নীলরতন রেডিওথেরাপি
অন্য বিভাগ বন্ধ, রবিবার খুলেও বিপাকে বহির্বিভাগ
কিছু দিন আগেও ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুকে কলকাতার হাসপাতালে আনতে হলে এক দিনের মজুরি কাটা যেত বেলপাহাড়ির বাসিন্দা গগন দে-র। ভিড় ট্রেনে দু’বছরের শিশুটিকে আনতে ঝক্কিও পোহাতে হত বিস্তর। কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে গগনবাবুকে আর সেই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। কারণ, কলকাতায় নীলরতন সরকার (এনআরএস) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপির বহির্বিভাগ এখন খোলা থাকছে রবিবারেও।
তাই রবিবারের বহির্বিভাগে গগনবাবুর সন্তানের মতো দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ছুটির দিনেও ভিড় উপচে পড়ছে ওই বহির্বিভাগে। পেশায় গাড়িচালক গগনবাবু বলেন, “রবিবার ছুটি থাকে। এ দিন হাসপাতালে এলে মজুরি কাটা যায় না। ট্রেন-বাসও ফাঁকা থাকে। তাই অসুস্থ বাচ্চাটিকে আনতে এবং ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সুবিধা হয়েছে।” একই কথা গঙ্গাসাগর থেকে আসা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত মাঝবয়সী দেবী দাসেরও। তিনি বলেন, “আমাকে একাই হাসপাতালে আসতে হয়। আগে ‘রে’ নেওয়ার পরে ভিড়ের ট্রেনে ফিরতে খুব অসুবিধা হত। এখন রবিবারে সেই সমস্যা থাকে না।”
রেডিওথেরাপির বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন এক চিকিৎসক। ছবি: দেবাশিস রায়
মূলত গরিবদের কথা ভেবেই গত মার্চ থেকে এনআরএস হাসপাতালে রেডিওথেরাপির বহির্বিভাগ রবিবার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন ওই বিভাগের চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, এ রাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশের কোনও সরকারি হাসপাতালেই এমন নজির নেই।
তবে নতুন একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছুটির দিনে হাসপাতালের ওই বহির্বিভাগে গিয়ে চিকিৎসা পাওয়ায় সাধারণ মানুষের সুবিধা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু রবিবার অন্যান্য বিভাগ বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়ছে ওই বহির্বিভাগ। ছ’মাস কাজ করেই মুষড়ে পড়েছেন সেখানকার চিকিৎসকেরা। এতটাই যে, রবিবারের বহির্বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভাবতে হচ্ছে তাঁদের।
কিন্তু নজির গড়েও রবিবার ওই বহির্বিভাগ বন্ধ করার ভাবনা কেন?
ওই হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সবটাই তো টিমওয়ার্ক। এ ভাবে একটা বিভাগ একা কত দিন কাজ চালাতে পারবে?” তাঁর ব্যাখ্যা, হাসপাতালে একটা বিভাগের সঙ্গে অন্য বিভাগের যোগ আছে। যোগ আছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিক থেকেও। রবিবার বহির্বিভাগে পরিষেবা দিতে হলে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগই খোলা রাখা দরকার।
সুবীরবাবুর প্রশ্ন, “অন্যান্য বিভাগও যদি রবিবার চালু না-থাকে, তা হলে শুধু রেডিওথেরাপির বহির্বিভাগ খোলা রেখে রোগীদের আর কতটা উপকার করা যাবে?”
নীলরতনের অধ্যক্ষ প্রদীপ ঘোষ এবং পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান, রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকে এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন সুবীরবাবু। তাঁরা অবশ্য আশার কথাই শুনিয়েছেন। প্রদীপবাবু বলেন, “রেডিওথেরাপির মতো অন্যান্য বিভাগের বহির্বিভাগও রবিবার খোলা রাখার চেষ্টা করছি।” আর পূর্ণেন্দুবাবু আশ্বাস দিয়েছেন, “রেডিওথেরাপির বহির্বিভাগ রবিবার চালু রাখতে আমরা সব রকম সাহায্য করব।”
কিন্তু শুধু নীলরতন কেন? অন্য সরকারি হাসপাতালেও কি রবিবার বহির্বিভাগ খোলা রাখা যায় না?
এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার প্রভাস চক্রবর্তী বলেন, “এটা নির্ভর করে উপরমহলের নির্দেশের উপরে। সরকারি নির্দেশ এলে আমরা তা পালন করতে বাধ্য।” এই ধরনের ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পার্থ প্রধান। তিনি বলেন, “এটা খুব ভাল প্রস্তাব। কিছু অসুবিধা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু চেষ্টা করলেই সেগুলো কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।”
কিন্তু এ কাজে একেবারেই সায় নেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পার্থজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “সকলেরই ছুটি প্রয়োজন। রবিবার বহির্বিভাগ খোলা রাখতে গেলে ডাক্তার ছাড়াও বহু কর্মীর প্রয়োজন।” এক ধাপ এগিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, “বিলেত-আমেরিকায় শনি-রবিবার কোনও ডাক্তার পাবেন না। ওঁরা সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করেন। আমরা তো তবু ছ’দিন করি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.