তাঁর রথের চাকা যেন না থামে, আর্জি আডবাণীর
টত্রিশ দিন ধরে তেইশটি রাজ্য, চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার ঘুরে আগামিকাল, রবিবারে দিল্লিতে এসে থামবে লালকৃষ্ণ আডবাণীর দুর্নীতি-বিরোধী জনচেতনা রথ। ‘রথযাত্রী’র এ দফার যাত্রায় ইতি। কিন্তু তার পর সেই রথের কী হবে?
সেই ১৯৯০ সাল থেকে রথে চড়ছেন বিজেপির এই প্রবীণ নেতা। আডবাণীর মতে, এর আগে তিনি পাঁচটি রথযাত্রা করেছেন। কিন্তু কোনও বারই তাঁর রথটিকে সে ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। এ বারে তিনি দল এবং সঙ্ঘকে প্রস্তাব দিয়েছেন, যাত্রা শেষ হওয়ার পরেও প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ করে বানানো বিশেষ ‘রথ’টিকে যেন নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। দল সেই প্রস্তাব গ্রহণও করেছে।
এ বারের রথটির বিশেষত্ব কী? বস্তুত একটি বাসকে ‘রথে’ পরিণত করা হয়েছিল আডবাণীর এ বারের যাত্রার জন্য। একদিকে সেটি যেমন দীর্ঘ সময় ধরে চলার উপযোগী, তেমনই আরামদায়কও বটে। রথটিতে একটি লিফট রয়েছে, যাতে চড়ে সোজা বাসের মাথায় ওঠা যায়। কোনও বড় জনসভার পরিবর্তে রাস্তার ধারের ছোট জমায়েতে সেখান থেকেই বক্তৃতা করা যায়। বাসের মধ্যেই রয়েছে টেলিভিশন (যেটি স্যাটেলাইটে সংযোগে চলে)। রয়েছে খাওয়ার গরম করার ব্যবস্থাও। বাসটির পিছনের দিকে একটি বাথরুমও রয়েছে। একটি সাধারণ বাসে এত রকম ব্যবস্থা তৈরি করতে গিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আডবাণীর কথায়, “দল এই খরচ বহন করেছে। ফলে দলের কাছে এটি একটি সম্পদ। আর সামনে একের পর এক রাজ্যে নির্বাচন। দলের বিভিন্ন নেতারা প্রচারে বেরোবেন। এই বাসটিকে অনায়াসে সেই কাজে ব্যবহার করা যায়।”
বিলাসবহুল দুর্নীতি-বিরোধী জনচেতনা রথে আডবাণী। —নিজস্ব চিত্র
আডবাণীর রথযাত্রা শেষ হওয়ার পরেই শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। আডবাণীর যাত্রার ‘সাফল্য’কে পুঁজি করে সংসদে সরব হবে বিজেপি। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের কাছে এখন অন্য চিন্তা। লোকসভা নির্বাচনের এখনও প্রায় আড়াই বছর বাকি। ফলে সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেও আডবাণীর যাত্রার সাফল্যকে জিইয়ে রাখতে হবে। দিল্লিতে দলের সদর দফতরে আডবাণীর যাত্রার সংযোজকের ভূমিকা পালন করছেন ভূপেন্দ্র যাদব। তাঁর মতে, “উত্তরপ্রদেশের বারাণসী বা হরিয়ানার সিরসা ছাড়া সর্বত্র ভালো সাড়া মিলেছে। এমনকী তামিলনাড়ু বা কেরলের মতো রাজ্যে, যেখানে বিজেপির তেমন দাপট নেই, সেখানেও মানুষের ঢল নেমেছে। অনেক রাজ্যের নেতারা বলছেন, এমন জনসমাবেশ বহু বছর হয়নি। ফলে আডবাণীর রথযাত্রাকে ঘিরে স্থানীয় স্তরের নেতারাও নিজেদের সংগঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন। এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ এই মনোবল ধরে রাখা।”
তবে এর অন্য দিকও রয়েছে। যাত্রাপথে দুর্নীতি নিয়ে কড়া অবস্থান নিতে গিয়ে দলের মধ্যে বিভাজন ফুটে উঠেছে। আডবাণী গোড়া থেকেই কর্নাটকের ইয়েদুরাপ্পার দুর্নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করে আসছেন। যখন তাঁর রথ বেঙ্গালুরুতে পৌঁছয়, তখন ইয়েদুরাপ্পা-ঘনিষ্ঠ এগারো জন মন্ত্রী সেই সভায় আসেননি। এখন জেল থেকে জামিন পাওয়ার পরে ইয়েদুরাপ্পা দলকে ফের বেগ দিতে শুরু করেছেন। শ্রীরামালুর মতো বিজেপি নেতা উপনির্বাচনে নির্দল হিসাবে দাড়াচ্ছেন আর ইয়েদুরাপ্পা তাঁকে সমর্থনে প্রচার করার কথাও জানিয়েছেন। ফলে কেন্দ্রকে চাপে ফেলার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে দলের সঙ্কট, নেতৃত্বের লড়াইয়ে লাগাম কষাও এখন বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই সব বিষয়কে মাথায় রেখেই দলের নেতাদের রাজ্যে-রাজ্যে সফরে বেরোনোর প্রস্তাব দিচ্ছেন আডবাণী। আর সে কাজে এই রথটিকে ব্যবহারের পরামর্শও দিচ্ছেন। বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীরও এই প্রস্তাবে সায় রয়েছে। তিনিও চান, দলের নেতারা শুধু মাত্র দিল্লিতে বসে না থেকে রাজ্যে-রাজ্যে যান। সেখানে দলের নেতা ও তৃণমূল স্তরের কর্মীদের সঙ্গে দেখা করুন। এটিকে দলীয় কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবেই নেওয়া প্রয়োজন। দলের এক নেতার কথায়, “সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির মতো নেতারা এখন বিভিন্ন রাজ্যে সফর করছেন। আডবাণীর যাত্রার সময়েও তাঁরা বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েছেন। সভা করেছেন। এ বারে রথে চড়েই সফর করতে পারবেন। আডবাণীর মতোই এ বারে অনেকে ‘রথযাত্রী’ হবেন!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.