ছ’তলা বাড়ি। ছাদে অর্ধগোলাকার একটি ধাতব কাঠামো। এটি কোনও সাধারণ বাড়ি নয়, মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে রয়েছে একটি উচ্চ ক্ষমতার আধুনিক টেলিস্কোপ বা দূরবিন। ওই দূরবিনে চোখ রাখতে পারবেন আমজনতা। শখের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেখানে নিজেদের সাধ মেটাতে পারবেন।
হায়দরাবাদের জি পি বিড়লা অবজারভেটরি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল রিসার্চ সেন্টারটি সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয়েছে আমজনতার জন্য। বিড়লা সায়েন্স সেন্টারের ডিরেক্টর জেনারেল এবং বিশিষ্ট বিজ্ঞানী বি জি সিদ্ধার্থ জানান, এ বার ওই মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন সাধারণ মানুষও। ওই কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সেলেস্ট্রন সি-১১-র মতো আধুনিক এবং উচ্চ ক্ষমতাশালী দূরবিন।
ওই দূরবিন দিয়ে কী কী দেখা যাবে?
সিদ্ধার্থ বলেন, “সৌর জগৎ তো দেখা যাবেই। তার বাইরেও বিভিন্ন গ্রহ, ধূমকেতু-সহ নানা ধরনের জ্যোতিষ্ক দেখতে পাওয়া যাবে। ওই দূরবিন দিয়ে ১০০ আলোকবর্ষ (প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার) দূরের জিনিসও দেখা যাবে।” উচ্চ ক্ষমতার ওই দূরবিনে যে-কোনও জিনিস ৬৬০ গুণ বড় এবং ১৬০০ গুণ উজ্জ্বল দেখাবে বলেও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীদের দাবি। শুধু তা-ই নয়, ওই দূরবিনে কয়েক হাজার ছবি জমিয়ে রাখা যাবে বলেও জানান তাঁরা। সাধারণ মানুষকে দেখানোর জন্য আছে প্রজেক্টরের ব্যবস্থাও। |
হায়দরাবাদের মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের নকশা।
পাশে কেন্দ্রের কর্ত্রী নির্মলাদেবী বিড়লা। - নিজস্ব চিত্র |
সাধারণ মানুষ যেমন মহাকাশে চোখ রাখতে পারবেন, তেমনই উৎসাহী ছাত্রদের জন্য ওই কেন্দ্রে থাকবে মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থাও। বি এম সায়েন্স সেন্টারের ডিরেক্টর জেনারেল জানান, জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের পাঠ্যক্রম চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে। দু’টি তলা জুড়ে থাকবে গ্রন্থাগার। থাকবে গবেষণার ব্যবস্থাও। ফ্রান্সের একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান সিদ্ধার্থ। ছ’তলা বাড়িতে ৬৫০০০ বর্গফুটের ওই কেন্দ্র নির্মাণে ইতিমধ্যেই খরচ হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।
এমন একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র কি কলকাতায় গড়া যায় না?
জি পি বিড়লার স্ত্রী নির্মলাদেবী বিড়লা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য জায়গাতেও এই ধরনের প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
বিড়লা সায়েন্স সেন্টারের এই নয়া উদ্যোগে খুশি হায়দরাবাদের নব্য ও শখের গবেষকেরাও। এমনই এক জন অতুল দেশপাণ্ডে। সাংবাদিক বৈঠকের পরে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন তিনি। আদতে অঙ্কের ছাত্র হলেও নিয়মিত আকাশে চোখ রাখেন অতুল। তাঁর কথায়, “এত দিন নিজের সাধারণ দূরবিন দিয়েই আকাশে চোখ রাখতাম। উচ্চ ক্ষমতার দূরবিন-সহ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি চালু হয়ে গেলে সেই কাজে অনেক সুবিধা হবে।’’ |