চিকিৎসা-বিভ্রাট/১ চিকিৎসক-রোগী
সম্পর্ক নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
য় ভগবান, নয় তো শয়তান।
চিকিৎসক মহলেই প্রচলিত রয়েছে এই কথাটা। রোগী চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলে সেই চিকিৎসক রোগী ও তাঁর বাড়ির লোকের কাছে ভগবান। আর যখন উল্টোটা ঘটে, তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে চিকিৎসকের উপরেই। তিনি তখন শয়তান।
তখন ভাঙচুর হয় চিকিৎসাকেন্দ্র, আক্রান্ত হন ডাক্তারবাবু ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে। চিকিৎসকেরা দাবি করেন, কোনও ডাক্তারই চান না কারও ক্ষতি করতে। তাঁরা প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কিন্তু নানা কারণে সব সময় রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। কখনও চিকিৎসার উপকরণের অভাব, কখনও একের পর এক রোগী দেখে যাওয়ার ক্লান্তি, কখনও রোগীকে আনাই হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে। আর রোগীর আত্মীয়স্বজনের দাবি, চিকিৎসকেরা চাইলেই আরও আন্তরিক ভাবে রোগীকে দেখতে পারেন। কিন্তু তাঁরা রুটিন কাজ করে চলে যান। নানা দোহাই দেন। চিকিৎসকেরা দাবি করেন, রোগীর বাড়ির লোককে সব কথা বোঝানো যায় না। কারণ, চিকিৎসাশাস্ত্রের অনেক কঠিন কথা রোগীর বাড়ির লোক বুঝতেও পারবেন না। তাঁরা অসহায় চিকিৎসককে গালিগালাজ করেন বা মারধর করেন। রোগীর বাড়ির লোকের আবার পাল্টা বক্তব্য, অনেক চিকিৎসক সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে রোগীকে বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেন, তারপরেও রোগীকে ভাল করে দেখেন না।
এই পরিস্থিতিতে কে ঠিক আর কে ভুল, তা নিয়ে তরজা চলতেই থাকে। কিন্তু চিকিৎসকদের কথা হল, শেষ পর্যন্ত তাঁরা যে আন্তরিক ভাবেই কাজ করেন, তার প্রমাণ, হাসপাতাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। তাঁদের গাফিলতি থাকলে রোজ রোজ এত রোগীর ঠিক চিকিৎসা হওয়া সম্ভব ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলিও দাবি করেন, কম চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে তাঁদের চালাতে হয়, তার মধ্যেও প্রতি দিন হাজার হাজার রোগীকে তাঁরা সুস্থ করেই বাড়ি পাঠান।
কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক, পরপর বেশ কয়েকটি ঘটনায় চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অস্ত্রোপচারের পর কোনও মহিলার পেটের মধ্যে ‘গ্যাস’ খুঁজে পান কোনও চিকিৎসক। কোনও চিকিৎসক আবার অস্ত্রোপচারের সময় মাথা কেটে ফেলেন কোনও সদ্যোজাতের। রক্তক্ষরণের পরে তার মৃত্যু হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় এক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরে চার ঘণ্টার মধ্যেই সে মারা যায়। অভিযোগ সেই শিশুকে কোনও চিকিৎসক দেখতেই যাননি। কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছিলেন, তিনি হাসপাতাল থেকে কোনও খবরই পাননি। তা হলে কি হাসপাতালের মধ্যেই যোগাযোগের বিরাট ঘাটতি রয়েছে?
এক রোগীর আত্মীয় চন্দন মণ্ডল বলেন, “আমি নিজের চোখে দেখেছি, আমার আত্মীয় বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছেন, কিন্তু বারবার চিকিৎসককে ডেকেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।” তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যকর্মীদের বললে, তাঁরাও পাত্তা দেন না।” কেন? চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ-র নদিয়া জেলা সভাপতি অনুপকুমার বসুমল্লিক বলেন, “অনেক সময় এই ঘটনা ঘটে ঠিক কথাই। ওই আত্মীয় দেখছেন ওই রোগী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, কিন্তু ডাক্তারেরা জানেন, সেটা আসলে বড় কিছু নয়। ওই যন্ত্রণা কিছু ক্ষণের মধ্যেই থেমে যাবে। আসল রোগ অন্য জায়গায়, যন্ত্রণাটা তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সেই রোগেরই চিকিৎসাও হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে ওই রোগীর আত্মীয়ের কোনও ধারণাই নেই, তাই তিনি ভাবছেন চিকিৎসায় গাফিলতি হচ্ছে।” ওই রোগীর আত্মীয়ের কথায় কিন্তু ভরা অভিমান। তিনি বলেন, “তা হলে সে কথাটা তো আমাদের খুলে বললেই হত। আমরা যদি দেখি প্রিয়জন যন্ত্রণায় ছটফট করছে, তা হলে আমরা তো উদ্বিগ্ন হবই। ডাক্তারবাবুরা আমাদের আশ্বস্ত করেন না কেন?” ওই ব্যক্তি বলেন, “আসলে ডাক্তারবাবুরা আমাদের মানুষ বলেই জ্ঞান করেন না।” তা হলে চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগী ও তাঁর আত্মীয়দের সমস্যার বীজটা কি লুকিয়ে রয়েছে যোগাযোগের অভাবের উপরেই?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.