প্রণব-ঘনিষ্ঠ সুখেন্দু তৃণমূলে, রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছেন মমতা
রাজ্যসভায় তৃণমূলের চতুর্থ প্রার্থী মনোনয়নে ‘চমক’ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডেরেক ও’ব্রায়েন, সৃঞ্জয় বসু এবং দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা সুখেন্দুশেখর রায়ের নাম তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ
সুখেন্দুবাবু দু’মাস আগেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে মমতাকে চিঠি দিয়েছিলেন বলে শুক্রবার জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। প্রসঙ্গত, এ বার রাজ্যসভায় তৃণমূলের চারটি আসনের প্রার্থীদের মধ্যে এক মাত্র সুখেন্দুবাবুই ‘পুরোদস্তুর রাজনীতিক’।
তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা পর সুখেন্দুবাবু বলেন, “আমি কংগ্রেসের জন্য পোস্টার মারা থেকে শুরু করে নেতৃত্ব দেওয়া, সমস্ত দায়িত্ব নিষ্ঠাভরে পালন করেছি। কিন্তু তার বিনিময়ে দলের থেকে কোনও স্বীকৃতি পাইনি।” মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়ে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে যে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছেন, তার জন্য আমি সারা জীবন তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।”
বস্তুত, সুখেন্দুবাবু বরাবরই ‘মমতা-ঘনিষ্ঠ’। বরাবরই রাজ্যে বিরোধী জোটের পক্ষে ‘ইতিবাচক’ ভূমিকা নিয়েছেন। জোট নিয়ে টানাপোড়েন যখন তুঙ্গে, তখনও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের তরফে বারবার ‘দূত’ হিসেবে মমতার কাছে গিয়েছেন। এবং কখনওই জোটের পক্ষে তাঁর মনোভাব গোপন করেননি। সে কারণে দলে তাঁকে অনেক কটাক্ষের মুখোমুখিও হতে হয়েছে।

সুখেন্দুশেখর রায়
সুখেন্দুবাবু আশা করেছিলেন, বিধানসভা ভোটে তাঁকে একটি ‘ইতিবাচক’ আসনে জোটের প্রার্থী করা হবে। কিন্তু ‘ইতিবাচক’ আসন দূরস্থান, কোনও প্রার্থিতালিকাতেই তাঁর নাম ছিল না! তখন থেকেই সুখেন্দুবাবু কংগ্রেস ছাড়ার বিষয়ে মনস্থির করেছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর। ভোটের ফল প্রকাশের আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেই তিনি তৃণমূলে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন স্বয়ং মমতার কাছে। মমতা আপত্তি করেননি। কারণ, সুখেন্দুবাবুকে তিনি নিজেও যথেষ্ট পছন্দ করেন। নেতাই-কাণ্ডের সময় আইনজীবী হিসেবে তাঁর ভূমিকাতেও মমতা যথেষ্ট সন্তুষ্ট ছিলেন।
সুখেন্দুবাবু কংগ্রেস ছাড়ায় ‘হতাশ’ সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমনটা হবে আমি ভাবিনি।” কংগ্রেসের একাংশের আশঙ্কা, এর প্রভাব জোটের উপর পড়তে পারে। যা উড়িয়ে দিয়েছেন এআইসিসি-র সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদ। তাঁর কথায়, “গণতন্ত্রে কাউকে বেঁধে রাখা যায় না। কেউ দল ছেড়ে অন্য দলে গেলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।” প্রদীপবাবুরও দাবি, “এর ফলে কংগ্রেসে ও জোটে কোনও প্রভাবই পড়বে না।”
প্রসঙ্গত, এ দিনই পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যসভা নির্বাচন নিয়ে শাকিল এবং নিজের রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। পরে শাকিল জানান, কংগ্রেসের প্রার্থীর নাম রবিবার ঘোষণা করা হবে। রাজ্য কংগ্রেসের একাংশের ধারণা, রাজ্যসভার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপবাবু। প্রদেশ সভাপতি মনোনয়ন দাখিলের জন্য নিজে ফর্মও তুলেছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। প্রদীপবাবুর সম্ভাবনা সম্পর্কে শাকিল অবশ্য বলেন, “ওঁকে আমিই বৃহস্পতিবার প্রার্থীর জন্য নির্দিষ্ট এ এবং বি ফর্ম দিয়েছি। যিনি প্রার্থী হবেন, প্রদীপবাবু তাঁকে ফর্ম দেবেন। উনি নিজে প্রার্থী হলে, তিনিই ওই ফর্ম ভর্তি করবেন।” রাজ্যসভার চারটি আসনে তৃণমূল নেতৃত্ব তিন জন প্রার্থীর নাম মোটামুটি ঠিক করেই ফেলেছিলেন। এ দিন বিকালে মমতার নির্দেশে তৃণমূল ভবনে চার প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করতে মুকুলবাবুরা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত বক্সী ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়, দলের দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী, শিশির অধিকারী, লোকসভায় দলের মুখ্য সচেতক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধানসভায় সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সোমেন মিত্র, হাজি নুরুল ইসলাম, বিধায়ক তাপস রায়রা।
পরে মুকুলবাবু জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় তৃণমূলের চার প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেবেন। ২২ জুলাই রাজ্যসভার ভোট। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। ছ’টির বেশি মনোনয়ন জমা না-পড়লে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন প্রার্থীরা।”
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.