মুকুটমণিপুরের জলে ভাসল একাধিক রাস্তা
বৃষ্টি পড়ছেই। তারই মধ্যে টইটুম্বুর মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে শুক্রবার জল ছাড়া শুরু হল। এর ফলে, দক্ষিণ বাঁকুড়ায় বন্যা না হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও পাশের মেদিনীপুর জেলার লালগড় এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা করছে প্রশাসন। তবে, ওই জলাধারের ছাড়া জলে দক্ষিণ বাঁকুড়ার কয়েকটি এলাকার কজওয়ে ডুবে যাওয়ায় বিভিন্ন রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
কংসাবতী সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার ২ স্বপন রায় এ দিন বিকেলে বলেন, “কুমারী ও কংসাবতী নদীর ঊর্ধ্বগতিতে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় শুক্রবার সকালে মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে প্রথমে ১০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়। পরে, তা দুই ধাপে ২০ হাজার কিউসেক হারে হয়।” পুরুলিয়ায় আরও বৃষ্টি হলে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।
ঝুঁকি নিয়েই শালি নদীর কজওয়ে পারাপার। সোনামুখীতে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
কংসাবতী সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন ওই জলাধারের জলস্তর ছিল ৪৩৬ ফুট। জলাধারের জল ধারণ ক্ষমতা ৪৪১.৫ ফুট। কিন্তু, ওই দুই নদীর উর্ধগতিতে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় জলাধারের চাপ বাড়ছিল। সে কারণেই, বাধ্য হয়ে জল ছাড়া হয়েছে। কংসাবতী জলাধার থেকে ছাড়া জল খাতড়ার গোড়াবাড়ি, কেচেন্দা হয়ে রানিবাঁধ ব্লকের হলুদকানালি, রাইপুর ব্লকের সিমলি, ধানাড়া, পেচাকোলা, দুগলি ও সারেঙ্গা ব্লকের চিলতোড়, হইরাকি, বিক্রমপুর, গড়গড়িয়া, ব্রাম্ভ্রণডিহা, মাজুরিয়া হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়ে ঢুকছে। ঝাড়গ্রাম মহকুমা এলাকায় ঢোকার পরে কংসাবতীর জল কয়েকটি খালে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে, ওই সব এলাকার কয়েকটি গ্রামে জল ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে। মহকুমাশাসক (খাতড়া) নিরঞ্জন কুমার বলেন, “কংসাবতীর জল বিপদ সীমার নীচেই রয়েছে। তবে, ওই নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
কংসাবতীর ছাড়া জল রানিবাঁধের আখখুটা মোড়ের কাছে, কেচোন্দা ঘাটে নীচু সেতুর ওপর দিয়ে বইতে থাকায় খাতড়া-রানিবাঁধ ও খাতড়া-রাইপুর রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। রাইপুরের আমৃতপালের কাছে ভৈরববাঁকি নদী ও বড়পচায় কংসাবতী খালের জল নীচু কজওয়ের উপর দিয়ে বইতে থাকায় এ দিন সকালে ফুলকুসমা যাওয়ার রাস্তা কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। কেচোন্দাঘাটে যান চলাচল বন্ধ থাকায় খাতড়া, রানিবাঁধ ও রাইপুর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। বাস, ট্রেকার সহ বিভিন্ন যানবাহণ খাতড়া থেকে মুকুটমনিপুর, গোড়াবাড়ি, অম্বিকানগর হয়ে ঘুরপথে যাতায়াত করছে। স্থানীয় দেউলি-শুক্লা হাইস্কুলের শিক্ষক উত্তম পাল, বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়, মহাদেব মাঝিরা বলেন, “রানিবাঁধ যাওয়ার সোজা রাস্তা বন্ধ থাকায় আমরা সমস্যায় পড়েছি। ঘুরপথে যেতে গিয়ে সময় ও অর্থ-দুই অপচয় হচ্ছে।” আবার, সোনামুখীতে কজওয়ে ছাপিয়ে শালি নদীর জল বইতে থাকায় দুর্গাপুর-সোনামুখী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবারও জেলাজুড়ে কখনও ভারী, কখনও হাল্কা বৃষ্টি হওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ডিভিসির ছাড়া জলে যে কোনও সময় বানভাসি হওয়ার আশঙ্কায় রাত জাগছেন সোনামুখীর নিত্যানন্দপুর কেনেটি, কেশবপুর ইত্যাদী দামোদর সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা। উদ্ভুত বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক সরকারি সমস্ত স্তরের আধিকারিকদের নিয়ে শুক্রবার একটি সমন্বয় বৈঠক করেন। সেখানে সেচ, কৃষি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা এবং বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুরসভার প্রতিনিধিরা ছিলেন। বৈঠক শেষে মহকুমা শাসক (বিষ্ণুপুর) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “ডিভিসি’র ছাড়া জলে সোনামুখী, পাত্রসায়র ও ইন্দাসের দামোদর সংলগ্ন গ্রামগুলিতে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিষ্ণুপুর মহকুমার প্রায় সমস্ত ব্লক থেকেই ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় যা পরস্থিতি হয়েছে, তা মোকাবিলা করার জন্য সব দফতরের মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। সে জন্যই এদিন বৈঠকে বসা হয়েছিল।”
অন্য দিকে, বৃষ্টির জেরে জেলার বেশ কিছু এলাকার জমিতে জল জমে থাকায় ধানচারা ও কাঁচা শাক সব্জির ক্ষতি হয়েছে। জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক অনন্ত হাজরা বলেন, “গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বাঁকুড়া সদর ও বিষ্ণুপুর মহকুমা এলাকায় প্রায় ২৪৫০ হেক্টর জমিতে জল জমে ধানচারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রায় ২০০ হেক্টর জমির শাক-সব্জি পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.