এইচআইভি, পাঁচ খুদেকে নিল না সরকারি স্কুল
গ্রামবাসীদের বাধায় পাঁচটি ‘এইচআইভি পজিটিভ’ বালক-বালিকাকে ভর্তি নিল না সরকারি প্রাথমিক স্কুল। বেশ কিছু দিন টালবাহানার পরে শুক্রবার বর্ধমানের ঝিঙ্গুটি গ্রামের ওই স্কুল তাদের প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। তবে জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, তারা চিকিৎসকদের নিয়ে গিয়ে গ্রামবাসীদের বোঝাবে।
এড্সে বাবা-মাকে হারানো ওই পাঁচ বালক-বালিকা বর্তমানে ঝিঙ্গুটির একটি বেসরকারি হোমের বাসিন্দা। দু’টি মেয়ে, তিনটি ছেলে। তাদের তিন জনকে প্রথম শ্রেণিতে, দু’জনকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করানোর চেষ্টা চলছে। হোমের তরফে সূর্যকান্ত ঘোষ ও শুভজিৎ দে অভিযোগ করেন, “প্রথমেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ওদের ভর্তি নিতে চাননি। বর্ধমান সদর (পশ্চিম) চক্রের স্কুল পরিদর্শক নারায়ণচন্দ্র পালও প্রথমে আপত্তি করেছিলেন।” নারায়ণবাবুর যুক্তি, “আমার প্রথমেই মনে হয়েছিল, গ্রামবাসী রাজি হবেন না।”
বেগতিক বুঝে হোম কর্তৃপক্ষ বর্ধমান ১ ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। এর পরেই যুগ্ম বিডিও সুমিতা সেনগুপ্তের নির্দেশে স্কুল পরিদর্শক ওই পাঁচ জনকে ভর্তি করতে স্কুলকে নির্দেশ দেন। কিন্তু টালবাহানা চলতেই থাকে। শেষে গ্রামবাসীদের বোঝাতে ‘এড্স সচেতনতা শিবির’ করা হয়। চিকিৎসকেরা গিয়ে জানান, এই পাঁচ জনের সঙ্গে পড়লেও অন্য কারও বিপদের সম্ভাবনা নেই। তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি।
এ দিন দুপুরে স্কুলে অভিভাবক-শিক্ষকদের বৈঠক ডাকা হয়। হোমের তরফে সেখানেই পাঁচ জনের ভর্তির আবেদন পেশ করার কথা ছিল। শুভজিৎবাবুর কথায়, “স্কুলে গিয়েই দেখি, মারমুখী জনতা অপেক্ষা করছে। তাঁরা কোনও মতেই এই বাচ্চাদের ভর্তি হতে দেবেন না। বৈঠকে এক চিকিৎসকও ছিলেন। আমাদের পাশাপাশি তিনিও গ্রামবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিভাবকেরা কিছুতেই রাজি হননি।” ঝিঙ্গুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পূর্ণিমা ঘোষ বলেন, “গ্রামবাসীরা সকলে আপত্তি করাতেই আমরা ওদের ভর্তি নিতে পারিনি।”
এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের ওই হোমের তরফে রাখি বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, “আমরা গোপনে স্কুল কর্তৃপক্ষকে এইচআইভি-র বিষয়টি জানিয়েছিলাম। নিয়ম অনুযায়ী, তাঁদের তা গোপন রাখার কথা। কিন্তু বিধি ভেঙ্গে স্কুলের তরফে গ্রামবাসীদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়। নইলে এমন সমস্যা হত না।” প্রধান শিক্ষিকার কৈফিয়ত, “গ্রামের লোক পরে কোনও ভাবে জানলে আমাকেই আর স্কুলে ঢুকতে দিতেন না। বাধ্য হয়েই ওঁদের জানাতে হয়েছে।”
নারায়ণবাবু বলেন, “জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) এবং প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেই আমি ওই পাঁচ জনকে স্কুলে ভর্তি করতে বলেছিলাম। কিন্তু গ্রামবাসীরা বলেন, ‘যদি ওদের ভর্তি করেন, আমাদের বাচ্চারা আর এই স্কুলে আসবে না।’ বাধ্য হয়েই আমাদের পিছিয়ে যেতে হয়েছে।” মহকুমাশাসক (উত্তর) প্রশান্ত অধিকারী বলেন, “চিকিৎসকদের নিয়ে গিয়ে গ্রামের মানুষকে বোঝানো হবে, এইচআইভি পজিটিভ বাচ্চাদের সঙ্গে লেখাপড়া করলেই কারও এড্স হয় না। পাঁচ জনকে ওই স্কুলে ভর্তি নিতেই হবে। এটাই দেশের আইন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.