চালে সাদা দাগ রেশনে, দায় এড়াচ্ছেন খাদ্যকর্তা
টানা দু’মাস ধরে গণবণ্টন ব্যবস্থায় নিম্নমানের চাল দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ বর্ধমানের রেশন ডিলারদের। যদিও খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের কর্তারা তা মানতে রাজি নন।
গত ২৪ অক্টোবর জেলার রেশন ডিলারদের চারটি সংগঠনের তরফে একযোগে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণবণ্টন ব্যবস্থার সমাধানের জন্য আবেদনপত্র’ জমা দেওয়া হয়েছিল জেলা খাদ্য নিয়ামকের কাছে। তাতে অভিযোগ করা হয়েছিল, ‘বর্তমানে রেশনে সরবরাহ করা চালের মান খুবই নিম্নমানের। সেই কারণে এম আর ডিলারগণ উপভোক্তাদের বিভিন্ন কটূক্তি ও ক্ষোভের সম্মুখীন হইতেছেন।’’
কিন্তু এর পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে ১৬ নভেম্বর চার সংগঠনের তরফে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে রেশনে যে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে তা অতি নিম্নমানের। যা খাওয়ার অযোগ্য। ফলে এই খারাপ অখাদ্য চাল সরবরাহের জন্য রেশন ডিলারদের প্রায়শই গ্রাহকদের কাছে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে।”
জেলা খাদ্য নিয়ামক রাজু মুখোপাধ্যায় অবশ্য দু’মাস ধরে খারাপ চাল সরবরাহের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, রাজ্যের পরিদর্শন ও মান নির্ধারণ দফতরের অফিসারেদের দিয়ে ওই চালের মান পরীক্ষা করানো হয়েছে। তাঁরাও ওই চাল ‘উপযুক্ত মানের’ বলে শংসাপত্র দিয়েছেন। গ্রাহকদের কাছ থেকেও কোনও অভিযোগ মেলেনি। তাঁর মতে, “রেশনের ডিলারেরা অহেতুক চাল নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন।”
কিন্তু বহু রেশন গ্রাহকই চালের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। আলুডাঙার গোপাল বিশ্বাস, সদরঘাটের হেমন্ত জানাদের ক্ষোভ, “এমনিতেই রেশনে নিম্নমানের চাল দেওয়া হয়। ফলে অনেক সপ্তাহে চাল ছেড়ে দিতে হয়। ইদানীং তো চালের রঙই কেমন খড়ির মত। ওই চাল খেলে যে পেটের অসুখ হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?” খাদ্য নিয়ামকের বক্তব্য, “চালটা একটু পুরনো হয়ে গিয়েছে। তাই চালের গায়ে সাদা খড়ির মতো দাগ দেখা যাচ্ছে। জলে ধুলেই চলে যাবে। ওই চাল খেলে পেটের রোগ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।”
ঘটনা যা-ই হোক, রেশন ডিলারেরা ‘গণরোষের শিকার’ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক পরেশনাথ হাজরার আক্ষেপ, “খারাপ চাল আসায় গ্রাহকেরা ডিলারদের গালিগালাজ করছেন। এপিএল তো বটেই, বিপিএল তালিকার গ্রাহকদের জন্যও বরাদ্দ গম মিলছে না গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের না শেষে গণরোষের শিকার হতে হয়!” অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামী ১২ ডিসেম্বর সরকারি গুদাম থেকে খাদ্যসামগ্রী তুলবেন না বলেও তাঁরা হুমকি দিয়েছেন।
চালের মান প্রসঙ্গে রাজুবাবুর বক্তব্য, “গত ডিসেম্বরে লেভি হিসেবে চালকলগুলির কাছ থেকে এই চাল মিলেছিল। প্রায় এক বছর গুদামে পড়ে থাকায় সাদা দাগ ধরেছে। এই চালের বড় অংশই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের নানা এলাকায় পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারের তা যত দ্রুত করার কথা, তিনি তা করেননি। তাই আমাদের জেলার মোট ২৫টি গুদামে ডিসেম্বরে জমা পড়া প্রায় ৭০ হাজার টন চালের মধ্যে ৫৭ হাজারই জমে রয়েছে। পুরনো চাল জমে থাকায় নতুন চাল গুদামে রাখা যাচ্ছে না।”
যে ঠিকাদারের কারণে এই বিপত্তি, তাঁর বিরুদ্ধে কিন্তু কোনও ব্যবস্থাও নেয়নি খাদ্য দফতর। রাজুবাবুর যুক্তি, “উনি কাজটা একেবারে করেননি তা তো নয়। যে গতিতে করার কথা ছিল, তা করা হয়নি।” সেই গাফিলতির দায় কে নেবে, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। ঠিকাদার পরিবর্তন নিয়েও কোনও ভাবনা-চিন্তার কথা জানা যায়নি। তবে রেশনে দ্রুত গম সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে বলে খাদ্য নিয়ামক আশ্বাস দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.