দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ বা কমিটিতে কোনও প্রোমোটারকে রাখা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। অথচ আসানসোলের এক পরিচিত ‘প্রোমোটার’ দলের প্রদেশ কমিটিতে রয়েছেন। গত ২ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যে সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বারের জন্য সভানেত্রী নির্বাচিত হন, সেখানেও তিনি হাজির ছিলেন। সরকারে আসার পরে দলে বেনোজল ঢোকা ও দুর্নীতি রুখতে ‘কঠোর অনুশাসন’ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তবে অনির্বাণ দাস নামে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির যে সদস্য এখনও নির্মাণ ব্যবসায় যুক্ত বলে অভিযোগ, তিনি দলে নতুন নন। ২০০৯ সালের যে নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট বামেদের হাত থেকে আসানসোল পুরসভা ছিনিয়ে নেয়, তাতে তিনি ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোটে জিতে শুধু
|
‘প্রোমোটার’
অনির্বাণ দাস।
ছবি: শৈলেন সরকার। |
কাউন্সিলর নন, মেয়র পারিষদও হয়েছেন তিনি। ই-গর্ভনেন্স, সামাজিক ত্রাণ ও বাসস্ট্যান্ড তাঁর নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তার পরেও তাঁর নিজের নামে এবং একাধিক সংস্থার নামে বেশ কিছু নকশা পুরসভার অনুমোদন পেয়েছে। নির্মাণকাজও হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি অনির্বাণবাবুর নিজের নামেই একটি পাঁচতলা আবাসনের নকশা অনুমোদন পায়। সেই আবাসন গড়ার কাজ শেষও হয়ে গিয়েছে। অনির্বাণবাবু জানান, ১৯৯৮ সাল থেকেই তিনি এই ব্যবসায় যুক্ত। ‘অনিরাজ এন্টারপ্রাইজ’ (ভাইয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বে) এবং ‘ইনসাইট ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে দু’টি নির্মাণ সংস্থাতেও তিনি যুক্ত। রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক অবশ্য দাবি করেন, “২০১০ সালের পর থেকে অনির্বাণ আর প্রোমোটারি করছে না বলেই জানি। তাই প্রদেশ কমিটির সদস্য হিসেবে তার নাম পাঠানো হয়েছিল।” আসানসোলের মেয়র তথা আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “অনির্বাণ নির্মাণ ব্যবসায় যুক্ত কি না তা আমার জানা নেই। আমি তো আবাসনের সঙ্গে যুক্ত নই। পুরসভার আবাসন সংক্রান্ত বিষয়টি দেখেন মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক। বিধি অনুযায়ী নকশা খতিয়ে দেখার পরে তিনিই মেয়র পারিষদদের বৈঠকে রিপোর্ট দেন। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
মলয়বাবুর ছোট ভাই অভিজিৎ ঘটক অবশ্য অনির্বাণ দাসের প্রোমোটারি করার কথা গোপন করেননি। তিনি বলেন, “কাউন্সিলর হওয়ার আগে থেকেই অনির্বাণ নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত। এখনও তিনি সেই কাজ করেন।” আর, অনির্বাণবাবু বলেন, “রাজনীতির কাজের চাপে এই ব্যবসায় এখন বেশি সময় দিতে পারছি না। তবে একেবারে ছেড়ে দেব, তা-ও বলতে পারছি না।” পুর নির্বাচনের আগে তৃণমূল প্রচার করত, আসানসোলে ‘প্রোমোটার-রাজ’ কায়েম করেছে সিপিএম। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে সিপিএমের আসানসোল জোনাল কমিটির সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায়ের টিপ্পনী, “নিজেরা ক্ষমতায় এসে ওরা প্রোমোটারকেই মেয়র পারিষদ করেছে! প্রদেশ কমিটিতেও নিয়েছে। এতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। দলটার নাম তৃণমূল।”
|