|
|
|
|
সবই মৌখিক, বলছেন ব্রাত্য |
উপাচার্য বিদায়ে কোনও রিপোর্টই পাননি রাজ্যপাল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ এবং চাপান-উতোর চলছে বেশ কয়েক দিন ধরে। কিন্তু সোমবার জানা গেল, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী সেনগুপ্তকে বরখাস্ত করার ব্যাপারে আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে কোনও রিপোর্টই দেয়নি রাজ্য সরকার।
সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ এনে তাঁকে বরখাস্তের সুপারিশ করেছিল রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। এই নিয়ে চারটি রিপোর্টও রাজ্যপালের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে ২৮ নভেম্বর জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ওই দিন রাজভবনে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে ব্রাত্যবাবু বলেছিলেন, উপাচার্যের দুর্নীতি সংক্রান্ত ফাইলও তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্যপালের হাতে।
আচার্য নিজে কিন্তু সোমবার জানিয়ে দেন, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধে কোনও রিপোর্ট তিনি হাতে পাননি। তার পরেই ব্রাত্যবাবু বলেন, রাজ্যপালকে তিনি মৌখিক ভাবে সব জানিয়েছেন। কোনও লিখিত রিপোর্ট দেননি। অর্থাৎ সরকারি ভাবে সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধে রাজ্যপালের কাছে কোনও নালিশই জানায়নি রাজ্য সরকার।
এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল। তাঁর কাছে তা জানতে চাওয়া হয়, শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি আচার্য হিসেবে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি? রাজ্যপাল বলেন, “আমি এই ব্যাপারে কোনও রিপোর্ট হাতে পাইনি। কেউ এই বিষয়ে আমাকে কিছু বলেনওনি।”
সব্যসাচীবাবুর বক্তব্য, তিনি শিক্ষামন্ত্রীর কথামতো কাজ করছেন না বলেই তাঁর বিরুদ্ধে এই সব অভিযোগ করা হচ্ছে। এ দিন রাজ্যপালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সব্যসাচীবাবু এই মর্মে তাঁর কাছে পাল্টা অভিযোগ করেছিলেন কি না। রাজ্যপাল জানান, এ ব্যাপারেও তাঁকে কেউ কিছু বলেননি।
তার পরেই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সরকারি ভাবে কোনও রিপোর্ট রাজ্যপালকে দেওয়া হয়নি। তাঁকে মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে। রাজ্যপাল ঠিক কথাই বলেছেন।” উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এখনও বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইন কার্যকর হয়নি। তাই সরকারি ভাবে এখন কোনও রিপোর্ট রাজ্যপালকে দেওয়া যায় না। গোটা বিষয়টি মৌখিক ভাবে রাজ্যপালকে জানিয়ে রেখেছেন ব্রাত্যবাবু। রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে তাই বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই।
কয়েক দিন আগে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় উচ্চশিক্ষা দফতর। তখন সব্যসাচীবাবু পাল্টা অভিযোগ করেন, শিক্ষামন্ত্রীর কথামতো কাজ না-করায় তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে। উপাচার্য জানান, হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের এক অকৃতকার্য ছাত্রীকে পাশ করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ এসেছিল তাঁর কাছে। কখনও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, কখনও ব্রাত্যবাবুর ব্যক্তিগত সচিব কৌশিক বসাকের নাম করে তাঁকে ফোনে এই ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তিনি জানিয়ে দেন, এই অনুরোধ রাখা সম্ভব নয়। মলয়বাবু এবং কৌশিকবাবু দু’জনেই অবশ্য ফোনে অনুরোধ জানানোর কথা অস্বীকার করেন।
পরবর্তী কালে ওই ছাত্রী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর প্রতি ‘প্রতিহিংসামূলক’ আচরণ করছে। সেই জন্য তিনি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ আদালতে জানিয়েছিলেন, ওই ছাত্রী তিন বার মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হতে পারছেন না।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করবে না। |
|
|
|
|
|