পরিকাঠামোর অভাবের অভিযোগ তুলে রাজ্যের চিকিৎসকেরা গ্রামে যেতে চান না। এ বার ভিন্ রাজ্যের ডাক্তারদের এনে সমস্যার সুরাহা করতে চাইছে সরকার। কিন্তু তাতে আদৌ কাজ হবে কি না, সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই মাথা চাড়া দিয়েছে।
ডাক্তারদের গ্রামে যেতে অনীহার পিছনে উপযুক্ত ‘পরিকাঠামো’ না-থাকার অভিযোগই বার বার সামনে আসে। ঘাটতিটা যেমন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর, তেমন চিকিৎসকদের গ্রামে বসবাসের উপযোগী ব্যবস্থারও। এই পরিস্থিতিতে জেলা ও গ্রামীণ হাসপাতালে ডাক্তারের ঘাটতি মেটাতে ভিন্ রাজ্যের চিকিৎসকদের আহ্বান করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু স্বাস্থ্য মহলেই প্রশ্ন উঠেছে, উপযুক্ত পরিকাঠামোর যে অভাবের জন্য এ রাজ্যের চিকিৎসকেরা মুখ ফেরান, সেখানে ভিন্ রাজ্যের চিকিৎসকেরা এসে কী করবেন?
আগামী সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও গ্রামীণ হাসপাতালে নানা স্তরে প্রায় সাড়ে চারশো ডাক্তারের যোগ দেওয়ার কথা। এ পর্যন্ত তাঁদের ২৫ শতাংশের বেশি যোগ দেননি। স্বাস্থ্য-কর্তাদের আশঙ্কা, সংখ্যাটা এর চেয়ে বাড়বে না। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলো চিকিৎসকশূন্য না-রেখে অন্য রাজ্যের ডাক্তারদের পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে বলে সোমবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য দফতরের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে স্থির হয়েছে। দফতর সূত্রের খবর: সাধারণ মেডিক্যাল অফিসার থেকে বিশেষজ্ঞ সর্বস্তরেই ওই নিয়োগ হবে।
কিন্তু পরিকাঠামো না-থাকলে তাঁরাই বা কাজ করবেন কী ভাবে?
স্বাস্থ্য-কর্তারা অবশ্য পরিকাঠামোর অভাবকে চিকিৎসকদের গ্রামে না-যাওয়ার কারণ বলে মানতে চাইছেন না। বরং ওঁদের দাবি: ধাপে ধাপে পরিকাঠামোর অনেকটাই উন্নতি হচ্ছে। বহু গ্রামে সরকারি ডাক্তারদের কোয়ার্টার্স মেরামতি হয়েছে, অন্যত্র সংস্কার চলছে। জেলা ও গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামও প্রচুর দেওয়া হচ্ছে। তা হলে অনীহা কাটছে না কেন?
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “কলকাতা ছেড়ে যেতে না-চাওয়াটাই আসল কারণ। উপরন্তু নানা সুযোগ-সুবিধার কারণে অনেকেই এখন ‘হেল্থ সার্ভিস’ ছেড়ে শিক্ষকতায় (মেডিক্যাল এডুকেশন) চলে আসতে চাইছেন। ফলে জেলা ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যে ডাক্তারের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।” তবে অন্য রাজ্য থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হলেও সরকারি চাকরিতে রাজ্যের চিকিৎসকদের সব সময়েই অগ্রাধিকার থাকবে বলে স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছেন।
এ দিনের বৈঠকে স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্তবাবুর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষেরা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সকলকেই চিকিৎসকদের উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ে যত্নবান হতে বলেন। এক অধ্যক্ষ জানান, “ওয়ার্ডে নিয়মিত রাউন্ড দেওয়া তো বটেই, রোগীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ডাক্তারেরা যাতে নিয়মিত দেখা করেন, সেটাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। হাসিমুখে পরিষেবার (সার্ভিস উইথ স্মাইল) উপরে মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়েছেন।” এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের কথায়, “হাসপাতালের সব স্তরে দায়বদ্ধতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন। ওঁর স্পষ্ট বার্তা, কোনও স্তরেই কোনও রকম গাফিলতি বা অসততা বরদাস্ত করা হবে না।”
কলকাতার সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে মেডিক্যাল কলেজগুলোর সঙ্গে অন্যান্য হাসপাতালের সংযুক্তির সিদ্ধান্তও দ্রুত কার্যকর করার কথা এ দিন বলা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় এনআরএসের সঙ্গে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল, এসএসকেএমের সঙ্গে রামরিক দাস-বাঙুর-শম্ভুনাথ পণ্ডিত এবং আরজিকরের সঙ্গে অবিনাশ দত্ত ও ইন্দিরা মাতৃসদন যুক্ত হবে। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে কিছু দিনের মধ্যে ওষুধ ও স্বাস্থ্য সরঞ্জামের একটা ‘ফেয়ার প্রাইস শপ’ খুলতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। এ দিনের বৈঠকে তা নিয়েও আলোচনা হয়। ওই দোকানে ওষুধপত্রের পাশাপাশি পেসমেকার, স্টেন্টও মিলবে।
প্রকল্পটি সফল হলে অন্যান্য হাসপাতালেও তা ধাপে ধাপে চালু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা। |