মনোরঞ্জন ২...
বাস রে! কী প্রেম...
রাত তখন গভীর। জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যাচ্ছে চারপাশ। ময়না হাঁটছে। তার পরনের শাড়ি আলুথালু, লম্বা, খোলা চুল উড়ছে হাওয়ায়, পায়ে তার শ্বাপদের ব্যগ্রতা, চোখে ঝরছে শুকনো আগুন। পায়ে পায়ে ময়না গিয়ে দাঁড়ায় মুন্নির সামনে। এই তো! এই তো সেই খুনি রাক্ষসী। যে খেয়েছে তার স্বামী অনন্তকে। ময়না একটা আধলা তুলে নেয়। আর তখুনি, আকাশ-বাতাস ফুঁড়ে আসে এক তীব্র চিৎকার। ‘হেইইইইই, খবরদার! হাত দেবে না বলছি।’
***
নকুল। সেও এসেছে মুন্নির কাছে এই গভীর রাতে। এক পা এক পা করে ময়না এগোয় নকুলের দিকে। ব্যবধান কমতে থাকে তাদের মধ্যে। নকুলের তেজ জল, স্বর যায় কেঁপে। ‘...এখনও সময় হয়নি,’ নকুল বলে। তারপর আস্তে আস্তে বলে, ‘...সময় হলে মামলা কোরো।’ রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে ময়না হেঁটে চলে যায়। নকুলও যায় পায়ে পায়ে। ময়না সহসা ফিরে তাকালে পায়ে পায়ে ফিরে আসে। তার মুন্নির কাছে। মুন্নি যে তার ‘মেয়েমানুষ’। তাকে ছেড়ে সে থাকবে কী করে? আর ময়না? তার আঁচেও যে নকুলের পুড়ে যাওয়ার জোগাড়।
কী করে সে?
***
ময়না না মুন্নি? প্রথম জন সুন্দরী, রক্ত-মাংসের নারী, ‘সোমত্ত বিধবা’। অন্য জন কল-কব্জা-সমেত এক নিরেট বাস। যার আবার একটা ভাল নামও আছে। উড়োচটি সুপার। আরে, বাস আর নারী, এদের মধ্যে আবার বাছাইয়ের ব্যাপার হয় নাকি? হয়, হয়। এই নিয়েই নকুল পড়েছে মহা ধন্ধে। নকুল মুন্নির খালাসি। মুন্নিকে নিয়ে কোনও রকম কটু কথাই সে সহ্য করতে পারে না।
কী করে পারবে? মুন্নিকে যখন সে মেঠো রাস্তা দিয়ে, সবুজ খেতের পাশ দিয়ে হই হই করে ধুলো উড়িয়ে ছুটিয়ে নিয়ে যায়, সেই একমুঠো দুরন্ত ভাল লাগার কথা নকুল বোঝাবে কাকে? কী করেই বা বোঝাবে? লোকে তাকে পাগল বলবে না? কিন্তু বাসের সঙ্গে প্রেম? এমন কথা কে কবে শুনেছে? এ আবার কোন আজব গাঁয়ের আজব গল্প?
আজবই তো। সে কারণেই তো সিনেমার নাম ‘আজব প্রেম এবং...’।
গাঁয়ের নাম বল্লভপুর। আর এই বল্লভপুর নিয়ে যিনি গল্প ফেঁদেছেন তিনি পরিচালক অরিন্দম দে। এই বাস আর তার আশে-পাশের নানা চরিত্র নিয়েই তাঁর ছবি। নাগরিক জীবনের থেকে অনেক দূরে, বল্লভপুর গ্রামের পটভূমিকায় নানা ঘটনার ঘনঘটা, চরিত্রের আসা-যাওয়া। আর সমস্ত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে উড়োচটি সুপার। মানে মুন্নি। তাকে ঘিরে অনেকগুলি আখ্যানকে এক তারে বেঁধেছেন পরিচালক। টানটান গল্পে। কিন্তু সবটাই করেছেন কমেডির মোড়কে।
শুনে আজব মনে হলেও, দেখতে দেখতে কখন যেন অজান্তেই একটা ভাল লাগা তৈরি হয়ে যায়। মুন্নি, ময়না, নকুল, অনন্তের মা, বাবা। ময়নার অবশ্য নিশুতি রাতের হাঁটা জারি থাকে। কারণ মুন্নির প্রতি তার রাগের বদলে জায়গা নিয়েছে নকুলের প্রতি টান। মুন্নি তার অনন্তকে চাপা দেওয়ার পরও। কখন যে ময়নার মুন্নির প্রতি প্রতিশোধস্পৃহা আর নকুলের মুন্নিকে বাঁচাবার চেষ্টা তাদের পরস্পরের প্রতি প্রেমে বদলে যায়, তারা টেরও পায় না।
ময়না হলেন পাওলি দাম। আর নকুল হলেন রাহুল।
ময়নার চরিত্রায়ণে পাওলি অসাধারণ। “এরকম একটা চরিত্রে অভিনয় এই প্রথম। প্রথমে যে ময়না বাসটাকে ঘেন্না করে, সেই ময়নাই বাসের খালাসির প্রেমে পড়ে। অসাধারণ একটা চরিত্র। আমরা সবাই চেষ্টা করেছি ছবিটা ভাল করে করার,” বলছেন পাওলি।
চুটিয়ে অভিনয় করেছেন রাহুলও। “নকুলের প্রথম প্রেমিকা কিন্তু মুন্নি। ময়নার সঙ্গে তার প্রেম প্রয়োজনের খাতিরে। সেই প্রেমে সিরিয়াসনেসটা আসে পরে। আমার কাছে নকুলের চরিত্র অদ্ভুততম চরিত্র। এই প্রথম আমি শরীরী ভাষায় এবং কথাবার্তায় একটা সম্পূর্ণ গ্রাম্য চরিত্রে অভিনয় করলাম,” বলছেন রাহুল।
অবশ্য এদের পেরিয়ে খুব চেনা চরিত্রও আছে। যেমন গ্রাম্য, ভিতু অনন্তের মা (মিঠু চক্রবর্তী), বাবা (বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী)।
আর আছে বাসের মালিক, দুর্নীতিপরায়ণ, রাজনীতিক জনার্দন দত্ত (সব্যসাচী চক্রবর্তী)। বা তার প্রতিদ্বন্দ্বী বদনহরি (পরান বন্দ্যোপাধ্যায়)। এই দু’জনের কমিক তরজা চিত্রনাট্যের দুর্বলতায় মাঝে মাঝে ঝুলে গেলেও উতরে যায় দু’জনেরই অভিনয়-গুণে।
আছে বজ্রনাদ (চিরঞ্জিত চক্রবর্তী)। গ্রামের অঙ্কের মাস্টার। সে ‘ফুটোস্কোপ’ দিয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে আর কেউ বাজে কথা বললেই জলদগম্ভীর গলায় হুঙ্কার ছাড়ে, ‘কে কথা বলছে-এ-এ’। তারও চাই মুন্নিকে। তবে সম্পূর্ণ অন্য কারণে। বাস না চললে তার স্কুলে ছেলে-মেয়ে আসতে পারবে না যে। অভিনেতারা সবাই শক্তিশালী। সে কারণেই একটা হাসিখুশি গল্প অভিনয়গুণে বসে দেখতে লাগে বেশ। যদিও একেবারে মসৃণ ভাবে চলে পুরোটা, এমনও বলা যাবে না। বিশেষত কমিক দৃশ্যে মাঝে মাঝেই হোঁচট খেতে হয়। চিরঞ্জিতের বজ্রনাদ যেমন। শরীরী অঙ্গভঙ্গির বাড়াবাড়ি কমেডির মসৃণতায় বাধা সৃষ্টি করে যেন!
তা-ও একটা বাসকে ঘিরে হালকা চালে একটা গ্রাম্য সমাজকে এভাবে দেখানোর চেষ্টা করার জন্যই পরিচালক অরিন্দমের বাহবা প্রাপ্য। যেখানে প্রেম, বিচ্ছেদ, ঝগড়া, অভিমান, নোংরা রাজনীতি, হিংস্রতা মিলেমিশে যায়। বিশেষত ‘আজব প্রেম এবং...’ যখন তাঁর বড় পর্দায় প্রথম পদক্ষেপ। এ রকম একটা গল্প বাছার কারণ কী? “এ রকম একটা ঘটনার কথা কাগজে পড়েছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। সেটাই আমার টেক-অফ পয়েন্ট। আসলে, একটা ভিন্ন স্বাদের গল্প চাইছিলাম। একটা সিম্পল আখ্যান, যার মধ্যেই ধরা থাকবে নানা ঘটনা, ফুটে উঠবে নানা অনুভূতি। পর্দায় একটা নিটোল গল্প বলার চাহিদাই আসল কারণ,” বলছেন অরিন্দম।
গল্প তো তিনি বলেইছেন। আরেকটা বড় পাওয়া আদ্যন্ত আউটডোর শু্যটিং। পুরোটাই শু্যট হয়েছে বোলপুরে। ধুলো-ওড়া রাঙা মাটি, হাওয়ায়-দোলা সবুজ খেত, ঝকঝকে নীল আকাশ, কুপি-জ্বলা উঠোন...শহরের ইট-কংক্রিটের জঙ্গল থেকে অনেকটা রেহাই
দেয় গ্রামবাংলার তাজা পরিবেশ। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সঙ্গীতও ভাল। এই প্রথম ছবিতে তিনি গানও গেয়েছেন।
***
কিন্তু আসল টানাপোড়েন? যার কথা প্রথমেই বললামময়না বনাম মুন্নি? আর তাদের মধ্যে পরে নকুলের আজব প্রেমেরই বা কী হয় শেষ পর্যন্ত?
সে খবর জানতে দেখতে হবে ছবিটি। ‘আজব প্রেম এবং...’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.