কবিতা-সম্প্রীতির
পুজো তেহট্টে
খন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। এদিকে অচেনা একটি ঘন জঙ্গলের ভিতরে গাড়িও গিয়েছে খারাপ হয়ে। নিরুপায় হয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে দুই তরুণ তরুণী। পথে অন্য কোনও গাড়িও আসছে না। কিন্তু আর একটু পরেই তো বেরিয়ে পড়বে হিংস্র বন্য জীব জন্তুরা। তাহলে উপায় কী? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তাঁরা রাতে থাকার মত একটি আশ্রয় খুঁজতে থাকে। এমন সময় জঙ্গলের ভিতর তাঁরা একটি পোড়ো বাড়ি চোখে পড়ে যায়। রাতে থাকার মত একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়ে দুজনেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। নিশ্চই এই বাড়িতে কেউ না কেউ থাকে। ছেলেটি এগিয়ে গিয়ে দরজা ধাক্কা দেয়। সাড়া মেলে না কারও। আবার দরজা ধাক্কা দিয়ে সে বলে, ‘‘ভিতরে কেউ আছেন?’’ এর পরে কানে আওয়াজ আসে। লাঠি হাতে ঠকঠক করে সিঁড়ি দিয়ে যেন কেউ নেমে আসছে। আওয়াজ করে দরজাটা খুলতেই ভিতর থেকে উড়ে আসে এক ঝাঁক চামচিকে। এর পরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ‘মানুষ’ অতিথিদের স্বাগত জানাতে এক এক করে হাজির হয় নানা আকৃতির ভূত! তারপর? বিখ্যাত ইংরেজ কবি ওয়ালটার ডে লা মেয়ারের ‘দ্য লিসনার’ কবিতার সঙ্গে কিছুটা মিল খুঁজে পেলেও খানিকটা কল্পনাও রয়েছে। বাকীটা দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে করিমপুরের লক্ষ্মীপাড়ায়। আলোকপাত ক্লাবের পরিচালনায় এবারের লক্ষ্মীপুজোর থিম ‘ভৌতিক ডাকবাংলো’। এই পুজো এবার ৫৭ বছরে পা দিল।
প্রতিবারই থাকে নতুন নতুন চমক। তবে উদ্যোক্তাদের দাবি এবারের থিম ও বাজেট আগের সব রেকর্ডকেই ছাপিয়ে যাবে। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অরূপ বিশ্বাস ও সুমন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘দুগা পুজো নয়, লক্ষ্মীপাড়ার মানুষের কাছে সবথেকে বড় উৎসব এই লক্ষ্মীপুজো। সারাটা বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন এলাকার মানুষ। ঘরের ছেলেরা ঘরে ফেরে পুজো উপলক্ষে। টানা ছয় দিন ধরে বসছে বিরাট মেলাও। রবিবার আতস বাজিরও আয়োজন করা হয়েছে। এবার আমাদের পুজোর বাজেট প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।’’
পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা শ্যামাশীষ মণ্ডল কিংবা মন্টু সরকারদের কথায়, ‘‘প্রতিবারই আমরা চেষ্টা করি পুজোটা একটু অন্যরকম ভাবে করার। এর আগে আমরা ‘মানব স্ট্যাচু’ করে সকলকে চমকে দিয়েছিলাম। তবে এবারের থিম একেবারেই আলাদা। টানা ১৫ মিনিট ধরে চলবে ভৌতিক সব কাণ্ড কারখানা। মণ্ডপের একপাশেই তৈরি করা হয়েছে জঙ্গল, পোড়ো বাড়ি, এমনকি গাড়িও শব্দ ও আলোর ব্যবহারও করে গোটা ব্যাপারটা জীবন্ত করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এর জন্য আমরা বাইরে থেকে দক্ষ শিল্পীও নিয়ে এসেছি। দর্শনার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেজন্য আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’
সীমান্তবর্তী তেহট্ট মহকুমায় দুর্গাপুজো থেকেই উৎসবের ধুম লেগে যায়। তেহট্টের কুষ্টিয়া গ্রামে জাঁকজমক করে লক্ষ্মীপুজো হয়। পুজোর পরের দিন প্রতিবারই জলঙ্গিতে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়। দেখতে আসেন দূর দূরান্তের মানুষ। এক এক করে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত চলবে এই উৎসবের মরসুম। আর সীমান্তের যে কোন উৎসব মানেই তাতে অংশগ্রহন করেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ। সীমান্তের শিকারপুর, গোপালপুর, করিমপুর কিংবা তেহট্ট সব দিকেই একই দৃশ্য চোখে পড়বে। হোগলবেড়িয়া থানার গোপালপুরের আরেজুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের এখানে সবাই মিলেই তো লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করি। এটাই এখানকার রেওয়াজ। উৎসবের আবার আলাদা কোন রঙ হয় নাকি?’’
গোপালপুরে লক্ষ্মীপুজো মানে যদি সম্প্রীতি হয় তাহলে তেহট্টের নতিপোতা গ্রামে লক্ষ্মীপুজো মানে আবার ফুটবল। গত ৩৬ বছর ধরে নতিপোতা গ্রামে এমনটাই রেওয়াজ। সেইমত এবারও লক্ষ্মীপুজোর দিনে এক দিনের নক আউট ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে নতিপোতা পারিজাত ক্লাব। ক্লাবের সম্পাদক পুলিশকর্মী অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘বছরের এই একটি দিনে লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে আয়োজিত ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে গোটা গ্রাম রীতিমত উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন এলাকার বেশির ভাগ মানুষ। লক্ষ্মীপুজোর দিন আমাদের গ্রামে কেউ মাঠে যান না। তাহলে সারাদিন ধরে কী করা যায়? এই ভাবনা থেকেই এই খেলা শুরু হয়েছিল। এখন সেই খেলা আকার আয়তনে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। গ্রামের যাঁরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন তাঁরাও এই দিনটাতে গ্রামে চলে আসেন। এবার মোট আটটি দল নিয়ে খেলা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি দলই এসেছিল কলকাতা থেকে। সকাল সকাল পুজো ও বাড়ির কাজ সেরে মহিলারাও মাঠে চলে আসেন খেলা দেখতে। গ্রামের সকলের সহযোগিতাতেই এই খেলার ব্যয়ভার বহন করা হয়।’’
কোথাও ভূত, কোথাও সম্প্রীতি কিংবা ফুটবল, কোথাও আবার নিখাদ পুজোর আনন্দেই মেতে উঠল তেহট্ট মহকুমার সীমান্তছোঁয়া গ্রামগুলি। সৌজন্যে সেই লক্ষ্মীপুজো।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.