কাল সেই চিরন্তন লড়াই ইস্ট-মোহনে
বন্ধুত্বের সভার পাশেই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, চিঠির যুদ্ধ ও মারপিট
ড় ম্যাচের আটচল্লিশ ঘন্টা আগে মোহনবাগান তাঁবুতে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা হাজির।
অভিনব দৃশ্য। আরও অভিনব, এই ম্যাচের ম্যানেজার্স মিটিং হল মোহনবাগান তাঁবুতে।
মোহনবাগান তাঁবুতে ইস্টবেঙ্গলের বেশ কিছু সমর্থককে দেখা গেল, লাল-হলুদ গ্যালারির টিকিটের খোঁজ করতে।
এই প্রথম বড় ম্যাচ কোনও বড় ক্লাব আয়োজন করায় নানা বিচিত্র দৃশ্যর সাক্ষী থাকছে ময়দান। মোহনবাগান তাঁবুতে ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজারের সঙ্গে সবুজ-মেরুন কর্তাদের হাসিঠাট্টা হল। পাশে ম্যাচ কমিশনার জন ডি’কস্টা, রেফারিরা সবাই হাজির।
এই হাসিঠাট্টার মধ্যে টেনশনের মারাত্মক চোরাস্রোত বড় ম্যাচ ঘিরে। যার ফলে মোহনবাগান কর্তারা রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীকে এক চাঞ্চল্যকর চিঠিতে জানিয়েছেন, বড় ম্যাচ ষড়যন্ত্র করে ভণ্ডুল করে দেওয়া হতে পারে। চিঠির যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে দুই ক্লাবের সচিবে। যা বিরল। মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র ক্রীড়ামন্ত্রীকে লিখেছেন, “দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর হল, আমাদের বড় ম্যাচ আয়োজনের ব্যবস্থা বানচাল করার ষড়যন্ত্র চলছে। ম্যাচের আগে, পরে বা মাঝে ‘ফ্লাডলাইটে গণ্ডগোল’ করা হতে পারে। আমাদের সাংগঠনিক দক্ষতাকে ছোট করার জন্য। কিছু নির্দিষ্ট লোক, গোষ্ঠীর তরফে অসহযোগিতা হতে পারে।” মন্ত্রীর কাছে মোহন সচিবের আর্জি, “ম্যাচটা যাতে ভাল ভাবে হতে পারে, তার জন্য আপনি নিজে হস্তক্ষেপ করুন।”
বদলে গেল মোহনবাগানের পুরনো লোগো। এ বার
ইস্টবেঙ্গলের মতো সেই লোগোতেও স্পনসরের নাম।
ম্যানেজার মিটিং শেষ করে যখন ইস্টবেঙ্গল কর্তা স্বপন বল মোহনবাগান তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসছেন, তখন তাঁকে প্রশ্ন হল, কেমন ব্যবহার পেলেন? ইস্টবেঙ্গল কর্তা বললেন, “পুরুর থেকে আলেকজান্ডার যেমন ব্যবহার পেয়েছিলেন। রাজার সঙ্গে রাজার ব্যবহার।” বেশ খোশমেজাজেই তিনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মাঠ ছাড়লেন। রেফারিরাও।
এই ঘটনার কিছু আগেই অবশ্য টিকিট বিক্রি নিয়ে বড় ঝামেলা হল ইস্টবেঙ্গল মাঠে। মোহনবাগানের মতো ভিড় না হলেও ইস্টবেঙ্গল মাঠে লাইন পড়েছিল টিকিটের। সেখানে দুটো জায়গায় টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। এক জায়গায় মোহনবাগানের লোকেরা বিক্রি করছিলেন। অন্য জায়গায় ইস্টবেঙ্গলের লোকেরা, আইএফএর কাছ থেকে পাওয়া টিকিট। মোহনবাগান কর্মীরা এসে ক্লাবে বলেন, “এক দল লাল-হলুদ সমর্থক এসে টিকিট কেটে সেগুলো নষ্ট করে দেন টিকিটের রং সবুজ-মেরুন বলে। মোহনবাগানের দুই কর্মীকে হেনস্থা করা হয়। ধাক্কাধাক্কি চলে। আমরা চলে এসেছি।” মোহন সচিব এ নিয়ে প্রতিবাদ করে চিঠি দিলে ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার রাতে কড়া জবাব দেন তাঁকে। লেখেন, “সম্পূর্ণ মন গড়া গল্প। আপনাদের কারও সঙ্গে আমাদের ক্লাবে ঝামেলা হয়নি। অভিযোগ করার আগে ভাল করে তদন্ত করুন। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রধান দুটো ক্লাবের সম্পর্ক ভাল হবে না।”
চিঠি যুদ্ধের পাশে টিকিট নিয়ে টানাপোড়েন সারা দিন ধরে চললই। রাতে মোহনবাগান মাঠে দাঁড়িয়ে ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজার বলে গেলেন “টিকিট নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই।” কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের অন্য কর্তারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলছেন, অনেক কম টিকিট দেওয়া হয়েছে তাঁদের। মোহনবাগানের পক্ষ থেকে এর পরে টিকিট নিয়ে দুই সচিবের সব ই-মেল প্রকাশ করে দেওয়া হয় সাংবাদিকদের। যুদ্ধ চলছেই।
ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা এতটাই যে, মোহনবাগান কর্তাদের আশা, এক লাখের কাছাকাছি লোক হবে আবার যুবভারতীতে। ইস্টবেঙ্গলের প্র্যাক্টিসে ইপিএলের দুই প্রাক্তন তারকা, টিভি বিশেষজ্ঞ জন বুরিজ ও কার্লটন পামের ছিলেন অনেকক্ষণ। মোহনবাগান মাঠে আবার দেখা গেল বিদেশি সাংবাদিককে। বড় ম্যাচ নিয়ে লিখতে এসেছেন। এক প্রবীণকে দেখা গেল ১৯২৪ সালের সদস্য কার্ড নিয়ে ঘুরতে। তাঁর বাবার সদস্য কার্ড। ফেডারেশনের তরফে ম্যাচ উপলক্ষে ফুটবল-আড্ডা বসছে এক পাঁচতারা হোটেলে।
যুদ্ধং দেহি মনোভাবের মধ্যে দুই ক্লাব অবশ্য ব্যস্ত ছিল স্পনসরদের নিয়ে। ইস্টবেঙ্গল এ দিনই রোজভ্যালি গোষ্ঠীকে অন্যতম কো-স্পনসর ঘোষণা করে দিল। মোহনবাগান কর্তারা রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাল, তাদের ক্লাবের লোগো বদলে গিয়েছে। পালতোলা নৌকোর উপরে ‘ম্যাকডাওয়েল মোহনবাগান’ লেখা নতুন লোগোতে স্পনসরদের অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের লোগোতে কিং ফিশারের নাম জুড়ে গিয়েছে বহু দিন। এ দিন সঙ্গী হল মোহনবাগান।
কর্তাদের চোখ স্পনসরে, সমর্থকদের চোখ কোথায়? রেফারিদের তালিকায়। এ দিন ম্যানেজার মিটিংয়ে রেফারিদের মুখগুলো দেখা গেল মোহনবাগান মাঠে। সেখানে আছেন দেশের সেরা ফিফা রেফারি প্রতাপ সিংহ। মেসি-ম্যাচের রেফারি রোয়ান। সঙ্গে রবি সিংহ, সাজি কুরিয়ান। দুই ক্লাবের চোখে বিতর্কিতরা কেউ নেই। অভিজ্ঞতার বিচারে প্রতাপ বা রোয়ানেরই দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি রবিবারের ডার্বি পরিচালনার। যিনিই রেফারি হোন, তাঁকে গ্যালারির এক লাখ লোকের চিৎকার সামলাতে হবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.