আন্দোলনে ব্যাহত পরিষেবা
যে যখন খুশি হাসপাতালের যেখানে- সেখানে ঢুকে পড়তে পারে। আটকানোর কেউ নেই। এক সময়ে নিরাপত্তা কর্মী থাকলেও এখন আর নেই। কখনও অস্ত্রোপচার কক্ষের দরজা ঠেলেও বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ছে। ফল যা হওয়ার তাই-ই হচ্ছে। ভিড়ের ঠেলায় চিকিৎসা লাটে উঠেছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। যে কোনও সময়ে হাসপাতালের যে কোনও ওয়ার্ডে ভিড় লেগে রয়েছে। মহিলা ওয়ার্ডে, প্রসূতি ওয়ার্ডে সন্ধ্যার পরেও পুরুষরা ঢুকে পড়ছেন। বিশেষত ‘আইসিইউ’-তে যেখানে কোনও সময়েই বহিরাগতদের ঢোকার কথা নয়, সেখানেও অবাধে ঢুকেছেন যে কেউ। অস্ত্রোপচার চলাকালীন অপারেশন থিয়েটারের দরজা ঠেলে বহিরাগতরা ঢুকে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। রোগীর আত্মীয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকের প্রতিনিধিরা ওয়ার্ডের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রোগী দেখতে চিকিৎসকরা রাউন্ড দিতে গেলে তাদের ঘিড়ে ধরছে ভিড়। ওই ভিড়ে মিশে গিয়েছে দালাল চক্রও।
এই ভিড়ের কারণ?
সদর হাসপাতালে ঢোকার মূল দরজা এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢোকার দরজা, কোনও জায়গাতেই নিরাপত্তা কর্মী নেই। এক-দু’দিন নয়, প্রায় মাসখানেক ধরে এমন ঘটনাই ঘটে চলেছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। সমস্যার সুত্রপাত হয়েছে হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী সংক্রান্ত এক সরকারি নির্দেশ জারির পরে। আগের নিয়ম অনুযায়ী সদর হাসপাতালে ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের দিয়ে নিরাপত্তার দেখভাল করা হত। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতর থেকে নির্দেশ জারি করে জানিয়েছে, হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে হবে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মীদের। সরকারি নির্দেশ পাওয়ার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি সংস্থাকে সরিয়ে দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য গত ১ অগস্ট থেকে বহাল করেছেন। সে দিন থেকেই শুরু হয়েছে গোলমাল। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু প্রভাবিত ঠিকাদারি সংস্থার কর্মীরা হাসপাতালের গেট থেকে সরতে রাজি হয়নি। সিটুর নেতৃত্বে হাসপাতাল চত্বরে স্লোগান বিক্ষোভ চালানোর পাশাপাশি সদ্য নিযুক্ত সেনা কর্মীদের হাসপাতালের বিভিন্ন গেটে দাঁড়াতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যারা বাধা দিচ্ছেন সেই সিটু সমর্থকরাও নিরাপত্তার কাজ করছেন না। তার ফলে, না ঠিকাদার সংস্থার কর্মী, না অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী কেউই হাসপাতালের পাহারার কাজে নেই। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল সব গেটই উন্মুক্ত। যে যার মতো ঢুকে পড়ছেন। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “সমস্যা জটিল। যা চলছে তাতে সদর হাসপাতালের নিরাপত্তাই এখন নেই। যে কেউ ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ছেন। চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশও দিচ্ছেন। হাসপাতালে নিরাপত্তা কর্মী না থাকায় কিছুদিন আগে বড়সর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি আমরা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আর জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।”
ওয়ার্ডে ভিড় না কমলে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকলে তাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় বলে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের তরফে কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স আসোসিয়েশন সম্পাদক সুশান্ত রায় বলেন, “হাসপাতালের পরিস্থিতি ভয়াবহ। বারবার কর্তৃপক্ষকে বলেছি. সরকার নিযুক্ত প্রাক্তন সেনাকর্মীদের কাজ করতে। যারা বাধা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ করতেও বলেছি। কিছুই করা হচ্ছে না।” ঠিকাদার সংস্থার নিরাপত্তা কর্মীদের সিটু প্রভাবিত সংগঠনের নেতা নির্মল ঘোষ বলেন, “আমরা হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব অন্য কাউকে দেব না। চাকরি চলে গেলে আমাদের তো পরিবার নিয়ে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।” প্রাক্তন সেনাকর্মী সংগঠনের সভাপতি বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, “সরকার নির্দেশ দিয়ে আমাদের নিয়োগ করেছেন। কিন্তু সদর হাসপাতালে কাজ করতে গেলে আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতে আমরা কাজ করতে পারছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.