গতির আগুনে সচিনের জন্য নিয়ম ভাঙলেন শুমাখার
মার মেয়েকে তোমার সঙ্গে একটা ছবি তুলতে দেবে?
মেয়ের বাবার বিনীত এই আবেদনটা শুনেই হেসে কিশোরীর সঙ্গে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন অন্য জন।
ক্যামেরা হাতেই ছিল অঞ্জলি তেন্ডুলকরের। পটাপট ছবি তুলে নিলেন মাইকেল শুমাখার আর সারা তেন্ডুলকরের। এর পর শুমাখার নিজেই সরে এসে দাঁড়ালেন অঞ্জলি আর সারাকে পাশে নিয়ে। ছবি উঠল।
গদগদ হাসি মুখে সাদা শার্ট আর জিনসের সচিন তেন্ডুলকর তখন দর্শকের ভূমিকায়।
মার্সিডিজ পিটের ঠিক উল্টো দিকে তাদের টিম বিল্ডিংয়ে সচিন-শুমাখার দেখা হতেই হেসে দু’জনে দু’জনের দিকে বাড়িয়ে দিলেন হাত। আন্তরিক করমর্দন। প্রথমেই স্মৃতির পাতা ওল্টানো। কত বছর পরে দেখা হচ্ছে তাই নিয়ে। ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা জিজ্ঞাসা করলেন, “ভারতে আসার অভিজ্ঞতা কেমন?” শুমাখার বললেন, “ইটস বিন গ্রেট!” এ বার জার্মান কিংবদন্তির পালা। “তোমার সব কেমন চলছে?” সচিন বললেন, “ইটস গোয়িং গুড।”
দু’জনের থেকেই মাথায় অনেকটা লম্বা, রস ব্রন পাশে দাঁড়িয়ে হাসছেন। ফেরারিতে শুমাখারের সাফল্যের পিছনে চিফ ইঞ্জিনিয়ার ব্রনের গাড়ি পরিকল্পনার একটা বড় হাত ছিল, মেনে নেন সকলেই। সেই পুরনো জুটি এখন মার্সিডিজে। সচিন নিবিষ্ট ভাবে কথা বললেন তাঁর সঙ্গেও। পাঁচ জনের বৃত্তটা সম্পূর্ণ করলেন অঞ্জলি আর সারা। কিশোরী তেন্ডুলকরের চোখেমুখে প্রত্যাশা ভরা অপেক্ষা। সেটা দেখেই সচিনের প্রশ্ন, “আমার মেয়ে তোমার সঙ্গে একটা ছবি তুলতে পারে?”
ইতিহাসের কোলাজ
সচিনের হাতে চেকার্ড ফ্ল্যাগ। ছবি: এএফপি
শুধু ছবি তোলা নয়, সারার সঙ্গে কথাও বললেন শুমাখার। পরে, রেসে শুরুর আধ ঘণ্টা আগে পিট লেনের সামনে সেলিব্রিটিদের ধাক্কাধাক্কি এড়িয়ে সারা একা একটু আড়ষ্ট আর হকচকিয়েই। শুমাখার তোমাকে কী বললেন? প্রশ্নটায় লাজুক হেসে সচিনের মেয়ের জবাব, “বললেন, আমার মেয়েও প্রায় তোমারই বয়সি।” সারার সহজ স্বীকারোক্তি, “আমি ফর্মুলা ওয়ান বুঝি না। টেনিস খেলি।”
মিনিট আঠারো মার্সিডিজের টিম বিল্ডিংয়ে সচিন আর সারা-অঞ্জলির সঙ্গে কাটিয়ে হাত নেড়ে বেরিয়ে গেলেন শুমাখার। সাধারণত যিনি রেসের আগে কারও সঙ্গে দেখা করেন না। কথা পর্যন্ত বলেন না মনঃসংযোগ করতে। সচিনের জন্য ভাঙল নিয়ম। রেস শুরু হওয়ার ঠিক আগে মার্সিডিজের পিটে আবার গিয়ে শুমাখারকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানালেন সচিন। তাতেই কি জাদু হল? ভারতীয় গ্রাঁ প্রি-তে নিজের পুরনো আগুনে ফর্মটা বের করে আনলেন। বারোতম স্থান থেকে রেস শুরু করে পাঁচে শেষ। শুমাখার জিতলেন দশ পয়েন্ট।
ভারতের প্রথম ফর্মুলা ওয়ান রেস শুরুর কত আগে সেখানে এসেছিলেন সচিন? তখনও তিন ঘণ্টার কিছু বেশি বাকি। বলিউডের ভিড় জমা শুরুর বহু আগে পৌঁছে গেলেন সচিন। প্যাডক এরিয়া দিয়ে প্রায় একশো মিটার হেঁটে ফর্মুলা ওয়ান ম্যানেজমেন্ট বিল্ডিংয়ে ফর্মুলা ওয়ান প্রধান বার্নি একলেস্টোনের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন তাঁর বিশেষ অতিথি। যাওয়ার পথে ফেরারি আর শুমাখার ফ্যান বললেন, “আমি এখানে ফোর্স ইন্ডিয়া আর কার্তিকেয়নকে সমর্থন করতে এসেছি। ফর্মুলা ওয়ান রেস আগে অনেক জায়গায় দেখেছি। কিন্তু ভারতীয় রেস ভাবলে অনুভূতিটাই একদম স্পেশাল।” পরে অবশ্য শুমাখারের সঙ্গে দেখা করে রেসের ঠিক আগে ফেরারির প্রাক্তন প্রধান এবং এফ আই এ-র বর্তমান প্রেসিডেন্ট জন টডের সঙ্গে ঢুকে গেলেন ফেরারির পিটে। সেখান থেকে ফোর্স ইন্ডিয়ার পিটে গিয়ে বিজয় মাল্য, সুব্রত রায় আর শাহরুখ খানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন হাসিমুখে।
মারকাটারি গাড়ি-যুদ্ধ। ছবি: এএফপি
একলেস্টোনের সঙ্গে সচিন যখন কথা বলছিলেন, আচমকা ছোটখাটো চেহারার নীল-লাল চেক চেক প্যান্ট আর টুপির এক শুভ্রকেশ ভদ্রলোক ঢুকে এলেন ভেতরে। রেসিং কিংবদন্তি, ‘উড়ন্ত স্কট’ জ্যাক স্টুয়ার্টকে দেখেই শ্রদ্ধায় এগিয়ে এলেন সচিন। পরে স্টুয়ার্টের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে বোঝা গেল, শ্রদ্ধাটা পারস্পরিক। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৩-এর মধ্যে তিন বার ফর্মুলা ওয়ানের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বললেন, “সিলভারস্টোনে পাঁচ বছর আগে ওর সঙ্গে প্রথম দেখা। আমার সম্পর্কে এত কিছু জানে দেখে সত্যিই বিস্মিত হয়ে যাই। পরে কথা বলে ফর্মুলা নিয়ে ওর জ্ঞান আর আগ্রহ দেখে আরও অবাক হই। অসাধারণ ক্রিকেটার। আরও অসাধারণ মানুষ!”
শনিবার রাতেই নয়ডায় জে পি-র গল্ফ আর স্পা রিসর্টে পৌঁছে গিয়েছিলেন সচিন। সেখানে রয়্যাল ব্যাঙ্ক অব স্কটল্যান্ড আয়োজিত এক কুইজ-এ খুদেদের জন্য নামেন কুইজ মাস্টারের ভূমিকায়। স্টুয়ার্ট বলছিলেন, “ও যে ভাবে ব্যাপারটা কনডাক্ট করল, আজ পর্যন্ত কোনও খেলোয়াড়কে আমি তেমনটা করতে দেখিনি।”
সুন্দরীদের রংমশাল। ছবি: পিটিআই
বুদ্ধ সার্কিট সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত কিংবদন্তি চালক। “ফ্যানটাস্টিক সার্কিট। এর থেকে ভাল আর হয় না। যতগুলো নতুন সার্কিট হয়েছে, তার মধ্যে আমার দেখা সেরা।” কিন্তু একটা সার্কিট কি পারবে আন্তর্জাতিক মোটর স্পোর্টসে ভারতকে তুলে আনতে? স্টুয়ার্টের ঝটিতি জবাব, “কাজটা রাতারাতি হবে না।” একটু ভেবে যোগ করলেন, “এখানকার ছেলেরা যত প্রথম সারির চালকদের কাছ থেকে দেখবে তত অনুপ্রাণিত হবে। তাই এ দেশে শুধু ফর্মুলা ওয়ান নয়, আরও অন্যান্য রেসও নিয়ে আসতে হবে, আরও কার্টিং সেন্টার চাই।” আরও স্পষ্ট করে বোঝাতে বললেন, “আচ্ছা বলুন তো ভারতে কতগুলো ক্রিকেটের পিচ রয়েছে?” হেসে নিজেই উত্তর দিলেন, “গোনা সম্ভব নয়, তাই তো?” পিট লেনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে চোখ টিপে বললেন, “এতগুলো পিচ থাকলে তবেই একটা তেন্ডুলকর পাওয়া যায়।”
সচিন তেন্ডুলকরের দেশ থেকে শুমাখার তুলতে হলে কী করা জরুরি, বাতলে গেলেন আর এক কিংবদন্তি।

সচিনের টুইট
...চেকার্ড ফ্ল্যাগ নাড়ানো!!! কী দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা! আর ফ্ল্যাগটা কিনা আমি রেখে দিতেও পারলাম!!!
...দুর্দান্ত সংগঠন। দারুণ ট্র্যাক। দর্শকদের জন্য অসাধারণ সুযোগ-সুবিধা। এফ ওয়ান সত্যি আমাদের সবাইকে একটা স্মরণীয় দিন উপহার দিয়ে গেল...


শুমি বনাম ‘বেবি শুমি’
• দু’জনেরই জন্ম জার্মানির ছোট শহরে। ভেটেলের জন্ম হেপেনহেইমে, শুমাখারের হুর্থে।
• সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা। শুমাখারের বাবা ছিলেন রাজমিস্ত্রি, ভেটেলের বাবা ছুতোর মিস্ত্রি।
• দু’জনেই ফর্মুলা ওয়ানের অভিষেক রেসে সপ্তম হয়ে চমকে দিয়েছিলেন।
• নতুন টিমে যোগ দেওয়ার এক বছরের মধ্যে রেস জিতে সাড়া ফেলে দেন দু’জনে।

• দু’জনেই তৃতীয় মরসুমে ৫ নম্বর গাড়ি চালিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।
• দু’জনেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময় ১০টি করে গ্রাঁ প্রি জিতেছিলেন।
• ভেটেলকে এর পর ‘বেবি শুমি’ বা ‘নতুন শুমাখার’ বলে ডাকা শুরু হয়। যদিও এই তারকার পছন্দের নাম ছিল ‘নতুন ভেটেল’।

শুমাখারের রেকর্ড ভেটেলের রেকর্ড
• সব থেকে বেশি বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব (৭)
• টানা পাঁচ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
• সব থেকে বেশি রেস জয় (৯১)
• এক মরসুমে সব থেকে বেশি জয় (১৩)
• সব থেকে বেশিবার পোডিয়াম স্থান দখল (১৫৪)
• সব থেকে কম বয়সি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
• সব থেকে কম বয়সে গ্রাঁ প্রি জয়
• সব থেকে কম বয়সে পোডিয়াম স্থান দখল
• নাইজেল ম্যানসেলের ১৯ বছরের রেকর্ড দিল্লিতেই ভাঙলেন ৬৯৩টি ল্যাপে এগিয়ে থেকে
• এক মরসুমে সব থেকে বেশি চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট (৩৪৯)

কিংবদন্তিদের চোখে ইন্ডিয়ান গ্রাঁ প্রি
সেবাস্তিয়ান ভেটেল: “সব মিলিয়ে রেসটা দারুণ ছিল। প্রথম ভারতীয় গ্রাঁ প্রিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভীষণ গর্বিত লাগছে।”
জেনসন বাটন: “ভারতের মানুষ আমাদের গ্রহণ করেছে। এত লোককে একসঙ্গে হাসতে কখনও দেখিনি। ট্র্যাকটাও এমন, যেখানে আবার ফিরে আসার দিকে তাকিয়ে আছি।”
ফের্নান্দো আলোন্সো: “প্রথম ইন্ডিয়ান গ্রাঁ প্রিতেই পোডিয়ামে দাঁড়াতে পেরে দুর্দান্ত লাগছে। এখানকার মানুষের উৎসাহেই আমি পোডিয়ামে দাঁড়াতে পারলাম।”
মাইকেল শুমাখার: “ভারতের জন্য আমার তরফে প্রচুর প্রশংসা।”
লুইস হ্যামিল্টন: “ভারতীয়রা দারুণ কাজ করেছে। ট্র্যাকটা দারুণ। আর আমাদের সঙ্গে রাজার মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.