উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
সঙ্কট চলছেই
জল গড়ায়নি
ময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে দু’বছর হল। কিন্তু বরাহনগরের তৃতীয় জল প্রকল্পের কাজ অর্ধেকও হল না। ফলে বরাহনগর পুর-অঞ্চলের জলকষ্টের ছবিটাও পাল্টায়নি।
বরাহনগরের কোথাও মাটি খুঁড়ে প্রায় পাঁচ ফুট গভীরে বালতি, হাঁড়ি বসিয়ে জল সংগ্রহ করতে হয়। কোথাও গভীর নর্দমার উপরের জলের পাইপই ভরসা। কোথাও প্রতি দিন পুরসভাকে জলের গাড়ি পাঠাতে হয়। অনেকে জলকষ্ট থেকে বাঁচতে পাম্প বসিয়েছেন। ফলে জলস্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এই সমস্যা মেটাতেই ২০০৩-এ বরাহনগর পুরসভা তৃতীয় জলপ্রকল্পের চিন্তাভাবনা শুরু করে। প্রকল্পের জন্য বরাহনগর জুট মিলের ভিতরে জায়গা বেছে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘মউ’ স্বাক্ষর করে পুরসভা। ‘মউ’ অনুযায়ী জুট মিলের নিজস্ব জলপ্রকল্পের পরিকাঠামো ব্যবহারের অনুমতি পায় বরাহনগর পুরসভা। ঠিক হয়, এর বদলে পুরসভা বিনামূল্যে মিলের প্রয়োজনীয় পানীয় জল সরবরাহ করবে। পুরসভা সূত্রে খবর, খরচ কম হওয়ার আশায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৪ ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে গঙ্গা থেকে জল আসবে জুট মিলের নিজস্ব পাম্প হাউসে। কয়েকটি পর্যায়ে পরিশোধনের পরে জল জমা হবে চার মিটার গভীর জলাধারে। তার পরে তা এলাকায় সরবরাহ করা হবে। ২০০৭-এ কাজ শুরু হয়। কথা ছিল ২০০৯-এর মধ্যে শেষ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বরাহনগর পুর এলাকায় প্রতি দিন জল সরবরাহের পরিমাণ দু’লক্ষ গ্যালন বাড়ত। এতে ঘাটতি অনেকটাই মিটত বলে পুরসভার দাবি।
পুরসভা সূত্রে খবর, জলাধার তৈরি-সহ যাবতীয় পরিকাঠামো পুরসভা তৈরি করবে বলে ঠিক হয়েছিল। মোট চার কোটি টাকার প্রকল্পের আর্থিক দায়িত্ব সমান ভাবে পুরসভা ও কেএমডিএ-এর মধ্যে ভাগ হবে। এর মধ্যেই কেএমডিএ-র এক কোটি এবং পুরসভার প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
বরাহনগর পুরসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা সিপিএম-এর অশোক রায় বলেন, “আগের জল প্রকল্পের কিছু ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে তৎকালীন পুরবোর্ড পুরসভার দায়িত্বেই কাজটি করতে চেয়েছিল। সেই সময়ে একমাত্র চন্দননগর পুরসভা সফল ভাবে নিজস্ব জল প্রকল্পের কাজ করছিল। সেই কাজের দায়িত্বে থাকা সংস্থাকেই এই তৃতীয় জলপ্রকল্পের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর পরে নির্বাচনী ডামাডোলে কাজ থমকে যায়। তবে বর্তমান বোর্ডেরও সদিচ্ছার অভাবে রয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জল) রামকৃষ্ণ পাল বলেন, “আগের বোর্ড প্রচুর দেনা রেখে গিয়েছে। অনেক কাজ বাকি। কেএমডিএ-র সক্রিয় সাহায্য ছাড়া কাজ শেষ করা যাবে না।”
বরাহনগর পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অপর্ণা মৌলিক বলেন, “পুরসভার পক্ষে নতুন করে টাকা খরচ করা সম্ভব নয়। কেএমডিএ-কে সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে কথা শুরু হয়েছে। যে সংস্থাটি কাজ করছিল তারা পুরসভায় কোনও প্ল্যান জমা দেয়নি। কেএমডিএ-ও পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট নয়। নতুন করে কাজ শুরু করতে সময় লাগবে।”
কেএমডিএ-র ডিজি (জল সরবরাহ) রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বরাহনগর পুরসভা আমাদের কাজটি করতে অনুরোধ করেছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ভূগর্ভস্থ জলাধার ছাড়া কিছুই তৈরি হয়নি। বাকি কাজ আমাদের করতে হবে। খরচ পড়বে প্রায় চার কোটি টাকা। অর্থের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.