মাওবাদীদের হুমকি উড়িয়ে পাল্টা ‘লড়াইয়ের’ ডাক দিল জঙ্গলমহল
স্নায়ুযুদ্ধের তীব্রতা বাড়ানোয় কসুর করেনি মাওবাদীরা। সে ‘চাপে’ নতি স্বীকার করল না বেলপাহাড়ি। মঞ্চে নেতা। নীচে জনতা। ভয় না পেয়ে পাল্টা ‘চ্যালেঞ্জ’ জানানোয় এককাট্টা।
অস্ত্র সমর্পণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া তো দূর, মাওবাদীরা উল্টে সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী কী চান তা লিখিত জানাতে বলেছে। শান্তি-আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রীর ‘আন্তরিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কড়া সমালোচনা করেছে তাদের সঙ্গে সরকারপক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীদের। বেলপাহাড়িতে মঙ্গলবার জেলা যুব তৃণমূলের সমাবেশে না যাওয়ার ডাক দিয়ে গত কয়েক দিন ধরে জঙ্গলমহলের গ্রামে গ্রামে মিলেছে তাদের নামাঙ্কিত পোস্টার। এ দিন সকালে তো বিনপুরের মালাবতীর জঙ্গল-রাস্তার ধারে প্লাস্টিকের ব্যাগ, ব্যাটারি, বোতল ও কৌটো রেখে মাইন-আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু পুলিশের হিসেব বলছে, বেলপাহাড়ি ব্লক-ময়দানের তৃণমূলের সমাবেশে এ দিন হাজির ছিলেন প্রায় হাজার পনেরো লোক। হয়তো সে জনই মাওবাদীদের ‘ধাত্রীভূমি’ বলে পরিচিত বেলপাহাড়িতে দাঁড়িয়ে মাওবাদীদের ‘জঙ্গলমহল ছাড়া’ করার ডাক দিলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, “আমরা দলীয় ভাবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক লড়াই করব। মাওবাদীদের এলাকাছাড়া করব।”
বেলপাহাড়ির ব্লক অফিস সংলগ্ন মাঠে তৃণমূলের সভা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
বেলপাহাড়িতে তৃণমূলের শেষ সভাটি হয়েছিল গত বছর অক্টোবরে। সেই সভাতেও মুখ্য বক্তা ছিলেন শুভেন্দু। গত বছর সেখানে সাকুল্যে হাজার দেড়েক লোক হয়েছিল। এ দিনের সমাবেশে শুভেন্দু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা-সহ রাজ্য ও জেলাস্তরের বেশ কয়েক জন নেতানেত্রী। কিন্তু এই সমাবেশে যেতে নিষেধ করে মাওবাদী-হুমকি থাকলেও তা উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকী, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা থেকেও লোকজন এসেছিল। জমায়েত দেখে দৃশ্যতই উচ্ছ্বসিত ছিলেন শুভেন্দুবাবু, মুকুলবাবুরা।
আগামী ১২ নভেম্বর ঝাড়গ্রামের আগুইবনি থেকে বিরিহাঁড়ি পর্যন্ত পদযাত্রা এবং ১৮ নভেম্বর সাঁকরাইলের রগড়ায় সমাবেশের ডাক দিয়ে শুভেন্দু এ দিন বলেন, “শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে লড়াই শুরু হল। দেখি, মাওবাদীদের কত সাহস!” গত ২২ অক্টোবর মাওবাদী-বন্ধের মধ্যেও পুলিশে চাকরির আবেদনপত্র নিতে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন থানায় তরুণ-তরুণীদের দীর্ঘ লাইনের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর ঘোষণা, “মাওবাদী-হার্মাদবাদীরা এ বার কাঁদবে। আমরা লড়াইয়ে জিতব।” প্রসঙ্গত, ওই ২২ তারিখে বন্ধ উপেক্ষা করে গোয়ালতোড়ের পিংবনির সভাতেও শুভেন্দু ‘প্রতিরোধের পথে মাওবাদীদের উৎখাতে’র ডাক দিয়েছিলেন।
সমাবেশে মাওবাদীদের এ দিন কার্যত ‘তুলোধোনা’ করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “জঙ্গলমহলে কৃত্রিম ভাবে অস্থিরতার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। ওরা একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়।” “মাওবাদীদের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে অনিল মাহাতোর (বাঁশপাহাড়ির এক সিপিএম নেতা) মতো লোকেরা এলাকায় অশান্তি ছড়াচ্ছেন’’, বলেও অভিযোগ করেন তিনি। মাওবাদীদের সঙ্গে জনসমর্থন নেই বোঝাতে তাঁর মন্তব্য, “ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে ছত্রধরকে (জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতো) দাঁড় করিয়েও ওরা সুবিধে করতে পারেনি।” যুবনেতার দাবি, “ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমেই জঙ্গলমহলে শান্তি আসবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সেই শান্তি ও উন্নয়নের রূপকার।”
আক্রমণাত্মক শুভেন্দু।-নিজস্ব চিত্র
সমাবেশে মাওবাদীদের এলাকাছাড়া করার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি, শুভেন্দু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করা হবে না।” বস্তুত, জঙ্গলমহলে প্রশাসনের থেকে দলকে আলাদা রাখতে তৃণমূল নেতৃত্বের ‘সচেতন প্রয়াস’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে সাংসদের এই মন্তব্যকে। আগাগোড়া ‘উচ্চগ্রামে’ বাঁধা সমাবেশে মুকুলবাবুও বলেন, “লালমোহন মাহাতো, রবীন্দ্রনাথ মিশ্রদের (গত দু’-আড়াই মাসের মধ্যে নিহত ঝাড়গ্রামের দুই তৃণমূল নেতা) খুন করাটা কী ধরনের শ্রেণি সংগ্রাম! ব্যক্তিহত্যার মধ্যে বিপ্লব কোথায়!” মাওবাদীদের ‘চ্যালেঞ্জ’ জানিয়ে তাঁরও বক্তব্য, “মানুষকে না চমকে-ধমকে রাজনৈতিক লড়াই করুন। আপনাদের মতাদর্শগত বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনায় আসুন। কারও চোখ রাঙানিকে কিন্তু আমরা ভয় পাই না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.