রবিবাসরীয় পাঠক প্রতিযোগিতা
স্বাধীনতা মানে

প্রথম নেশা
আমি স্নাতক স্তরে দ্বিতীয় বর্ষে ইংরেজির ছাত্রী। কলেজে বিস্তর বন্ধু থাকলেও বাড়িতেই আমি জগৎ দেখি। উচ্চ মাধ্যমিক থেকেই মায়ের কাছে বলে রেখেছিলাম আমি যে কোনও রকমের নেশা করে দেখতে চাই। ভুলেও গিয়েছিলাম কথাটা। ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর মা আমাকে আর দিদিকে বলল, চল আজ একটা মজা করব। তার পর নানান রকমের টুকিটাকি খাবার নিজের হাতে বানিয়ে আমাদের খাবার টেবিলে মোমবাতি জ্বালিয়ে কী রকম একটা পরিবেশ তৈরি করল মা। আমরা জানতাম না, মা কোথা থেকে ভদকা আনিয়ে রেখেছিল। তার পর সেই জমজমাট শীতের সন্ধ্যায় আমরা তিন জন এক সঙ্গে বসে চুমুক দিলাম পান পাত্রে। সে দিনের সেই অভিজ্ঞতা আমার জীবনকে একটা নতুন মাত্রা দিয়েছিল, বন্ধুদের কাছে বারে গিয়ে নেশা করার অনেক গল্প আগে ও পরে শুনেছি, কিন্তু মা সে দিন আমাকে একটা বড় হওয়ার স্বাধীনতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, যার জন্যে... না, মাকে কৃতজ্ঞতা জানাব না। সেই অনুভূতি আমাদের ভেতরেই বেঁচে থাক।


মোটামুটির মধ্যে হঠাৎ
আমি, আমার মন এই ছোট্ট সংগঠনটার কাছে স্বাধীনতার মানে মোটামুটি থাকতে থাকতে হঠাৎ করে ভাল থাকা। হতেই পারে তা কয়েক মুহূর্তের জন্যে স্থায়ী। পাজামার নাছোড় গিঁঠের মতো স্বাধীনতা না-ই বা পেলাম, তবু, দারুণ ভোরে মেঘ টপকে রোদ ওঠারও আগে ছাদের থেকে আকাশটাকে আরও কাছ থেকে দেখাও আমার কাছে অদ্ভুত স্বাধীনতা। ব্যস্ত সপ্তাহের মাঝে হঠাৎ এক দিন জলখাবারে লুচি, আবার এক দিন রবিবারের খবরের কাগজ দিদির হাতে যাওয়ার আগেই হাতিয়ে নেওয়া আমার কাছে সুখের স্বাধীনতা। হাতের জল শুকোতে না পারার অস্বস্তিতে যখন সেই ট্যাবেলটটি বন্ধ হওয়ার বন্ধু হয়ে ওঠে, সেটা কি কম স্বাধীনতা? কিংবা শীতের ক্লান্ত দুপুরে, মনখারাপের জাল বুনতে বুনতেই ছাদের কোণে একলা আমি সঙ্গী সিগারেট, হঠাৎ বন্ধুরা মিলে ‘এ’ মার্কা ছবি দেখে হল্লা করাও আমার স্বাধীনতা। স্বাধীনতা আর ইচ্ছের মধ্যে সেই আদিম ক্ষার আর ক্ষারকের সম্পর্ক। সব স্বাধীনতাই ইচ্ছে, কিন্তু সব ইচ্ছে স্বাধীনতা নয়।
কালো ঠান্ডা কফি
আমি চাই ইনসাস রাইফেল হাতে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে প্রতিবাদী মানুষদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে। বিনা বিচারে আমার বিরুদ্ধাচারীদের জেলে পুরতে, আমার অনুগত বশংবদদের দু’হাতে অনুগ্রহ বিলি করতে, মানুষের জমি, সম্পত্তি লুটে নিয়ে তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার করার মধ্যে দিয়ে আমার স্বাধীনতাকে আমি ভোগ করি। খেতে না পাওয়া বুভুক্ষু মানুষ যখন আস্তে আস্তে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে, তখন প্রেক্ষাগৃহের ঠান্ডা ঘরে বসে, কালো ঠান্ডা কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমার স্বাধীনতার মানে খুঁজে পেতে চাই। মাওবাদী হত্যার মধ্যে দিয়ে, মিথ্যের বেসাতির মধ্যে দিয়ে আমার স্বাধীনতাকে পেতে চাই। আমি স্বাধীনতার শিখরে পৌঁছই, যখন দেখি আমার অনুগামীরা বাঁদরামিতে বাঁদরদেরও হারিয়ে দিচ্ছে।
নিরাপদ খাঁচা
আমাদের বাড়িটা পুরনো দিনের। তিন তলা। তিনতলার ওপরে ছাদের চিলেকোঠার যে ঘর, সেই ঘরেই আমি থাকি। এটা আমার জ্যাঠামশাইয়ের বাড়ি। চিলেকোঠার ওই ছোট্ট খুপরিটাই আমার জগৎ। কলেজ শেষে যখন ওই ঘরে আমি আসি, বিকেলের আলোয় মেঝেতে গাছের ছায়া কাটাকুটি খেলে। ধীরে ধীরে আলো নিভে আসে, মায়ের মুখটাও অন্ধকার হয়ে যায়। আমার মদ্যপ বাবা ঘরে এসে চিৎকার শুরু করেন। আমার মনে পড়ে যায়, হসপিটালের বেডে শোয়া আমার মা আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিল, আমি পারলাম না তোকে অন্যের হাতে দিয়ে গেলাম, পারলে তোর এই মাকে ক্ষমা করিস। আজ আমার এই বাড়ি সেই নিরাপদ খাঁচা, যেখানে প্রতি মুহূর্তে বাবার হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। রোজ জেঠিমার হাতে মার, গঞ্জনা আমার সঙ্গী, জ্যাঠতুতো দাদার এক বন্ধুর চোখ তাড়া করে বেড়ায়, স্বাধীনতা মানে নিজেকে লুকোতে শেখা ছাড়া আর কিছু নয়। মাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি অনেক দিন। এখন শুধু আমার কান্নার মধ্যে লুকিয়ে থাকে একটা বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছে।
চাদর কুঁচকে আদর
স্বাধীনতা মানে ফোন তুলে রেখে মন খুলে লেখা চিঠি
চিঠির গোপন ভাঁজে ভাঁজে থাক ইঙ্গিত পরিপাটি।
স্বাধীনতা মানে চাদর কুঁচকে আদর করার ছুতো
অনুভূতি যাক শিখরে শিখরে আশ্লেষ সম্ভূত।
স্বাধীনতা মানে তোমার চুলের গন্ধ ডোবানো মুখ
আটপৌরের সীমানা টপকে মুঠিভরা কিছু সুখ।
স্বাধীনতা মানে নিজের বৃত্তে খেয়াল খুশির বাস
সকলের মাঝে মিলিয়ে গিয়েও একা থাকা অনায়াস।
স্বাধীনতা মানে দৃশ্যশ্রাব্য কলুষ এড়িয়ে বাঁচা
আকাশে উড়ুক ইচ্ছে ডানারা, ভেঙে পড়ে থাক খাঁচা।
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে
খোদরি, মধ্যপ্রদেশের একটি জনমানবহীন গণ্ডগ্রাম। চার দিকে কেবল সবুজ। সেখানেই মেয়েদের স্কুল। আউটডোর অ্যাক্টিভিটির ক্লাস চলছে। আমি তখন নবম শ্রেণি, আমি তখন স্কার্ট। হঠাৎ তুমি নেমে এলে অঝোর ধারায়। কী অপরূপ ঠান্ডা, স্বচ্ছ, উজ্জ্বল ধারা তোমার। ঈশানী, পর্ণা, অতসীরা ছুটে গিয়েছে আশ্রয়ের খোঁজে, শরীর আর ইউনিফর্ম বাঁচাতে। আনমনা আমি খেয়ালও করিনি সেই দায়। আমি ভিজছি, ভিজছি, ভিজছি।
অথচ বৃষ্টি মানেই তো এক রাশ বিরক্তি। সমার্থক শব্দ হল প্যাচপ্যাচে, নোংরা, কাদা। আমার মন কিন্তু বইছিল এক আলাদা স্রোতে। এ যেন এক বাধাবন্ধনহীন সিক্ত, সম্পৃক্ত প্রিয় মিলন।
গালাগাল এল একটু পরেই। টিচারদের চোখে পড়ার পরই শুরু হল সমাজসিদ্ধ বোধের তর্জন আর গর্জন। এমন কাণ্ড নাকি কেবল অবোধ শিশুদেরই মানায়। ওঁরা শাস্তি বিধান দিলেন, পরে থাকতে হবে ভেজা ইউনিফর্ম। ওঁরা তো টের পেলেন না যে, আমার শরীরে আসলে মাখা থাকল সেই পাঁচ মিনিটের স্বাধীনতার স্মৃতি। সেই ইউনিফর্ম শুকিয়ে গিয়েছিল কবে। আজ এই প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেও সেই স্বাধীন ধারাস্নান কিন্তু রয়ে গিয়েছে আমার মনে মন্দিরে।
স্বাধীন চকের গুঁড়ো
আরামদায়ক বেতনের সরকারি অফিসে চাকরি করতাম। চাকরির দশ বছরের অভিজ্ঞতা হিসেবে অর্জন করলাম করণিক দক্ষতা, সহকর্মীদের ভালবাসা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি ইত্যাদি। সামাজিক জীব হিসেবে আমার যে দায়বদ্ধতা, তার সীমারেখা ছোট হতে হতে চেয়ার-টেবিল-ফাইল আর আমার টিফিন বাক্সের মধ্যে আটকে গেল। দিলাম চাকরি ছেড়ে। নিলাম প্রাইমারি স্কুলের বারো হাজারি মাস্টারি। ক্ষুণ্ণ হলেন আমার দরদি মহল। গ্রামের স্কুল। হাতায় চারটে কদম গাছ। খালি পায়ে পড়ুয়ারা নতুন মাস্টারকে একটু ছুঁয়ে দেখার জন্যে ঘিরে রয়েছে। মনে হল ঠ্যাঙাপাড়ার কোড়িয়াল জুনিয়র বেসিক স্কুল পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে বলছে, এত দিন কোথায় ছিলেন? ভোরবেলা স্কুলে যাই। চোখ কচলানো বাচ্চাদের নিয়ে বন্ধ ক্লাস ঘরের টানা বারান্দায় বসে কিচিরমিচির করি। আমার স্বাধীনতা দোল খায় ইন্সপেকশনে আসা ছাগল ছানার কৌতূহলে। মাঠ থেকে সোজা বারান্দায় উঠে, আমার জামার গন্ধ শুঁকে, পেছনের দু’পায়ে তুর্কি নাচ দেখিয়ে এক বার অজ সঙ্গীত শুনিয়ে তার বয়স্যদের কাছে ছুটে যায়। আমার স্বাধীনতা টুকি দেয় বাচ্চাদের ছেঁড়া আকাশি স্কুল ড্রেসের ফাঁক দিয়ে। সূচ সুতো নিয়ে বসে যাই। বিগত চাকরি জীবনের দামি প্যান্টে লেগে যায় স্বাধীন চকের গুেঁড়া, আমার বাচ্চাদের মাটি মাখা হাতের ছাপ। আমি বুক ভরে শ্বাস টানি। সরে যায় বিগত অফিসের হাজিরা মাপা ভৌতিক দেওয়ালঘড়ি আর সাবমিটেড টু হায়ার অথরিটি জাতীয় অসংবিধানীয় শব্দেরা।
টার্গেট থেকে মুক্তি
আমার স্বাধীনতা মানে টার্গেট থেকে মুক্তি, যে টার্গেট অজগর সাপের মতো ভিজে আঁশের পিচ্ছিল দেহ নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে, আর ব্যাকস্পেস, কন্ট্রোল, অল্ট, আমেরিকান ক্লায়েন্ট, ডট নেট, এ এস পি সবাই মিলে যেন একটা চক্রব্যূহ রচনা করে, আর তখন আমার নিজেকে মহাভারতের অভিমন্যুর মতো লাগে। ঢাল, তরোয়ালবিহীন, নিরস্ত্র, অসহায়। আমার দিন কাটে এক নিখুঁত যন্ত্রীর মতো। যন্ত্রবৎ, যন্ত্রগৃহে যন্ত্রযুদ্ধ এবং বাড়ি ফিরে এসে আঁশটে বিছানায় যন্ত্রণাদায়ক যান্ত্রিক ঘুম। আমার স্বপ্নগুলো ডানাকাটা জটায়ুর মতো, ছটফট করতে থাকে কোনও এক আই টি হাবের সেন্ট্রালাইজড এসি-র কাচে, শিরায়, শিরায়, বুন্দ বুন্দ মে এক অব্যক্ত যন্ত্রণার বুদবুদ নিয়ে।
আমার কাছে স্বাধীনতা মানে দানবী সিংহিকার পেট থেকে চিরে বেরনোর মতো কর্পোরেট দৈত্যের নাড়িভুড়ি ছিন্ন করে, সাড়ে সাতটার গেদে লোকাল আর বসের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এক বার শ্যামসুন্দর ঘাটে বসে সূর্যাস্ত দেখা। যে সূর্যাস্তের লাল আভা অনামিকার ঘাড়ে, পিঠে, বিছিয়ে থাকা চুলে লুকোচুরি খেলবে, আর ওর শরীর থেকে অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের মতো গন্ধ আমার সেন্ট্রালাইজড এসি-র কাচে জটায়ুর মতো ডানাকাটা স্বপ্নগুলোকে দেবে এক ঝাঁক ইচ্ছে ডানা। যেটা নিয়ে উড়ে বেড়ানোর সময় কোনও এক কলেজপড়ুয়া ছেলের মোবাইলে বেজে উঠবে, ক্যায়সে বতায়েঁ, কিঁউ তুঝকো চায়ে, ইয়ারা বতা না পায়েঁ।

দাদা কত দূর যাবেন?
মাধ্যমিক পর্যন্ত বাড়ির কড়া শাসনে চলতে হত। কিন্তু ইলেভেনে ওঠার পর দেখলাম সেলুনে যাওয়ার টাকাটা দ্বিগুণ হয়ে গেল। মায়ের কথা শুনে আরও আশ্চর্য হলাম। চুলের সঙ্গে দাড়ি গোঁফও কাটতে হবে। সেলুনে গিয়েও দারুণ অভিজ্ঞতা হল। এত দিন কোনও পাত্তাই পেতাম না। কিন্তু দাড়ির কথা উঠতেই নানান প্রশ্ন, ছাঁটব না পুরোটাই উড়িয়ে দেব না ফ্রেঞ্চ কাট না জুলফি ইত্যাদি ইত্যাদি। বুঝলাম নানান বাছাইয়ের স্বাধীনতা এল।
কলেজে ওঠার পর এক রাশ মুক্তির দমকা হাওয়া। রানাঘাট থেকে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে পড়তে এলাম। প্রথম দিকে এক বার ভুল করে বাদকুল্লা স্টেশনে নেমে পড়লাম। বোঝার আগেই ট্রেন ছেড়ে দিল, চলন্ত ট্রেনেই চড়ে বসলাম। বুঝলাম একা চলার স্বাধীনতা।
এর কিছু দিন পর হাতে এল বেশ কিছু টিউশনি। প্রথম উপার্জন। মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতাম এত দিন। এ বার মায়ের হাতে টাকা দিলাম। আর এক স্বাধীনতা।
সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছিলাম এক দিন। কৃষ্ণনগর থেকে ফিরছি। ভিড় ট্রেনেও একটা বসার জায়গা পেয়েছি। হঠাৎ কানে এল: দাদা, কত দূর যাবেন, পাকা চুলের এক ভদ্রলোক আমাকেই বলছেন। সম্বোধনের সম্মানে আমার হঠাৎ আর এক স্বাধীনতার বোধ জাগল। উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, আপনি বসুন না।
পাগলের জন্যে সাঁকো
১৯৮৫। বয়স তখন ১৫। হেড স্যর জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কাছে স্বাধীনতা মানে কি পড়াশোনা না করা? উনিশ বছর বয়সে হস্টেলের ঘরে ধূমপানের সরঞ্জাম দেখে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁ রে, এই সবই কি স্বাধীনতা? আমার ২১ বছর বয়সে বাবা চলে গেলেন। পঁচিশে আমার বিয়ে। বয়সের আবেগ সংসারের খুঁটিনাটি মানতে চায় না। অভিমানে মায়ের উক্তি, বিয়ে করা মানেই কি স্বাধীনতা? আমার সাতাশে মা চলে গেলেন। মাথার ওপর কেউ রইল না। উপলব্ধি করলাম স্বাধীনতা মানে স্বামী-স্ত্রীর নতুন সংসারের শখ আহ্লাদ ভুলে মানসিক রোগে আক্রান্ত ভাইকে সুস্থ করার দায়িত্ব, তার ভার নেওয়ার দায়িত্ব, তাকে সংসারী করে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব।
বছরের পর বছর এই স্বাধীনতার প্রথম দুটো ধাপ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যখন আমার আড়াই বছরের মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা ভাবছি, তখন স্বাধীনতার অন্য মানে খুঁজে নেওয়া সহোদরা আমায় উপদেশ দিল, সম্পত্তির ভাগাভাগি করে যে যার মতো থাকাই স্বাধীনতা। বোকা আমি উপদেশ শুনিনি, কারণ আমার মতে সেই উপদেশের মানে ছিল পিতৃমাতৃহীন এক উন্মাদ মানুষকে তার নিজের দায়িত্ব নিতে বলার অর্থহীন উপদেশ দিয়ে, নিজের পিঠ বাঁচানো। আজ তাকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে আমার নবতম উপলব্ধি হল: নিজের ছোট স্বার্থ ভুলে সংসারের দায়িত্ব সৎ ভাবে পালন করে অপবাদ আর অসম্মান অর্জনই হল স্বাধীনতা।
মদনের মায়ের নাম
মদনের মা কোথায় গো? নাড়ুর বউ দেখতে এলুম পাশের বাড়ির গোপালের ঠাকুমা। আমাদের বাড়ি প্রবেশ করলেন। আর আমি খুকির মা। কখনও কখনও মনে হয় নিজের নামটা বোধ হয় ভুলে গিয়েছি। অনেক মতে নামে কী-ই বা আসে যায়। কিন্তু তা হলে একটা মেয়ের নাম রাখার দরকার কী? অমুকের মেয়ে বলে ডাকলেই তো চলে। আমার ছোট জা, কী সুন্দর নাম ছিল তার, শুভা। শ্বশুরবাড়িতে তার নাম হল নাড়ুর মা। কেন? আমার কাছে স্বাধীনতার একটা বড় মানে হল, মেয়েদের নিজের নামে পরিচিত হওয়ার অধিকার। মহিলারা ঘরের বউই হন বা কাজেই বেরোন, সমাজে তাঁরা নিজের নামে পরিচিত হবেন। শুধুমাত্র বাবার মেয়ে, ছেলের মা, কিংবা স্বামীর স্ত্রী হিসেবে নয়। আর তার জন্যে কেবল নাম করলেই নাম মিলবে তা কেন? আমি গার্গী, লোপামুদ্রা, মৈত্রেয়ী কিছুই না। এক জন সাধারণ গৃহবধূ হয়েও আমি নিজের নামে পরিচিত হতে চাই। আমার ছোট জা কে আমি শুভা বলেই ডাকি, নাড়ুর মা বলে নয়। ছোট লড়াই, কিন্তু স্বাধীনতার যুদ্ধ।
একটি গাঁট্টা মারতে দাও
বহু দিন ধরে একটা চাকরির ইচ্ছে পুষেছি। স্বাধীনতার কাছে একটা মাঝারি ধরনের বেঁচে থাকা চাই। কখনওসখনও আকণ্ঠ পান, গলা ছেড়ে গান। জামার কলারে অন্য রঙের সিঁদুর দেখেও বাড়িতে হাসিমুখে বউ, (একটু সন্ধ্যা রায়ের মতো মুখ) সমস্ত উন্মুক্ত ইলেকট্রিকের তার প্লাস্টিকে মুড়ে দিতে চাই, যাতে কাক পাখি বাঁদরে শক না খায়। অকারণ মিছিল, আযাচিত মাস্তানি, ডেলি প্যাসেঞ্জারদের দাদাগিরি দেখলে মারতে চাই একটি করে গাঁট্টা। জল অপচয়? বিদ্যুৎ নষ্ট? পুকুর ভরাট? চলবে না বস। চাই গাঁট্টা মারার অধিকার।
বলতে যেন পারি, এইটুকুই
এক, উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েছে দক্ষিণ কলকাতার একটা স্কুলে। আমার পাশে যে ছেলেটি তাকে মোটামুটি চিনতাম। পরিদর্শক ঘরে ঢুকলেন, তিনি সেই স্কুলের টিচার, ছেলেটির কাকা। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখলাম ভদ্রলোক বই খুলে ছেলেটিকে টুকলিতে সাহায্য করছেন। অন্য পরীক্ষার্থীরাও অবাক। আমার চোখে জল এসেছিল। রাত্তিরে ঘুমোতে পারিনি। কিছু বলতেও পারিনি। ভয় পেয়েছিলেম।
দুই, আমার জামাইবাবু দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তারবাবুর সঙ্গে কথা বলার জন্যে আমার ডাক পড়ল। ডাক্তারবাবু আমাকে বললেন, এ তো আর বাঁচবে না। একে শুধু শুধু ভর্তি করেছ কেন? আমি আবার হতবাক। চোখে আবার জল। কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না? সে কি ভয়ে? না কি কী বলব জানি না বলে? আজ প্রৌঢ়ত্বের দ্বারপ্রান্তে এসে মনে হয় স্বাধীনতা মানে এই সব পরিস্থিতিতে মুখ ফুটে প্রতিবাদ করার সাহসটুকু।
আঙুলে কালির দাগ
প্রথম ভোট দিয়ে আঙুলে কালির দাগটা দেখে মনে হয়েছিল বাঁধন ছেড়ে স্বাধীন হলাম। কিন্তু মাটিতে পা রেখে বুঝলাম মেয়েদের কাছে স্বাধীনতা মানে সোনার পাথরবাটি। তাদের বিয়ে হয়, ইচ্ছে অনিচ্ছের প্রশ্ন নেই। শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়, মানিয়ে নিতে হয়। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া সব স্বাধীনতা মূল্যহীন। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে আজ আমি মা। স্বাধীনতা মানে দায়িত্বপালন। স্বপ্ন দেখি সন্তানের চোখ দিয়ে। চেষ্টা করি জীবনের ভাল লাগার রঙে ওদের জীবনগুলো সাজিয়ে দিতে। হাত ধরে শেখাই চলার পথ। তবু দিনের শেষে যখন হিসেবের খাতা মেলাই, সংঘমিত্রার জমার ঘরে শূন্য। স্ত্রী, মা, কন্যা এই পরিচয়ের বাইরে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্নগুলো এসে ভিড় করে। ক্যালেন্ডারের ১৫ অগস্ট ঝাপসা হয়ে আসে। হয়তো তখন চোখের সামনে ফুটে ওঠে ভালবাসার একটা দেশ, খুঁজি ভালবেসে মাতোয়ারা হওয়ার স্বাধীনতা।
চাকরিটা তুমি পেয়ে গেছ...
১৯৯৭ সালে আমাদের বিয়ে হয়। তখন আমার দৈনিক রোজগার ৬৫ টাকা ৬১ পয়সা। আমার স্ত্রী শুভ্রা স্কুলে পার্ট টাইম পড়িয়ে পায় ৫০০ টাকা। এই অবস্থার মধ্যে চিকিৎসা চালিয়েও মাকে বাঁচানো গেল না। মা মারা যাওয়ার ২৮ দিন পরে আমার মেয়ে ঋ
দ্ধির জন্ম হল। যৌথ পরিবার হলেও খুব অনটন। কাজের জায়গায় খারাপ ব্যবহার, সারাক্ষণ একটা অনিশ্চয়তা তাড়া করে বেড়ায়, একটা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটে। ২০০১ সালে মার্চ মাসে শুভ্রা এস এস সি পরীক্ষা দিল। টালিগঞ্জ অফিসে ফল বেরোবে। শুভ্রার টেনশন, ফল জানতে গেছি আমি। অ্যাডমিট কার্ডের নম্বরটা মেলানোর পরে আমার হাত কাঁপছে, চোখে জল। বাড়িতে ফোন করলাম। বলব কী, আমি হাউ হাউ করে কাঁদছি। টলতে টলতে রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনে এসে একটা থামের গায়ে হেলান দিয়ে বসে রইলাম। সারা গায়ে এতটুকু আর জোর বাকি নেই। লম্বা যুদ্ধের শেষে আমাদের দু’মুঠো ভাতের স্বাধীনতা।
চলুন ঘুরে আসি
একটি ছোট্ট লাইব্রেরি আমার। সেখানে বই সঞ্চয় করি আমি। আলমারির তাকে তাকে কত পুরনো বই। কিছু আবার নতুন আমদানি। সারা দিন ধরে বই পড়ি। বইয়ের মাঝে মুক্ত আমি। এই তো আমি স্বাধীন। চার দিকে এত বাঁধনের মধ্যেও আমি একা কোথায় হারিয়ে যাই বইয়ের সঙ্গে। আজ কোন দিকে যাব, তিতাসের দিকে না পদ্মায়? নাকি তারাশঙ্করের সঙ্গে লাল মাটির দেশে? বিনে ভাড়ায় আমার এই নানান ছুট মন্দ নয় কিন্তু। কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।
এই টুকুন মানতে হয়
ইস্কুলে বাংলার দিদিমণি অর্চনাদি বলেছিলেন, স্বাধীনতা মানে শান্তি, অনেক কিছু মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। একটু বড় হয়ে বাবার কাছে পেয়েছিলাম নিজের মতো করে বেড়ে ওঠার স্বাধীনতা। দুই ভাইয়ের থেকে আলাদা কোনও বাধা নিষেধ ছিল না কখনও। অষ্টম শ্রেণিতে উঠে দেখলাম অনেক কিছু বদলে গেল। ওই বয়েস থেকে কলেজ জীবন পর্যন্ত দেখতাম বান্ধবীদের মা-বাবারা ওদের সব সময়ে চোখে চোখে রাখতেন। পাছে ওরা কিছু ভুল করে ফেলে। সে সময় কিন্তু আমি রাত দশটাতেও একা বাড়ি ফিরেছি। বাবা মায়ের অফুরন্ত বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে বাধ্য হয়েছি। স্বাধীনতা মানে হয়তো সেটাই।
বিয়ের পর এত দিনের স্বাধীনতা একেবারে হারিয়ে গেল। অফিস ফেরত সাড়ে সাতটাতেও বাড়ি ফিরে শুনতে হল কটু কথা। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরলেও কোনও প্রশ্ন ওঠে না। ভীষণ পরাধীন মনে হল নিজেকে। এখন বয়স বেড়েছে। কাজের মেয়েটি ফোলা কপাল আর হাতে কাটা দাগ নিয়ে আসে কাল রাইতে মাল খাইয়া মারসে। এটা নিত্য দিনের ঘটনা। আমি বলি খাও তো তোমার পয়সায়, এত সহ্য করো কেন? সে বলে কী যে কয়েন দিদি, হাজার হউক সোয়ামি তো। এই টুকুন মানতে হয়! বুঝলাম আমরা সবাই নানান রকম মেনে চলি। অর্চনাদি বোধ হয় ঠিকই বলেছিলেন। স্বাধীনতা আপেক্ষিক। যার সহ্যের ক্ষমতা যতটুকু ততটুকুই সে নিজেকে স্বাধীন মনে করে।
শাঁখা সিঁদুরের চলমান বিজ্ঞাপন
আমার পারিবারিক পটভূমিতে ছিল রক্ষণশীলতা। পুজো আচ্চার অত্যন্ত বাড়াবাড়ি, যার বিধি-নিষেধের বেড়াজালে ভক্তি হয়ে যেত বাষ্পায়িত। একটু বড় হয়ে মনে হয়েছিল, সে সব যেন পুজোর অছিলায় পুতুল খেলা। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ওই পুতুল খেলা আমি আর খেলব না। বিশ্বাস করেছিলাম, ঈশ্বর বলতে সেই অর্থে কিছু নেই, অন্তত চাল-কলা দিয়ে তাকে তুষ্ট করা যায় না। পারিবারিক চাপ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে নিজের বিশ্বাসকে প্রশ্রয় দিতে পারাটা ধর্মাচরণ না করার স্বাধীনতা ছাড়া আর কী!
বিবাহিত মহিলাদের শাঁখা-সিঁদুর-আলতা-নোয়ার চলমান বিজ্ঞাপন হিসেবে দেখানেপনাটা আমায় কিশোরীবেলা থেকে লজ্জা দিত। তাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম নিজের বিবাহিত জীবনে এমন কোনও চিহ্ন রাখব না, যা কিনা ঘোষণা করবে আমি সধবা। প্রায় চল্লিশ বছর আগে বিয়ে হওয়া একটি সাধারণ মেয়ের পক্ষে এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করাটা সহজসাধ্য ছিল না। সেই স্বাধীনতা আমি বাঁচাতে পেরেছিলাম।
তিরঙ্গা মানে
স্বাধীনতা মানে এক দিন ছুটি বিকেলে শপিং... দুপুরে মাংস
স্বাধীনতা দিয়ে মাপব ম্যাপ-এর সকল দ্রাঘিমা আর অক্ষাংশ
বিদেশিরা গেছে। বাতাস শিখল কালো মালিকের হুকুমশব্দ
হাহাকার থাক গ্রামে অরণ্যে, আমার গ্রীষ্ম এসি-আরব্ধ।

আজ স্বাধীনতা, ময়লা কুড়োনো ছেলেটার মনে বড় আনন্দ
পাওয়া যাবে বহু কাগজ পতাকা, সাথে ফুলমালা, গোলাপগন্ধ
তাকে বলছি না, আমি রোজই খাই, আয় বাছা আজ, তুইও দু’মুঠ্ খা
স্বাধীনতা মানে ওয়ান ডে ম্যাচ, তিরঙ্গা মানে সস্তা গুটখা

শহিদ হইনি, শহিদ স্মরণে টিভিতে করছি তর্কাতর্কি
গরিব বস্তি জ্বললে জ্বলুক, আমার কী তাতে, কিংবা তোর কী?
স্বাধীনতা মানে সাংসদভাতা, নিজেরই বাড়ানো... সহজে লভ্য
কানে হেডফোন... ফ্রিতে রিং টোন... ফেসবুকে ভাব... কটুকাটব্য
নম্বরটা বাস্তবে নেই
ফোনে মাঝে মাঝে বলে না, এই নম্বরটি বাস্তবে নেই! স্বাধীনতা ব্যাপারটা অনেকটা সেই রকম। শব্দটা আছে, কিন্তু তার অস্তিত্ব বাস্তবে বোঝা যায় না। সকালে চায়ের কাপ থেকে রাতে মশারি কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিতে গেলেই হঠাৎ ঠিক সময়ের আগে বা পরে দুধওয়ালা বা খবরের কাগজওয়ালা এসে বেল বাজিয়ে চায়ের চুমুকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেই। এর পর থেকে সারাটা দিন এটা সেটা মানিয়ে নেওয়া জীবনের অভ্যাস হয়ে যায়। ভাল থাকতে গেলে অনেক ভাল না লাগাকে মানিয়ে নিতে হয়, কিন্তু গালভরা যার সংজ্ঞা, স্ব+অধীনতা, তার দেখা মেলা ভার। এক বার স্বপ্নে দিব্যি হারিয়ে গিয়েছিলাম। কোথায় যেন সেই পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিলাম, হঠাৎ আমার ছেলে তোজো ঘুম ভেঙে মা বলে জড়িয়ে ধরল। আমার স্বপ্ন শেষ, এ বার তাকে খেলা দাও, ঘুম পাড়াও। তাই বলছি, স্বাধীনতা বাস্তবেও নেই, স্বপ্নেও নেই।
কর্পোরেট চাকরি থেকে ফিরে রূপকথা
হামি খাওয়ার সময় কথা বোলো না প্লিজ।
ফিরতে যতই রাত হোক, খাবার টেবিলে অপেক্ষায় থেকো, ফিরে একসঙ্গে খাব।
অ্যাডভার্টাইজিংগুলো যেন আমায় ভাবানোর চেষ্টা না করে। ওদের কোনও অধিকার নেই।
আনন্দবাজার পত্রিকা যেন স্বাধীনতার মানে জানতে চেয়ে মনে করিয়ে না দেয় যে, এখনও স্বাধীন হইনি।
তসলিমা নাসরিনের মুখের বাঁধন খুলে দাও। উনি কিছু বলতে চাইছেন।
ইনশিয়োরেন্স করাবে বলে বন্ধু হয়ো না প্লিজ।
বাবা, বলো, তোর যাকে পছন্দ তাকেই বিয়ে কর, শুধু আমাকে ছেড়ে চলে যাস না কখনও।
ভাল না বাসলে বোলো না ভালবাসো।
কর্পোরেট চাকরি, আমাকে একটু সময় দিয়ো, বাড়ি ফিরে মেয়েটাকে একটা রূপকথা শোনাব।
শব্দসীমা বেঁধে দিয়ো না। আমি সবটা বলব কী করে?

আমাকে তোমার মতো থাকতে দাও
কলেজে পড়ার সময় এক বার ডায়েরি লিখতে শুরু করেছিলাম। সবেমাত্র আশাপূর্ণা দেবীর ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ শেষ করেছি/ সেই ডায়েরির প্রথম লাইনটা ছিল, ভীষণ আশাপূর্ণা দেবীর মতো লেখিকা হতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু না, আমার সে প্রতিভা নেই। নিজের ভাগ্য নিয়ে খুব আক্ষেপ হয়। ইস, যদি সুপ্রিয়া দেবী হতে পারতাম। আমার পছন্দের পুরুষটিকে কত বছর দখল করে রেখেছিলেন।
আই পি এল-এর সময় গ্যালারিতে দেখলাম খুব সুন্দরী এক মহিলাকে। জানলাম, উনি মুকেশ অম্বানীর স্ত্রী নীতা অম্বানী। ভীষণ ইচ্ছে হল নীতা হতে। সাঁই বাবা মারা যাওয়ার পর সচিনের পাশে অঞ্জলিকে দেখলাম। খুব হিংসে হল। আর সে-দিন দিদি যখন শপথ নিচ্ছিলেন কী সুন্দর লাগছিল। খুব লোভ হয়েছিল সে দিনের জন্য দিদি হতে। মল্লিকা সেনগুপ্ত মারা যাওয়ার পর টিভিতে ওঁর একটা কবিতা পড়া হচ্ছিল। সেখানে উনি বলতে চেয়েছিলেন, মেয়েরা কী শুধু বিপ্লবীদের ভাত রান্না করে দেবে? পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি তুমুল বিদ্রোহের কী অপূর্ব প্রকাশ! যদি অমন কবি হতে পারতাম। আমার আমরণ আক্ষেপ থেকে যাবে কেন আমি মৈত্রেয়ী দেবী হতে পারলাম না। রবীন্দ্রনাথ তিন তিন বার মংপুতে মৈত্রেয়ীর অতিথি হয়েছিলেন। আমি কবিকে চোখেও দেখতে পাইনি।
হা ঈশ্বর, তুমি আমায় সেই স্বাধীনতা দাও যার দৌলতে আমি অন্য কেউ হয়ে উঠতে পারি!
ছবিগুলি এঁকেছেন: সুমন চৌধুরী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.