি, মোদীর ওই আর্জির পরেই চিন তৎপর হয়। আজ চিনের আদালত ২২ জনের মধ্যে ১৩ জনকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে। বাকি ৯ জনের ৩-৬ বছরের কারাবাসের রায় দেওয়া হয়েছে।
আদালতের রায় বেরোনোর আগে থেকেই অবশ্য কেন্দ্রের মনমোহন সিংহের সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে মোদীর সরকার। চিনা আদালতের রায় বেরনোর আগে, পরে মিলিয়ে আজ সারা দিন ধরে গুজরাত সরকার কেন্দ্রের ‘ব্যর্থতা’ তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। রায় বেরনোর পরে গুজরাত সরকারের তরফে বলা হয়, মোদীর ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টা’র সুফল হিসেবেই ১৩ জন বন্দির মুক্তি দ্রুত হয়েছে। মুম্বই না সুরাত বন্দিরা কোন শহরের, তা দেখেননি মুখ্যমন্ত্রী। বিদেশের জেলে ‘ভারতীয়’ বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারেই সক্রিয় হয়েছেন তিনি।
মোদী নিজেও এই সুযোগকে হাতছাড়া করতে চাননি। তিনি বলেন, “চিন সফরে গিয়েই আমি ২২ জন ভারতীয় যুবককে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি চিনা নেতৃত্বের কাছে রেখেছিলাম। এই বন্দিদের যাতে দ্রুত শুনানির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন হয়, তার উপরেও জোর দিয়েছিলাম। যে ভাবে চিন সরকার গোটা বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়েছে, তাতে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”
স্বাভাবিক ভাবেই মোদী তথা গুজরাত সরকারের বক্তব্যে কেন্দ্র ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে মোদীর সঙ্গে সরকার এবং সরকারের প্রধান শরিক কংগ্রেসের চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “গোড়া থেকেই বিদেশ মন্ত্রক এই বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়েছে।” কংগ্রেস নেতা মোহন প্রকাশ বলেন, “বন্দিদের ছাড়ার বিষয়টি ভারত সরকারই করেছে। মোদী যদি এতটাই ক্ষমতাবান হতেন, তা হলে তো ২২ জন বন্দিকেই ছাড়াতে পারতেন! কেন শুধু ১৩ জন ছাড়া পেলেন?” যার জবাবে গুজরাত সরকারের তরফে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, একই অপরাধে এক অস্ট্রেলীয় নাগরিককে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অথচ ভারতীয়দের সাজার মেয়াদ অনেক কম।
দিনভর গুজরাত সরকার বিষয়টি নিয়ে শোরগোল ফেলে দেওয়ার পরে বেশি রাতের দিকে বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়ে দেয়, চিনে অবস্থিত ভারতীয় কূটনীতিকরা ইতিমধ্যেই ওই বন্দিদের সঙ্গে একাধিক বার দেখা করেছেন। ওই বন্দিদের ব্যাপারে সরকার যে সব রকম খোঁজখবর রাখছে এবং চিনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, তা-ও বিবৃতিতে বলা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতির পাল্টা জবাবে গুজরাত সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত মাসে মোদী চিনে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া করার পরেই ভারতীয় কূটনীতিকরা বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন।
কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “এই বন্দিমুক্তিকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে নিজেকে ‘রাষ্ট্রনেতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন, তাতে কংগ্রেসের কোনও ভয় নেই। বরং বিজেপির যাঁরা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেমে পড়েছেন, তাঁদের কাছে এটি অশনিসঙ্কেত।” কংগ্রেসের ওই নেতার বক্তব্য ঘরোয়া স্তরে পরোক্ষে কবুলও করছেন বিজেপির কেউ কেউ। এক বিজেপি নেতার কথায়, “গুজরাতের গণ্ডিতে থাকলেও জাতীয় স্তরে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কোনও সুযোগই হাতছাড়া করতে চান না মোদী। সেটি তাঁর অনশন মঞ্চই হোক বা বন্দিমুক্তি। ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কোনও এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি যে এই ক্ষেত্রে আসলে ‘বিদেশমন্ত্রীর’ ভূমিকা পালন করলেন, সেটাই প্রমাণ করতে চাইলেন তিনি। আর সেটাই চিন্তার।” প্রকাশ্যে অবশ্য মোদীর সুরেই সুর মেলাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। দিল্লিতে দলের অনেক নেতাই মোদীর পক্ষ নিয়ে মনমোহন সরকারের ব্যর্থতাকে তুলে ধরতে সক্রিয়। সংসদের চলতি অধিবেশনেও বিষয়টি উত্থাপনের সুযোগ খুঁজছে দল।
|
পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি হাসপাতালে। আর তাঁর এই ‘অসুস্থতা’কে কেন্দ্র করে বিস্তর জলঘোলা হল দিনভর। শুধু শারীরিক অবস্থাই নয়, ধোঁয়াশা ছড়াল প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ নিয়েও।
গত রাতে সেনার বিমানে দুবাইয়ে পৌঁছন জারদারি। পাক সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে, বিমানে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং পাক পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আসিম হুসেন। হৃদ্রোগ সংক্রান্ত কিছু জটিলতার জন্য সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জারদারিকে। এরই মধ্যে একটি মার্কিন পত্রিকার ব্লগে লেখা হয়, হৃদ্রোগে আক্রান্ত পাক প্রেসিডেন্ট দেশে না-ও ফিরতে পারেন। কারণ স্মারকলিপি বিতর্কের পর থেকে গত কয়েক দিন ধরেই পাক সেনাবাহিনী যথেষ্ট চাপ দিচ্ছে প্রেসিডেন্টকে। আর শেষমেশ হয়তো সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করে খুব শিগ্গির পদত্যাগও করতে পারেন জারদারি। মার্কিন ব্লগে এই খবর বেরোনোর পরপরই দেশ-বিদেশে শুরু হয় জল্পনা। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ফারহাতুল্লা বাবর যদিও আজ বিকেলেই পদত্যাগ সংক্রান্ত সব খবরকেই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এক পাক মন্ত্রীই প্রথমে জানিয়েছিলেন, গত রাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে দুবাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জারদারি। এর একটু পরেই ফারহাতুল্লা বাবর জানান, নিয়মিত কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যই দুবাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রেসিডেন্ট। রাতের দিকে পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। তবে আরও কয়েক দিন তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।” |