ক্রিকেটীয় কারণে তো অবসর নিইনি,
নিয়েছিলাম আর খেলতে চাই না বলে

প্রশ্ন: সেঞ্চুরি করেও খুব হতাশ?

সৌরভ: খুব। এত কাছাকাছি এসেও ফার্স্ট ইনিংস লিড-টা পেলাম না! ২৩ রানে আমাদের শেষ পাঁচটা উইকেট চলে গেল!

প্র: কী ভাবে হল এটা?
সৌরভ: হয়ে গেল। কী আর বলব! লিড-টা আমাদের পাওয়া উচিত ছিল।

প্র: টেল-এন্ডারদের কাছ থেকে কিন্তু সবাই আর একটু সংকল্প, প্রতিজ্ঞা আশা করেছিল।
সৌরভ: আসলে হরিয়ানার দু’টো লেগস্পিনার বল করছিল। ওদের গুগলিগুলো আমাদের ব্যাটসম্যানরা ধরতে পারেনি। সেই কারণে আউট হয়ে গিয়েছে।

প্র: আপনি নাকি খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন?
সৌরভ: থাক গে ও সব। আসলে এত কাছাকাছি এসে ‘লিড’-টা মিস হয়ে গেল! কিছুই ভাল লাগছে না।

প্র: ৩১৫ রানেও আপনাদের হাতে পাঁচ উইকেট। আপনি আর লক্ষ্মীরতন শুক্ল ব্যাট করছেন। হরিয়ানার প্রথম ইনিংস টপকাতে করতে হবে আর মাত্র ২৫ রান। তার পরেও ‘লিড’ হয়নি শুনে এখানে কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিল না!
সৌরভ: বিশ্বাস না হওয়ার মতোই। জেতা ম্যাচ হেরে এলাম!

প্র: লিড না পাওয়ার হতাশার পাশাপাশি আর একটা ঘটনা ঘটছে, ভালই টের পাচ্ছেন নিশ্চয়ই।
সৌরভ: কী সেটা?

প্র: দাদা-ওয়েভ। হোটেলের লবিতে ভর্তি লোক। সবাই আপনার দর্শন পেতে চায়। ছবি তুলতে চায়। মাঠে শুনলাম শ’পাঁচেক লোক হয়েছিল। ‘দাদা’ ‘দাদা’ বলে সারাক্ষণ চিৎকার করে গিয়েছে। পোস্টার নিয়ে এসেছে। এক্ষুনি শুনছিলাম একটা বাচ্চা মেয়ের কথা। ঠায় হোটেলে দাঁড়িয়ে। আপনার সঙ্গে হাত না মিলিয়ে যাবেই না! বোঝাই যাচ্ছে, এখনও আপনাকে নিয়ে মানুষের আবেগ আর ভালবাসা কোন পর্যায়ে!
সৌরভ: আমি দেখে অবাক নই। এত বছর দেশের হয়ে খেলেছি। আমার মতো যে-ই এত বছর ধরে খেলবে, তাকে নিয়ে এটা হবে। সচিনকে নিয়ে হচ্ছে। রাহুলকে নিয়ে হচ্ছে।

প্র: তবু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মানে যেন এখনও কোথাও একটা অন্য রকম চৌম্বকক্ষেত্র। ভীষণ জীবন্ত এক আবেগের ছবি।
সৌরভ: তাই?

প্র: আরে, আপনি নিজেও তো টের পাচ্ছেন। কাল মাঠ থেকে ফেরার সময়কার ঘটনা ভুলে যাচ্ছেন নাকি?
সৌরভ: কী ঘটনা?

প্র: ওই যে সর্দারজি আর প্রায় শ’খানেক লোক আপনাদের টিম বাসের সামনে বসে পড়েছিল। আপনি ততক্ষণে বাসে উঠে পড়েছেন। জনতার আব্দার আপনাকে এক বার নামতেই হবে। না হলে বাস চলতে দেবে না। তার পর আপনি বাসের পাদানিতে নামাতে সবার শান্তি। হয়েছিল কি না?
সৌরভ: (হাসি) সত্যিই কাল ওরা একদম ছাড়ছিল না!
রোহতাকে সৌরভ। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র

প্র: সারা ভারতের মিডিয়াতেও আপনার আজকের সেঞ্চুরি নিয়ে খুব হইচই। সকলের গবেষণার বিষয় এক। বার বার কী করে আপনি সবাইকে ভুল প্রমাণ করেন!

সৌরভ: এ বার আবার কাকে ভুল প্রমাণ করলাম?

প্র: একটা ধারণাকে যে, গাঙ্গুলি কমেন্ট্রি বক্সে ঢুকে পড়েছে। টিভি শো করছে। নিয়মিত ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এই অবস্থায় আগেকার সেই গোল্ডেন টাচ থাকা আর সম্ভব নয়।
সৌরভ: আরে, কমেন্ট্রি তো সেই কবে লাস্ট করেছি। ইংল্যান্ড ট্যুরে। আর টিভি শো শেষ করে ফেলেছি তো বোধ হয় ছ’মাসেরও ওপর হয়ে গেছে। তার পর আমি তো রঞ্জি ট্রফির জন্য নিজেকে তৈরিও করেছি। দেড় মাস ধরে ট্রেনিং করেছি। পরিশ্রম করেছি। কমেন্ট্রি বা টিভি শো-এর সঙ্গে এর সম্পর্ক কোথায়?

প্র: কিন্তু এত সহজ তো নিশ্চয়ই নয়। ট্রেনিং করলাম আর খেলে দিলাম। একটা মোটিভেশনও তো লাগে।
সৌরভ: বাংলার হয়ে খেলছি। টিমের কঠিন সময়ে আমাকে দাঁড়াতে হবে। এটাই তো মোটিভেশন। আবার কী চাই?

প্র: এ সব দিনগুলোত খুব বলাবলি হয় যে, আপনি আরাম সে ভারতের হয়ে এখনও খেলে যেতে পারেন। কেন খামকা অবসর নিতে গেলেন! আপনারও আজ আবার মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই?
সৌরভ: একেবারেই মনে হচ্ছে না। আমি ভারতের হয়ে খেলা ছেড়ে দিয়েছি অনেক দিন হল। এখন আর ও সব নিয়ে ভাবি না।

প্র: এটা হতে পারে কখনও? চোখের সামনে দেখছেন এখনও ফুটওয়ার্ক ঠিক রয়েছে। স্ট্রোক নিতে পারছেন। চোখ ঠিক আছে। সেঞ্চুরি করছেন। আর ভিতরে ভিতরে মনে হবে না যে, আমি এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যোগ্য ছিলাম! কী বলছেন!
সৌরভ: না, আমার মাথায় সেটা আসে না। কারণ, আমার অবসর নেওয়াটা তো ক্রিকেটীয় কারণে ছিল না।

প্র: ক্রিকেটীয় কারণে ছিল না! তার মানে?
সৌরভ: মানে এমন তো নয় যে, আমি খেলতে পারছিলাম না বা ফর্ম ছিল না বলে আমি অবসর নিয়েছিলাম। সেঞ্চুরি করছিলাম। রান করছিলাম। আমি আর খেলতে চাইনি বলে অবসর নিয়েছিলাম। আই জাস্ট ডিডন্ট ওয়ান্ট টু প্লে এনিমোর।

প্র: কিন্তু কেন? কেন আর খেলতে চাইছিলেন না?
সৌরভ: আমার মনে হয়েছিল, এনাফ। আর খেলব না।

প্র: কীসের এনাফ? কীসের অনেক হয়েছে?
সৌরভ: থাক ও সব। ওই যে বললাম, আর খেলতে চাইনি।

প্র: কিন্তু আপনি চলে যাওয়ার পর মিডল অর্ডারে আপনার জায়গাটা এখনও ফাঁকা পড়ে। সেটা দেখে খারাপ লাগে না?
সৌরভ: আমারটা অতীত। আমি ভাবি সামনের সেই সময়টার কথা। যখন সচিন চলে যাবে। রাহুল চলে যাবে। লক্ষ্মণ চলে যাবে। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য সেই সময়টা অত্যন্ত কঠিন সময়।

প্র: আর ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলিও দেখা যাচ্ছে ফুল ফর্মে। কাল ম্যাচ রেফারির কাছে ছুটলেন বাজে আউটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে!
সৌরভ: আরে, না না। ও সব নিয়ে কথা বলা যাবে না।

প্র: বলা হচ্ছে আপনার আজকের সেঞ্চুরি ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়া হরভজন সিংহদের জন্য সেরা ম্যানুয়াল যে, জীবনের যুদ্ধ জিততে হলে এ ভাবে মাথা নিচু করে লড়াই করে যাও।
সৌরভ: হরভজনও করবে। সবে তো দু’টো রঞ্জি ম্যাচ খেলল।

প্র: কী মনে হচ্ছে, শেষ দিনে অসম্ভব কিছু ঘটে কি এই ম্যাচ জিততে পারে বাংলা?
সৌরভ: দেখি, কালকের সকালটা। যদি দ্রুত কয়েকটা উইকেট তুলে নেওয়া যায়। দেখা যাক।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.