নদীবাঁধ উপচে জল গ্রামে, উদ্বেগ পূর্বেও
প্রবল বৃষ্টি আর জলাধারের ছাড়া জলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। জেলার পটাশপুর ও ভগবানপুরের বেশ কিছু গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ইতিমধ্যেই। কেলেঘাই, চণ্ডীয়া ও বাগুই নদীর জল চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। শুক্রবার সকালে কংসাবতী ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার ফলে কংসাবতী নদীরও জলস্তর ক্রমেই বেড়ে চলেছে। রূপনারায়ণের বাঁধ ধসে মহিষাদলের মায়াচরে ও হুগলি নদীর পাড় উপচে হলদিয়ার নয়াচরে জল ঢুকছে। শুক্রবার রাতে ভরা কোটালে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলেই আশঙ্কা জেলা প্রশাসনের। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা বলেন, “শুক্রবার সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। জলাধারগুলিও জল ছাড়ছে। বিভিন্ন জায়গায় নদী বাঁধে ধস নামায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তবে, প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।”
জেলার প্রায় সর্বত্রই মাঠ-ঘাট ডুবে গিয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাগুলি জলের তলায়। জেলা সেচ দফতরের তমলুক বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার দিগন্ত মাইতি জানান, কংসাবতী ব্যারেজ থেকে শুক্রবার সকালে ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ায় জেলার উপর দিয়ে যাওয়া নিউ ও ওল্ড কংসাবতীতে জলস্তর বেড়ে চলছে। রূপনারায়ণ নদীর জলস্তর বিপদসীমার নীচে থাকলেও তমলুক শহরের কাছে নদীবাঁধে ধস নামায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সেত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নার বাকচা-র কাছে চণ্ডীয়া নদীর বাঁধে দু’টো গর্ত থেকে জল ঢুকতে শুরু করলে শুক্রবার সকালে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। সেচ দফতরের কর্মী ও স্থানীয় গ্রামবাসীরা বাঁধ মেরামত করে পরিস্থিতি সামাল দেয় প্রাথমিক ভাবে।
জলের তলায় পটাশপুর-বালিচক সড়ক। ছবি: কৌশিক মিশ্র।
কেলেঘাইয়ের জল উপচে পটাশপুর ও ভগবানপুরের বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকেই জল ঢুকছে। পটাশপুরের নৈপুর, গোকুলপুর, গোপালপুর, চিস্তিপুর ১ ও ২, অমর্ষি ১ ও ২ এবং ভগবানপুর ১ ব্লকের বিভীষণপুর, মহম্মদপুর, ভগবানপুর পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার পটাশপুরে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন। খড়িগেড়িয়া গ্রামের জলবন্দি মানুষজন সহ-সভাধিপতির কাছে অভিযোগ করেন, “রাস্তাঘাট ডুবে গেলেও যথেষ্ট সংখ্যায় নৌকা না থাকায় যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে। ত্রাণ না মেলায় সমস্যা হচ্ছে।” আরও নৌকা নামানোর আশ্বাস দিয়ে মামুদ হোসেন বলেন, “স্কুলগুলিতে ত্রাণ শিবির খোলার জন্য পঞ্চায়েতকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” পটাশপুর এলাকার নৈপুর-লক্ষ্মীবাজার থেকে দেহাটি পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক এখন জলের তলায়। ফলে পটাশপুর থেকে বালিচকগামী ওই পাকা সড়কে যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে পটাশপুরের শালমারা ও জটকাটায় কেলেঘাইয়ের বাঁধ ধসে যা ক্ষতি হয়েছিল, তা মেরামত করা গিয়েছে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর। কাঁথি বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপন পণ্ডিত বলেন, “শিউলিপুর এলাকায় কেলেঘাইয়ের লকগেট ভেঙে গিয়েছিল। ওই লকগেট সারানো হয়ে গিয়েছে।” পটাশপুরের মধুপুর থেকে বুলাকিপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় বাগুই নদীর জল উপচে বহু গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পটাশপুরের বারচৌকা বেসিন এলাকায় প্রায় ৩৬টি গ্রাম জলবন্দি হয়ে পড়েছে।
মহিষাদলের মায়াচরে প্রায় ৬ হাজার মানুষের বাস। মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, “মায়াচরের অবস্থা সঙ্কটজনক। বহু জায়গায় নদীবাঁধে ফাটল দেখা গিয়েছে। বেশ কিছু ঘরবাড়িও ভেঙেছে।” সংশ্লিষ্ট অমৃতবেড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান দীপা পণ্ডা জানান, ৩৫টি জায়গায় বাঁধের অবস্থা বেশ খারাপ। নদীর জল হু হু করে ঢুকছে নয়াচরেও। বকুলতলা, বাবলাতলায় বহু মৎস্যজীবী পরিবারের অস্থায়ী বাস। শুক্রবার রাতে ভরা কোটালে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই আশঙ্কায় প্রহর গুণছেন ওই সব মৎস্যজীবীরা। সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “নয়াচরে ত্রাণ পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা পরিষদ।” এ দিকে, মহিষাদলের ধারাপাড়ার স্লুইসগেটে ফাটল দেখা দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছে। বেতকুণ্ডু, ভাঙাগড়া, মহিষাদল, ইটামগড়া ২ পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামেও জল ঢুকছে।
এ দিকে, চাষজমি জলমগ্ন হওয়ায় আমন ধান, সব্জি ও ফুল চাষে ক্ষতি হচ্ছে। পাঁশকুড়ায় ফুল ও সব্জি চাষের অধিকাংশ জমিই দিন চারেক ধরে জলের তলায় বলে জানিয়েছেন কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ নায়েক। তমলুক, নন্দকুমার ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে পান বোরজগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.