গভীর রাতে এক মহিলাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে মুর্শিদাবাদের ‘আদর্শ থানা’ হরিহরপাড়ার ওসি ও এক মহিলা কনস্টেবল-সহ ছয় জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল। ওসি সন্দীপ সেন, এএসআই দীপক দাস এবং এক কনস্টেবল সৌমিত্র সরকারকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কাজ থেকে ‘বসিয়ে দেওয়া হয়েছে’ ওই থানার তিন হোমগার্ড ওয়াহাব আলি, জার্জিস শেখ এবং সাজেদা বিবিকে।
লতিফা বিবি নামে ওই মহিলার বাড়ি হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী কুতুবুদ্দিন মণ্ডলের বিরুদ্ধে ওই থানায় দাদা জহিরুল মণ্ডলকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। সেই সূত্রেই কুতুবুদ্দিনের খোঁজে ২৯ নভেম্বর রাতে তাঁদের বাড়ি যান ওই থানার কয়েকজন পুলিশকর্মী। মুর্শিদাবাদের এসপি ভরতলাল মিনা বলেন, “লতিফা বিবির স্বামীকে না পেয়ে পুলিশ তাঁকেই ওই দিন রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে বলে অভিযোগ। তার পরে সারা রাত থানায় আটকে রেখে তাঁর উপরে নির্যাতন করা হয় বলেও ওই মহিলা অভিযোগ করেছেন। এটা খুবই গুরুতর অভিযোগ। ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আন্নাপ্পা ই-কে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওসি, এএসআই এবং এক কনস্টেবলকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিন হোমগার্ডকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।” সাময়িক ভাবে হরিহরপাড়ার থানার দায়িত্ব দেওয়া হয় রঘুনাথগঞ্জ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অক্ষয় পালকে। লতিফা বিবি এখন বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুতুবুদ্দিন বেশ কয়েক দিন ধরেই দুই ছেলেকে নিয়ে ঘরছাড়া ছিলেন। তাঁর খোঁজেই সেই রাতে ওই থানার চার পুলিশকর্মী লতিফা বিবির বাড়িতে যান। লতিফার অভিযোগ, “আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে মারতে মাটিতে ছেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তোলা হয়। তার পর থেকেই শুরু হয় যৌন নির্যাতনও। |
আমাকে থানায় নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়েছে। তখন সেখানে সাজেদা বিবি নামে এক মহিলা কনস্টেবলও ছিলেন।” তিনি বলেন, “পুলিশ বারবার আমাকে বলছিল, স্বামী আত্মসমর্পণ করলে আমাকে ছেড়ে দেবে।” কুতুবুদ্দিন আত্মসমর্পণ করেন ৩০ নভেম্বর রাত ১০টা নাগাদ। তার পরে লতিফা বিবিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। লতিফার অভিযোগ, “থানা থেকে ছাড়ার সময় ওসি সন্দীপ সেন বারবার বলছিলেন, আমি যেন এই ব্যাপারে কোনও ভাবে মুখ না খুলি। আমাকে হরিহরপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় পুলিশই। আমার ওষুধও কিনে দেয়। কিন্তু সেখানেও বলতে বলা হয় যে, পড়ে গিয়ে চোট লেগেছে। আমি পুলিশের ভয়ে তখন সে কথাই বলেছিলাম।”
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। এর পরের দিন আদালতে তোলা হয় কুতুবুদ্দিনকে। তিনি জামিনে ছাড়া পান। তার পরে শুক্রবার সকালে লতিফা বিবিকে তিনিই বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার সকালে লতিফা বিবি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন গোটা ঘটনা জানিয়ে। কিন্তু ঘটনার চার দিন পরে কেন অভিযোগ জানানো হল? কুতুবুদ্দিন বলেন, “পুলিশ হুমকিতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এই ক’দিনে আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা পাশে দাঁড়ানোয় এই দিন আমার স্ত্রী লিখিত অভিযোগ করেন।” অভিযুক্ত ওসি-র বক্তব্য, “মহিলাকে নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা। বরং তিনিই সেই দিন তাঁর বাড়িতে ওই এএসআইকে হাঁসুয়া নিয়ে তাড়া করেছিলেন। তাই তাঁকে থানায় ধরে নিয়ে আসা হয়। অত্যাচার করা হয়নি। তাই তা লুকোনোর কথাও বলা হয়নি।” কিন্তু প্রায় ২৪ ঘণ্টা তাঁকে থানায় আটকে রাখা হলেও তাঁকে গ্রেফতার বা আটক দেখানো হয়নি কেন? ওই ওসি’র বক্তব্য, “যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” |