বারুইপুরেই দরবার
পুলিশের নিষেধ, সংঘর্ষের এলাকায় গেলেনই না সূর্য
প্রাণহানি, সংঘর্ষ এবং তার পরেও হামলা-ভাঙচুরে উত্তপ্ত বারুইপুরের জয়াতলায় যাওয়া হল না বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের। কারণ, নিষেধ করেছে পুলিশ। সেই কারণে বুধবার জয়াতলায় না-গিয়ে সিপিএমের জেলা সদর অফিসে বসেই আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বললেন সূর্যবাবু।
গত রবিবার একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে জয়াতলা এলাকায় সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। যথেচ্ছ গুলি-বোমা চলে। সাধন নস্কর ও সন্ন্যাসী নস্কর নামে দু’জন তৃণমূল-সমর্থক মারা যান। মঙ্গলবার সকালে মৃতদেহ দু’টি সামনে রেখে তৃণমূলকর্মীরা জয়াতলা গ্রামে শতাধিক বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করে বলে সিপিএমের অভিযোগ। তৃণমূলকর্মীরা এক মহিলাকে ধর্ষণও করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমে সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। তিনি জানান, বারুইপুর থানায় ওই ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে।
ঘরছাড়া পরিবারের সঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্র ও সুজন চক্রবর্তী। বুধবার বারুইপুরে। ছবি: পিন্টু মণ্ডল
সূর্যবাবুর অভিযোগ, গুলি লেগে সিপিএমের দু’জন সমর্থক আহত হন। তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিহত যে-দু’জন তাদের সমর্থক ছিলেন বলে তৃণমূল দাবি করছে, তাঁরা ২০০৫ সালে ওই এলাকার সিপিএম গ্রাম-প্রধান সুধাকর বাগের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত। ওই মৃত্যু ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করে সূযর্বাবু জানান, রবিবার রাতেই তিনি রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে ফোন করে বলেছিলেন, মৃতদেহ দু’টি নিয়ে মিছিল করা হলে আরও উত্তেজনার আশঙ্কা আছে। সোমবার সেই আশঙ্কাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সিপিএমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জয়াতলা এলাকায় আমাদের কর্মী-সমর্থক খুন হচ্ছেন। আর তৃণমূলের সন্ত্রাসের খতিয়ান পেশ করছেন সূর্যকান্ত মিশ্র!”
বারুইপুরের পাশাপাশি কেতুগ্রামের ঘটনা নিয়েও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু। তাতে জানানো হয়েছে, কেতুগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির আমবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৩টি পরিবারের ঘরবাড়ি লুঠ হয়েছে। ১৭ জনের দু’লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৫ জনের ৭৬ বিঘা রায়তি জমিতে চাষ করতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ নীরব দর্শক, বা পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে বলে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।
বারুইপুরের ঘটনাস্থলে যেতে না-পারলেও এ দিন সকালে বারুইপুরে দলের জেলা অফিসে বসে আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেন সূযর্বাবু। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দূরবিন দিয়ে সন্ত্রাস দেখছেন। উনি এক বার ঘটনাস্থলে এসে দেখে যান, বাস্তব পরিস্থিতিটা কী। আমাদের সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। অবাধে সন্ত্রাস চলছে। সব ঘটনার উল্লেখ করে একের পর এক চিঠি দিয়েছি মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু কোনও প্রতিকার হয়নি।”
সূর্যবাবুর দাবি, সারা রাজ্যে তাঁদের ৪০ হাজার কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। ১৪ হাজার কর্মী-সমর্থক সিপিএমের শিবিরে রয়েছেন। এ দিন তিনি বলেন, “আমাকে পুলিশ-প্রশাসনের তরফ থেকে জয়াতলা এলাকায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আমি প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করেছি। সেই কারণেই ঘটনাস্থলে যাইনি। এখানকার ঘটনা উল্লেখ করে ফের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেব।” পরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও বলেন, “নিরাপত্তার সমস্যার কারণেই সূর্যবাবু ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। তবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।”
সূর্যবাবু বলেন, “রবিবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জয়াতলা কলোনিতে ৭২টি বাড়ি এবং ২৪টি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।” এ দিন বিকেলে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজনবাবু এবং সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনার কাছে জয়াতলার ঘটনার ব্যাপারে সবিস্তার স্মারকলিপি জমা দেন। পরে পুলিশ সুপার বলেন, “অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.