সম্পাদকীয়...
চড়-চরিতমানস
পাঁচটি অঙ্গুলি। করাঙ্গুলি। তাহারই পরাক্রম। মুষ্ট্যাঘাত নহে। অস্ত্রাঘাত নহে। চপেটাঘাত। মুখমণ্ডলের উপরেই তাহার অবতরণ। দেহের অন্যত্রও তিনি নানা সময় অবতীর্ণ হন, তবে সে সকল বৃত্তান্তে সাধারণত রৌদ্ররস থাকে না, আদিরসাদি অন্য নানাবিধ কলাত্মক ক্রিয়ার প্রভাব থাকিলেও থাকিতে পারে। পরাক্রমী অবতারে মুখমণ্ডলের উপরেই তাঁহার আবির্ভাব। সমাজবিদেরা বলিতেছেন, তিনি দুর্বলের বল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে, সুন্দরী নবীনাগণ ইহার ব্যবহার করিয়া থাকেন। পথেপ্রান্তরে কোনও মনোহারিণীর প্রতি পুংকেশরের লম্ফঝম্প অতি মাত্রায় বাড়িয়া উঠিলে অনেক সময়েই সেই বেয়াদব পুরুষপুঙ্গবের কপালে জুটে একটি চড়। প্রকৃত প্রস্তাবে, বস্তুটি ত্রি-ফলা। সুন্দরীর রোষকষায়িত আনন, প্রাণঘাতী দৃষ্টিবাণ এবং একটি চপেটাঘাত। চলচ্চিত্রমোদীগণের এমন দৃশ্য বিশেষ অজানা থাকিবার কথা নহে। তাঁহারা ইহাও জানেন, শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলিবে? তাই আজ যিনি চড় মারিলেন, কাল তিনিই আহত পুরুষটির ক্ষতে চুম্বন আঁকিবেন। মুহূর্তে জগঝম্প বাজিয়া উঠিবে। ‘অন্যায়’ যে করে এবং ‘অন্যায়’ যে সহে, উভয়ে মিলিয়া গীতবাদ্যসহকারে তুমুল নর্তনকুর্দন শুরু হইবে। বিস্ময়ের কিছু নাই। বলিউড জানে, ইহাই জীবন। আজ যাঁহাকে সজোরে চড়, কাল তাঁহাকেই আপ্রাণে আলিঙ্গন। পূর্বে আঘাত না করিলে পরে সমর্পণটি গাঢ় হইবেই বা কী রূপে?
নারীগণ রে রে করিয়া বলিবেন, সব পুংতন্ত্রের চাল। বিশ্বাস করিও না। প্রথমে ক্ষমতার একটি ভান রাখিয়া পরে তাহা অপরণ করিবার (অপ)প্রয়াস। অর্থাৎ, আপাত ভাবে বলে না হইলেও ছলে ও কৌশলে তো বটেই। পরম পাকা কবি-ব্যারিস্টার অমিত রায় বঙ্কিম হাসিয়া বলিবেন, দুর্বলের আধিপত্য ভয়ঙ্কর। তাঁহার পাশ্চাত্য জীবনধারা-প্রভাবান্বিত প্রণয়িনী কেতকী ওরফে কেটি কটাক্ষ করিয়া বলিবেন, সিলি! শুনিয়া তাঁহার সখী সিসি হাসিয়া উঠিবে। তাত্ত্বিকপ্রবর মস্তক ঈষৎ চুলকাইয়া কহিবেন, সেই হলিউডি চলচ্চিত্রটির কথা মনে পড়ে, ‘স্ল্যাপ হার, শি’জ ফ্রেঞ্চ’? প্রশ্ন উঠিবে, কেন? তাত্ত্বিক বলিবেন, তাহাতে দেখানো হইয়াছিল, মহিলারা পুরুষদের চড় মারিতেছেন। তখনই তর্ক উঠিয়াছিল, হায়, সমাজ রসাতলে যাইতেছে। মহিলা-কর্তৃক পুরুষকে ক্রমাগত চপেটাঘাত করিবার কার্যটি এক প্রকার সামাজিক মান্যতা পাইতেছে যেন। সুতরাং, ভাবিয়া করিও কাজ! তবু, চপেটাঘাত চলিতেই থাকে। সম্প্রতি পশ্চিম দেশগুলিতে এক বিচিত্র চপেটাঘাতের রীতি আসিয়াছে। হুতোমি বুলিতে, এই অ্যাক নতুন! অতর্কিতে কেহ কাহাকে চপেটাঘাত করে, এবং তখন অন্য কেহ সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরিয়া রাখে। এই কিম্ভূত মজাটির নাম ‘হ্যাপি স্ল্যাপিং’! তাত্ত্বিকগণ সেই সব লইয়া যখন প্রতর্কে লিপ্ত, তখন অমিত রায়ের প্রতি এক ঝলক চাহিয়া বিদূষী লাবণ্য ধীরে তাঁহার অঙ্গুলি হইতে অমিত-প্রদত্ত অঙ্গুরীয়টি খুলিয়া রাখিলেন। অমিত বলিলেন, বন্যা, অঙ্গুরীয়টি পরিয়া আমাকে আঘাত করিতে পারিবে না, তাই কি উহা খুলিয়া দিলে? লাবণ্য সহসা কিছু বলিলেন না। অতঃপর স্থির নয়নে তাকাইয়া বলিলেন, কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও? বাকচতুর অমিত আর কথা বলিতে পারিলেন না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.