মনোরঞ্জন ৩...
এহি তো মেরা নোকরি হ্যায়
প্রতি সপ্তাহে অনেক প্রতিযোগীই কয়েক লাখে পৌঁছেও পিছলে গিয়ে শেষ করেন কয়েক হাজারে। তবুও হট সিট থেকে ফেরত যাওয়ার মুহূর্তে হাসি লেগে থাকে মুখে। এটাই তাঁর ক্যারিশমা।
তিনি অমিতাভ বচ্চন।
কিন্তু ‘কেবিসি’র সাফল্যে ভাগ বসাতে তাঁর ঘোরতর অনীহা। নিজেকে ‘কেবিসি’র অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে ভাবতেও তিনি রাজি নন। তখনও কোটিপতির খেলা শুরু হয়নি বৈঠকখানার টেলিভিশনে। তার আগে মুম্বইতে তাঁর সাংবাদিক সম্মেলন। ফ্যাশন ডিজাইনার রোহিত বলের তৈরি করা কালো ব্লেজার গায়ে চাপিয়ে অমিতাভ বচ্চন মুখোমুখি প্রচার মাধ্যমের। সিক্স প্যাক-এইট প্যাকের আধুনিকতা থেকে বহু যোজন দূরে থেকেও সর্বাঙ্গে প্রখর ব্যক্তিত্ব আর আভিজাত্যের মিশেল। কী রকম আভিজাত্য? এই যে বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করতে পারা“‘কেবিসি’র সাফল্যের মূলে আছে এই গেম শো-র ‘ওয়ান্ডারফুল ফর্ম্যাট’। ৮০টি দেশে রমরম করে চলা এই ধরনের গেম শো-র সব সঞ্চালকের নাম তো আর অমিতাভ বচ্চন নয়।”
‘কেবিসি ২০০৬’-এর সাংবাদিক সম্মেলনে এমন দাবিই করেছিলেন না শাহরুখ খান? মনে পড়ে? সেই শাহরুখ খান তা হলে কেমন ছিলেন সঞ্চালক হিসেবে?
‘‘ভাল,” প্রশ্নকর্তার দিকে না তাকিয়েই বললেন অমিতাভ বচ্চন। একটু যেন বিরক্ত। এবং সঙ্গে সঙ্গে “নেক্সট কোয়েশ্চেন?”

***

‘‘গত বছরের মতোই ‘কেবিসি ২০১১’ও আমাদের চ্যানেলের জন্য সৃষ্টি করবে নতুন নতুন মাইলফলক,” দাবি করেছিলেন সোনির সিইও মনজিৎ সিংহ। প্রতি পর্বে ‘কেবিসি ২০১১’ তুলে ধরবে ভারতীয় সমাজের এক-একটি ক্ষুদ্র চিত্র। “আজকের ভারতের স্বপ্ন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যাবে এখানে,” দাবি ছিল আর এক কর্তা স্নেহা রাজানির।
পটনার সরোজ মিশ্র বা জয়পুরের নভলীন কৌরের সঙ্গে হয়ে যাওয়া প্রশ্নোত্তর পর্বে দেখা গেল চ্যানেল কর্তাদের দাবি অমূলক নয়।
আসলে ২০১১-য় এসে কে বি সি আর নিছক অর্থ রোজগারের মঞ্চ নয়। স্বপ্ন সফলের মঞ্চও। যেখানে আপনার-আমার মতো সাধারণ মানুষের স্বপ্ন সফল করতে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন বলিউডের আসল ‘সপনো কে সৌদাগর’অমিতাভ বচ্চন, প্রতিদিন। যেখানে স্বপ্ন আসলে দু’মুখী। এক দিকে নিজের ফ্যান্টাসিঅমিতাভ বচ্চনের মুখোমুখি বসে তাঁর সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের বাইরেও হাজারো টুকিটাকি কথা বলা, আর অন্য দিকে জীবনের স্বপ্ন সফল করার অভূতপূর্ব সুযোগ। কেউ চান স্কুল গড়তে, কেউ বা নিজের ভেঙে-পড়া জীবনটাকে সাজাতে। পয়সার অভাবে উচ্চশিক্ষা লাভে ব্যর্থ গৃহবধূ এখান থেকে মোটা টাকা জেতার পরে নিজের গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করেন। আবার এমনও কেউ আসেন কোটিপতি হতে, যাঁর একমাত্র স্বপ্ন সন্তানের মাথার ওপর একটা পাকাপোক্ত ছাদ গড়ে দেওয়া। স্বপ্নের সদাগরের হাত ধরে জীবনের সঙ্গেই বাজি লড়া। এ সব নিয়েই তো সেই অননুকরণীয় সঞ্চালনা। প্রতিযোগীদের সঙ্গে হাসি-মজায় জমিয়ে তোলা একান্ত নিজস্ব ইউএসপি। প্রযোজক সিনার্জি মিডিয়ার কর্ণধার সিদ্ধার্থ বসুর মতে, “যে কণ্ঠস্বর দেশের সর্বত্র পৌঁছে যায়।”
আর অমিতাভ বচ্চনের কথায়?
“ইঁহা হিন্দুস্তান মেহসুস কিয়ে যো। এখানেই দেখেছি গোটা ভারতকে। কেবিসি-র শিক্ষা, কোনও মানুষই ছোট নয়। এই মঞ্চে কারও ঘর বসে, কারও জীবন গড়ে ওঠে।” আরও একটি শিক্ষাও আছে এই গেম শো-র।
“কোই ভি চুনৌতি বড়ি নহি হোতি,” মন্তব্য তাঁর।

***

আর তাঁকে কী দিয়েছে কেবিসি?
“আমার জি-কে বেড়েছে। এই গেম শো-র সঞ্চালক না হলে কত প্রশ্নের উত্তর জানতেই পারতাম না,” অকপটে স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু গত দশ বছর ধরে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র মতো গেম শো করতে করতে তিনি ক্লান্ত হন না? কী ভাবে বছরের পর বছর এই শো-কে আমআদমির শোয়ার ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিজেকে উজ্জ্বীবিত করে রাখেন?
সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রথম আভিজাত্য আর ধৈর্যের বর্ম ভেদ হল যেন। উঁকি মারল এক আগাগোড়া পেশাদার।
“আরে ভাই, এহি তো মেরা নোকরি হ্যায়।”
ঊনসত্তর বছর বয়সেও এই পেশাদারিত্বই আজও রাত সাড়ে আটটায় সারা দেশকে বাধ্য করে কেবিসি-র সামনে বসতে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.