‘মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা’ ভরা কোটাল
টানা বৃষ্টি তো রয়েছেই, তার উপর আজ, শনিবার ভরাকোটালের ফলে নদীতে জল বাড়ার কারণে নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি-২ ব্লক, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা, সাগর, নামখানা, গোসাবা প্রভৃতি এলাকায় প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আজ দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসছেন। এ দিন জলমগ্ন পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম। বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে গিয়ে দুর্গতদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন তিনি।
গতে কয়েক দিন থেকে ক্রমাগত বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার সামান্য হলেও বৃষ্টি কমায় একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন বসিরহাটের সুন্দরবন এলাকার মানুষ। কিন্তু রাত ফের ভারী বর্ষণ আর ঝোড়ো হাওয়ায় ফের প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত এই সব এলাকার মানুষ। সুন্দরবন এলাকা ছাড়াও বসিরহাটের বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর ব্লকের অধিকাংশ এলাকা কোমরসমান জলের নীচে চলে গিয়েছে। ওই এলাকায় ইছামতীর বাঁধ লাগোয়া এলাকার অবস্থা আরও শোচনীয়। সর্বত্রই পানীয় জলের হাহাকার দেখা দিয়েছে। ছড়াচ্ছে পেটের রোগ। শিশুখাদ্য ও গবাদি পশু নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির জেরে সন্দেশশালি-২ ব্লকের আতাপুরে রায়মঙ্গল নদী সংলগ্ন বাঁধ মেরমতির কাজ শেষ না হওয়ায় ভরাকোটালের আশঙ্কায় মেটোখালি, দক্ষিণ মণিপুর, আতাপুর ইত্যাদি এলাকা থেকে লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা, নামখানা, সাগর, গোসাবায় নদীর ও সাগরের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা। গোসাবার শম্ভূনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বৈরাগী পাড়ায় মাতালা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। সেচ দফতর ও গ্রামবাসীরা বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা সুকৃতী পাল চৌধুরী বলেন, “আয়লার পর থেকে নদীবাঁধের উপরেই দিন কাটছে। কিন্তু সেই নদীবাঁধও ঠিকমতো সংস্কার করা হয় না। আমাদেরও পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। আমাদের ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। কোনও সরকারি ত্রাণও জোটেনি।” স্থানীয় প্রধান চিত্ত প্রামাণিক বলেন, “গত কোটালে নদীবাঁধের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছিল। সেই সব ফাটল মেরামত না হওয়ায় এই দূরবস্থা হয়েছে।” এদিন ঘটনাস্থলে যান সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল, মহকুমাশাসক শেখর সেন। মন্ত্রী বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের অবিলম্বে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা।--দিলীপ নস্কর।
এদিন পাথরপ্রতিমার পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম। কয়েকটি ত্রাণশিবিরে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দুর্গতেরা তাঁকে জানান, এলাকায় কোথাও কোমরসামন কোথাও বুকসমান জল। ঘরে চাল ডাল বলতে কিছু নেই। দিনের বেলায় ত্রাণশিবিরে কাটালেও রাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। কারণ ঘরে জিনিসপত্র থেকে গিয়েছে। তাই চুরির ভয় রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্য আতঙ্কও তাড়া করছে। যে কোনও সময় দেওয়াল ভেঙে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। দুর্গতদের প্রয়োজনীয় ত্রাণের আশ্বাস দেন জেলাশাসক।
এদিন জেলাশাসক বলেন, “এখনও পর্যন্ত দুর্গতদের জন্য এক হাজার ত্রিপল, ৬০ কুইন্টাল চাল পাঠানো হয়েছে। পাঠানো হয়েছে ১০ হাজার পানীয় জলের পাউচ। খোলা হয়েছে সাতটি ত্রাণ শিবির।”
এদিন দেখা গেল পাথরপ্রতিমার জি প্লটের চটেরবাজার বিবেকানন্দ হাইস্কুলে ত্রাণশিবিরে খিচুড়ি বিতরণ করা হচ্ছে দুর্গতদের। জি প্লটের বেশিরভাগ এলাকাই বুকসমান জলের তলায়। বিভিন্ন স্কুলে খোলা হয়েছে সাতটি ত্রাণশিবির। প্রায় দেড় হাজার দুর্গত পরিবার সেগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ত্রাণশিবিরের পাশাপাশি এ দিন জি প্লট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে সেখানকার অবস্থা সম্পর্কেও খোঁজ নেন জেলাশাসক। স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে জানতে চান জলবন্দি মানুষের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ওষুধপত্র রয়েছে কি না। প্রশাসনের কর্তাকে হাতের কাছে পেয়ে পেয়ে এ দিন ক্ষোভ উগরে দেন দুর্গতেরা। স্থানীয় উত্তর ও দক্ষিণ সুরেন্দ্রনগর গ্রামের বাসিন্দা অনুকূল বারুই, জয়দেব বারুই, সুবল চন্দ্র, মনীষাবালা চন্দ্ররা বলেন, “পাঁচদিন ধরে প্রায় অনাহরে রয়েছি। তবু ঘর ছেড়ে ত্রাণশিবিরে যেতে পারছি না। ঘরে গবাদি পশু রয়েছে। ত্রাণশিবিরে গেলে ওদের কি হবে। তা ছাড়া পানীয় জলেরও হাহাকার চারদিকে। আয়লার পরে ফের বড় রকমের ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.