আজ মধ্যস্থ-বৈঠক
ফের মাওবাদী ও সিপিএম যোগের ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রীর
খাদ্য ভবনে মাওবাদী পোস্টার, তিনি-সহ ১১ জন মন্ত্রীর নাম মাওবাদীদের ‘খতম তালিকায়’ উঠে আসাকে ‘যৌথ চক্রান্ত’ বলে অভিহিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন কোন দলের ‘যৌথ চক্রান্ত’ তা অবশ্য তিনি স্পষ্ট করে বলেননি। কিন্তু ইঙ্গিত যা দিয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট, তিনি মাওবাদী-সিপিএম যোগসাজসের কথাই বলছেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে তিনি এ ধরনের পোস্টার দেখেননি জানিয়ে মমতার ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য, “পোস্টারের হাতের লেখা দেখে মনে হচ্ছে যৌথ চক্রান্ত। তবে বেশি পাত্তা দিয়ে লাভ নেই।” অর্থাৎ, মমতার ইঙ্গিত মাওবাদীরা বুদ্ধ-সরকারের বিরুদ্ধে ছিল না। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে রয়েছে। বস্তুত, বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মাওবাদী-তৃণমূল যোগসাজস প্রমাণের চেষ্টা করেছিলেন। বিরোধী শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, মমতা ক্ষমতায় এসে তার ‘পাল্টা কৌশল’ নিয়েছেন।
মমতা নিজে এখনও জঙ্গলমহলে শান্তিপ্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী। কিন্তু একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, জঙ্গলমহলে অত্যাচার হলে প্রশাসন ‘চুপ করে’ বসে থাকবে না। সেখানে অভিযানও শুরু হয়েছে। মাওবাদী-মোকাবিলার এই প্রক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। এ দিন সল্টলেকে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজ্যপাল বলেছেন, “মাওবাদী বিষয়ে রাজ্য সরকার এখন যে পদক্ষেপ করছে, তা ঠিক।”
আজ, শনিবার মমতার সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা মাওবাদী-মধ্যস্থদের। তার ২৪ ঘণ্টা আগে জানা যাচ্ছে, সেই আলোচনায় মধ্যস্থরা জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনীর অভিযান বন্ধ রাখার ‘শর্ত’ দেবেন। শান্তি আলোচনা থেকে অব্যাহতি চেয়ে মধ্যস্থরা সরকারকে চিঠি দেওয়ার পর শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে খানিকটা সংশয় তৈরি হয়েছে। সরকার অবশ্য জানিয়েছে, তারা শান্তিপ্রক্রিয়া চালাতে চায়। কিন্তু জঙ্গমলহলে কোনও ‘অশান্তি হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। মমতা নিজেও একাধিকবার বলেছেন, “শান্তি আলোচনা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।” তবে মধ্যস্থতাকারীদের এক মুখপাত্র এদিন জানান, মুখ্যমন্ত্রী আর আলোচনা না-চালানোর কথা জানিয়ে দিলে কোনও প্রশ্ন উঠবে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বললে মধ্যস্থতাকারীরা অভিযান বন্ধের ‘শর্ত’ দেবেন। ওই মুখপাত্রের কথায়, “আলোচনা ও অভিযান যে একসঙ্গে চলতে পারে না, তা আমরা আগেই বলেছি।” তিনি আরও জানান, জঙ্গলমহলে মাওবাদী-সহ যাদের হাতে অস্ত্র আছে, তাদের অস্ত্র সংবরণের কথাও বলা হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁদের ইঙ্গিত স্পষ্টই মাওবাদীদের বর্ণিত ‘ভৈরব-বাহিনী’র প্রতি। যারা একদা সিপিএমের ‘হার্মাদ-বাহিনী’ থেকে এসে এখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছে বলে মাওবাদীরা বারবার অভিযোগ করছে।
গত তিন দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে লালগড়ের পূর্ণাপানি,
করমশোল, বনিশোল, শালবনির মথুরাপুর, মেদিনীপুর সদর ব্লকের বাগঘোড়া
থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও কার্তুজ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী-সহ ১১ জন মন্ত্রীকে মাওবাদীরা খতম তালিকায় রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডের মাওবাদীরা যৌথ বৈঠক করে ওই খতম তালিকা এবং খতমের নকশা প্রস্তুত করেছে। দু’সপ্তাহের মধ্যেই তারা ওই তালিকা ধরে আঘাত হানার চেষ্টা করবে। যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যৌথ চক্রান্ত চলছে। গড়বেতা-কেশপুরের ঘটনার সময়েও আমার এই সন্দেহ ছিল। কে মার্ক্স, কে মাও আমি বুঝতে পারি না। আমি মতাদর্শটাও বুঝতে পারি না। কারা আজ মার্ক্স আর কাল মাও, তা-ও বুঝতে পারি না।” তাঁর আরও মন্তব্য, “যারা তর্ক-বিতর্ক করতে, রাজনৈতিক লড়াই লড়তে ভয় পায়, তারাই কখনও এখানে বসে, কখনও দিল্লিতে বসে চক্রান্ত করছে!” মমতার এই মন্তব্য থেকে রাজনৈতিক শিবির তথা তৃণমূলের একাংশের ধারণা, তিনি মাওবাদী-সিপিএম যোগসাজসের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। প্রশ্নের জবাবে মমতা এ-ও বলেন, তাঁর কাছে এই ধরনের কিছু ‘তথ্য’ আছে। দিল্লির কাদের কথা তিনি বলছেন? কোনও ব্যক্তি? না কি দল? না সরকার? মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, “অবশ্যই রাজনৈতিক দলের কথা বলছি। দুটো দলের নাম বললাম না। পরে প্রয়োজন হলে জানাব।” তবে এরই পাশাপাশি মাওবাদী এবং সিপিএমের সঙ্গে বাকি বামপন্থীদের বিভাজন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মমতার মন্তব্য, “আমি বামপন্থীদের শ্রদ্ধা করি। কিন্তু কারা আজ মার্কস আর কাল মাও, তা-ই বুঝতে পারি না।”
খাদ্য ভবনে মাওবাদী পোস্টার পড়া নিয়ে তদন্ত হবে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খাদ্য দফতরের কোনও কর্মীরই হাত আছে। তিনি নিশ্চয়ই ওখানকার ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত। এবং সেটা নিশ্চয়ই তৃণমূলের বা অন্য জাতীয়তাবাদী ইউনিয়ন নয়। নিশ্চয়ই যারা আমাদের সম্পূর্ণ বিরোধী, তাদেরই ইউনিয়ন।” এই প্রসঙ্গে মমতা ফের মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত কলকাতাবাসীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “কয়েক জন মহাকরণে কাজ করেন। যাদবপুরে কিছু অতি বাম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে। যারা বিদেশি অর্থ সাহায্য নিয়ে মেসেজ (এসএমএস), নাটক ইত্যাদি করে। বিদেশ থেকে পাওয়া টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে রাখে আর খুনের রাজনীতিতে ব্যবহার করে।” মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “খাদ্যমন্ত্রী খাদ্য পৌঁছচ্ছেন। শিশির অধিকারী গ্রামীণ উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। শুভেন্দু অধিকারী সভা করছে। মুকুল রায় সকাল থেকে রাত মানুষ এবং সংগঠনের জন্য দৌড়ে বেড়াচ্ছে। এঁদের সকলের মুণ্ডু চাই! কারা এ সব বলছেন? সেই মুখগুলি দেখতে চাই।” পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, মাওবাদীরা যতই হুমকি দিক, তাঁর সরকার মানুষের সুরক্ষা, বাংলায় শান্তি ফেরানো, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, কৃষি-শিল্পের উন্নতির কাজ থেকে সরবে না। মমতা বলেন, “১৯৯০ সালে আমাকে খুনের চক্রান্ত হয়েছিল। গার্ডেনরিচ, যাদবপুর, হাজরা সর্বত্রই হয়েছে। আমি অনেক সংগ্রাম করে এখানে পৌঁছেছি। আজ বা কাল মরতে তো হবেই! আমার ও সব হুমকিতে কিছু যায় আসে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.