স্টিফেন হকিং সবাই হয় না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আর পাঁচটা মানুষের থেকে শারীরিক ক্ষমতা কম থাকলেই ‘হেরো’ হয়ে বাঁচতে হবে সারা জীবন! রূপকথা তো তৈরি হয় জীবন যুদ্ধে জিতেই। আর নিষ্ঠা, একাগ্রতা, বোধ, মনন, মেধা, পরিশ্রম, শিক্ষা এই সব এককাট্টা হলে স্রেফ শারীরিক ত্রুটি রূপকথা তৈরির পথে অন্তরায় হতে পারে না। একবিংশ শতকে এই সারসত্যটা হয়তো বা বুঝছে শিল্প। যে কারণে দেশের অন্যতম বৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা উইপ্রোর তরফে অকপটে জানানো হয়: “ওঁদের জন্য কোনও সুপারিশ লাগে না। ওঁরা অন্য সকলের মতোই এখানে আবেদন করেন, নিজেদের যোগ্যতায় কাজ পান এবং সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যান। আমরা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সকলের সঙ্গে সমান ভাবে কাজে সামিল করেই সম্মান দিতে চাই। সুযোগ দিতে চাই।”
আর শরীরের হাজারো প্রতিবন্ধকতা নিয়েও যাঁরা নিজেদের ‘খুঁজে’ পেতে চান সাফল্যের মধ্যে, তাঁদের কাছে এই সুযোগটাই ‘সম্পদ’। বাজি জেতার হাতিয়ার। সমাজের মূল স্রোতে মিশে যাওয়ার আসল পথ। কর্পোরেট জগতের দরজায় দরজায় ঘুরে যে ‘পথ’-এর পক্ষে সওয়াল করার পরই দ্রুত এক প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রম তৈরি করে ফেলেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ জব ট্রেনিং বা আইআইজেটি। যারা দেশের অন্যতম কর্মী জোগানকারী সংস্থা টিমলিজের শাখা সংস্থা এবং যাদের কাজই হল বিভিন্ন ধরনের শিল্পে দক্ষ কর্মী জোগান দেওয়া। তাদের নতুন এই প্রকল্পে শারীরিক প্রতিবন্ধী বা বলা যায় ‘অন্য ভাবে সক্ষম’ ছেলেমেয়েদের নির্দিষ্ট কিছু প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগের সুযোগ দেবে তারাই। এর জন্য তারা গাঁটছড়া বেঁধেছে সমাজ কল্যাণমূলক সংস্থা ওয়াধওয়ানি ফাউন্ডেশন-এর সঙ্গে।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা উইপ্রোর মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক জর্জ জানিয়েছিলেন, “আমাদের সংস্থায় বিপণন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কনসাল্টিং, মানবসম্পদ ইত্যাদি বিভিন্ন বিভাগে ভারত জুড়ে কাজ করছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, এমন বহু ছেলেমেয়ে। তাঁদের সমাজের মূল স্রোতে সামিল করতেই কাজের স্বাভাবিক পরিবেশ দিয়ে থাকি আমরা। অন্য সকলের মতো মেধার জোরে তাঁরা নিযুক্ত হন। সকলের সঙ্গেই প্রশিক্ষণ হয়। অনেকেই খুব ভাল কাজ করার স্বীকৃতি পান।” বস্তুত, আইজ্যাকের মতো কর্পোরেট নেতাদের এই ‘বিশ্বাস’-কে পুঁজি করেই শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের জন্য প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের এই কর্মসূচি রূপায়ণে তাঁরা পা বাড়িয়েছেন বলে জানান আইআইজেটি-র তরফে বিভাগীয় ম্যানেজার (পূর্ব) শুভঙ্কর ভট্টাচার্য। |
শুভঙ্করবাবু জানান, আপাতত দু’বছরের জন্য তৈরি হয়েছে প্রকল্পটি। যেখানে ২,০০০ শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। ‘পাইলট’ প্রকল্প ১০০ জনকে নিয়ে শুরু হচ্ছে কলকাতা, বেঙ্গালুরু, দিল্লি ও মুম্বইয়ে। ভাল সাড়া পেলে সংখ্যাটা ২,০০০ ছাড়িয়ে যাবে বলেই আশা তাঁর। প্রথম পর্যায়ে শুধু চারটি শহরে প্রশিক্ষণের সুযোগ আনা হলেও এর পর সারা ভারতে আইআইজেটি-র মোট ১২০টি কেন্দ্রেই তা চালু হয়ে যাবে। যে সমস্ত পাঠ্যক্রম আনা হয়েছে সেগুলি হল
১) অ্যাকাউন্টিং এবং ট্যালি-৯ ইআরপি (অ্যাকাউন্টিংয়ের কাজের জন্য)
২) নন-ভয়েস ডেটা প্রসেসিং (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং-এর কাজের জন্য)
৩) ভয়েস প্রসেসিং (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং-এর কাজের জন্য)
৪) ডেটা এন্ট্রি অপারেটর্স (ডেটা এন্ট্রির কাজের জন্য)
কোনও না কোনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, এমন প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন। বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩০ বছর। বিশদ জানতে ফোন করা যাবে ১৮০০২৬৬৬৭৭৭ নম্বরে। দেখুন www.iijt.net ওয়েবসাইট। বিষয়টি নিয়মিত বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানানো হবে। ভর্তি হতে প্রথমে ‘অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট’ দিতে হবে। তার পর প্রার্থীর কেরিয়ার সংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে হবে কাউন্সেলিং। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোর্স ফি-র ৫০% বহন করবে ওয়াধওয়ানি ফাউন্ডেশন। এই সংস্থার প্রেসিডেন্ট-সিইও অজয় কেলা জানান, দেশে ২০-৩০ লক্ষ শিক্ষিত শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ আছেন। এবং সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে তাঁরা যথেষ্ট প্রতিভাবান ও যোগ্য। কেলা-র কথায়, “মানবসভ্যতা প্রতিবন্ধীদেরও সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার কথা কবুল করতে বাধ্য হয়েছে। এখন উপেক্ষার দিকটি কিছুটা বদলালেও বঞ্চনা, উদাসীনতা আর আশঙ্কা পুরোপুরো যায়নি। অথচ কর্মক্ষমতা ও দক্ষতাই হোক বা সংস্থা ছেড়ে না গিয়ে কর্তৃপক্ষের খরচ সাশ্রয়, সমস্ত দিক থেকেই তাঁরা ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত মূল্যবান হিসেবে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। এই বিষয়টি আরও জোরালো ভাবে তুলে ধরতেই তাঁদের যথার্থ প্রশিক্ষণ দিয়ে সংগঠিত ক্ষেত্রে সামিল করার কাজে নেমেছেন তাঁরা।”
|
যৌথ উদ্যোগে দৃষ্টিহীন এবং কম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন পড়ুয়াদের পর্যটন শিল্পে কাজ করার প্রশিক্ষণ দেবে অ্যামওয়ে অপরচুনিটি ফাউন্ডেশন (এওএফ) ও অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ব্লাইন্ড (এনএবি)। এক বছরের পাঠ্যক্রমটি রাজ্য সরকারের কারিগরি শিক্ষা বিভাগ অনুমোদিত। এর আগে ২০০৯-এ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের জন্য কম্পিউটার কেন্দ্র চালু করে এওএফ এবং এনএবি। সেখানে কম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন এবং দৃষ্টিহীন ছাত্রদের ৬ মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কোর্সটি পাশ করলে তবেই পর্যটন পাঠ্যক্রমে ভর্তির আবেদন করা যাবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, পুঁথিগত শিক্ষার সঙ্গে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে এই পাঠ্যক্রমে। সে ক্ষেত্রে ‘প্যাকেজ ট্যুর’ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হবে, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি এবং কর্পোরেট সংস্থায় কাজের সুযোগও দেওয়া হবে। পরবর্তীকালে পড়ুয়াদের নিজস্ব ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম এজেন্সি খুলতে সাহায্যও করবে প্রতিষ্ঠান দু’টি। বিমান ও ট্রেন টিকিট বুক করা, হোটেল বুকিং, প্যাকেজ ট্যুর আয়োজন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তাঁদের স্বনির্ভর হতে সাহায্য করা হবে। ফোন নম্বর: (০৩৩) ৩০২১-৫৫০০ এবং ৯৮৩১০-৪২১৪৪। দেখুন www.amway.in ওয়েবসাইট।
|
যে কোনও শাখায় ১০+২ উত্তীর্ণ বা ২০১২-তে ১০+২ দিচ্ছেন এমন প্রার্থীরা সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার মাধ্যমে একাধিক সরকারি এবং বেসরকারি কলেজে তিন বছরের ‘ব্যাচেলর ইন সায়েন্স প্রোগ্রাম ইন হসপিটালিটি অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট’ পড়তে পারেন। বয়স হতে হবে ২২ বছরের নীচে। তিন ঘণ্টার এই প্রবেশিকা পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে ২৮ এপ্রিল ২০১২। আবেদনপত্র দেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। বিস্তারিত তথ্য মিলবে www.nchmct.org ওয়েবসাইটে। |