সম্পাদকীয় ১...
যাহার যাহা কাজ
তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি আপাতত বিশ বাঁও জলের তলায়। এই পরিস্থিতির জন্য দিল্লির শাসকরাই দায়ী। প্রথমত, চুক্তি লইয়া বাংলাদেশের সহিত যাবতীয় তৎপরতা কেন কে জানে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে লওয়া হইয়াছিল। ওই মন্ত্রকে নদী-বিশেষজ্ঞ বা দক্ষ আমলা থাকিতেই পারেন, কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহিত জলবণ্টন লইয়া মাথা ঘামানো তাঁহাদের কাজ নয়। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এই প্রশ্নে একতরফা ভাবে যে সব উদ্যোগ লইয়াছিল, তাহাও ওই দফতরের কৃত্য ছিল না। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কেন দুই দেশের মধ্য দিয়া প্রবাহিত নদীর জলবণ্টন লইয়া দৌত্য, এমনকী সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকারী হইবেন, তাহা বুঝা কঠিন। উভয় ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সরকারের দুইটি প্রভাবশালী দফতর কার্যত অনধিকার চর্চার দোষে দোষী।
যদি একান্তই কেন্দ্রের কোনও দফতর বা মন্ত্রককে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তিতে জড়িত থাকিতে হয়, তবে তাহা জলসম্পদ মন্ত্রক। সেই উপস্থিতিও চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা এবং চুক্তির গতি ত্বরান্বিত করার স্বার্থে, খবরদারির জন্য নয়। কেননা খবরদারির কোনও অবকাশ এখানে নাই। তিস্তা ভারতের যে দুই রাজ্যের উপর দিয়া প্রবাহিত, সেই সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গেরই অধিকার আছে কতটা জল শুখা মরসুমে বাংলাদেশকে দেওয়া যাইবে, তাহা নির্ণয় করার। কেননা এই দুই রাজ্যের, বিশেষ করিয়া পশ্চিমবঙ্গের কৃষিতে সেচের জন্যই তিস্তা প্রকল্প গড়া হয়। বাংলাদেশের তরফে কোন মন্ত্রক বা মন্ত্রী প্রাপ্য জলের পরিমাণ লইয়া ভারতের সহিত দরকষাকষি করিবেন, সেটা সে দেশের ব্যাপার। তবে এই দরকষাকষির দুইটিই পক্ষ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ, যাহারা সরাসরি এই জল ব্যবহার করিবে। ভারতীয় জলসম্পদ মন্ত্রকও, বলা দরকার, এখানে কোনও অপরোক্ষ পক্ষ নয়, অপ্রত্যক্ষ মধ্যস্থতাকারী মাত্র। সেই ভূমিকাটিও কিন্তু ওই মন্ত্রককে পালন করিতে দেওয়া হয় নাই। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য জলের পরিমাণ বিষয়ে মনমোহন সিংহ সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত চুক্তির বয়ানে চুপি-চুপি অন্তর্ভুক্ত করিয়া কার্যত রাজ্যের সহিত প্রতারণা করা হইয়াছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে খুশি করার আন্তর্জাতিক তাগিদের দোহাই পাড়িয়া এই প্রতারণাকে যুক্তিসিদ্ধ করা যাইবে না। কেননা প্রতিবেশীর প্রতি যেমন রাষ্ট্রের সদয় বা উদার হওয়ার দায় আছে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্রীয় বন্দোবস্তে রাজ্যের প্রাপ্য হইতে তাহাকে বঞ্চিত না-করার কেন্দ্রীয় দায়ও আছে। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়েই তিস্তার জলবণ্টন লইয়া আলোচনার সূচনা। সে সময় কেন্দ্র যে পরিমাণ জল বাংলাদেশকে দেওয়ার প্রস্তাব করে, তাহাতে অক্টোবর হইতে এপ্রিল উত্তরবঙ্গে কৃষি বিপর্যস্ত হওয়ার শঙ্কা ছিল। সে জন্যই বামফ্রন্টও ওই ভাগাভাগিতে আপত্তি জানায়। রাজ্যে নূতন সরকার ক্ষমতাসীন হইলে কেন্দ্রের কর্তব্য ছিল তাহাকেও বিগত সরকারের সহিত প্রস্তাবিত চুক্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করানো। তাহা না করিয়া মনমোহন সিংহের সরকার চুক্তির খসড়ায় নিজের পছন্দমাফিক পরিমাণ জল তিস্তা হইতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়া দেওয়ার ধারাটি ঢুকাইয়া দেয় এবং বাংলাদেশকেও সেই মর্মে চুক্তির জন্য প্রস্তুত হইতে বলে। এই তঞ্চকতার মূল্যই আজ ঢাকায় মনমোহনকে দিতে হইতেছে। তিস্তার জলের ভাগাভাগি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের নিজেদের ব্যাপার। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষ সেই ভাগ লইয়া নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুক, যত ক্ষণ উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্রে উপনীত হওয়া না যাইতেছে। ইহার মধ্যে বিদেশ মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাহারও নাক গলাইবার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.