পুস্তক পরিচয় ২...
সংগীত ও সিনেমার কিছু বিস্মৃত অধ্যায়
বাবা বিরক্ত হলে কী হবে, মা খুব উৎসাহ দিতেন কুন্দনলালকে। ভজন, লোকগীতি গাইতেন মা, ভাবতেন তাঁর গলার সুর ছেলের মধ্যেও বর্তাবে। আশ্চর্য সুরেলা গলায় মা-র সঙ্গে মিলে মন্দিরের নানান উৎসবে গেয়ে বেড়াতেন কুন্দনলাল। জন্মেছিলেন জম্মু-তে, ১৯০৪-এর ৪ এপ্রিল। দশ বছর বয়স থেকেই রামলীলা-য় অংশ নিতেন, সীতা-র চরিত্রে গাইতেন, অভিনয় তো করতেনই। গায়ক-তারকা হওয়ার লক্ষণ তখন থেকেই। তাঁকে নিয়ে চমৎকার একটি বই লিখেছেন প্রাণ নেভিল: কে এল সায়গল/ দ্য ডেফিনিটিভ বায়োগ্রাফি (পেঙ্গুইন বুকস, ২৯৯.০০)। কোনও ধরাবাঁধা তালিম ছাড়াই গত শতকে তিরিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে অসম্ভব জনপ্রিয় গায়ক, এবং একই সঙ্গে নায়ক হয়ে ওঠেন সায়গল। ৩৬টি ছবিতে অভিনয়, রেকর্ড-করা গান ১৮৫টি। কিন্তু মারা যান স্বাধীনতার বছর। এমন এক স্বল্পায়ু তারকাকে নিয়ে সাধারণত একটু বাড়িয়ে বলার অভ্যেসই থাকে লেখকদের, কিন্তু প্রাণ সে-ফাঁদে পা দেননি, বরং নিরাসক্ত এক দূরত্ব থেকে জীবনীটি লিখেছেন। নানা অধ্যায়ে ভাগ করেছেন সায়গল-এর জীবনকে: গোড়ার কথা, কলকাতা পর্ব, কাব্যচর্চা, লাহৌরে গান গাওয়া, নায়িকাদের সঙ্গ, শিল্পী ও মানুষ এ-দু’য়ের টানাপোড়েন ইত্যাদি। গোটা পাঁচেক পরিশিষ্টে ধরা আছে তাঁর ফিল্মপঞ্জি, স্মরণীয় গানের লং প্লে-র তালিকা, অভিনীত বিখ্যাত ছবির কাহিনি, সে-সব ছবির সমালোচনা পত্রপত্রিকায় এ রকমই আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-নথি। উচ্চাঙ্গ সংগীতে অনভ্যস্ত তরুণ মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়কে গানের বিশেষ অনুরাগী করে তোলার পিছনে সায়গল-এর অবদান, তাঁর জীবনের সঙ্গে একটা সময়ের ইতিহাস, তাঁকে জড়িয়ে এ-দেশের সংগীত ও সিনেমার বিস্মৃত কতকগুলো অধ্যায় যেন উঠে আসে এ-বইতে।
সিনেমার আরও এক স্বল্পায়ু তারকা মধুবালা জন্মেছিলেন ভ্যালেনটাইনস ডে-তে, ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩। জীবনাবসান ১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারিতে। মহল, তারানা, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফিফটি ফাইভ, চলতি কা নাম গাড়ি, বা মুঘল-এ-আজম-এর নায়িকাকে কে ভুলতে পেরেছে আজও! সে জন্যেই বোধহয় খতিজা আকবর-এর বই ‘আই ওয়ান্ট টু লিভ’/ দ্য স্টোরি অব মধুবালা-র (হে হাউস, ৩৯৯.০০। পরিবেশক: পেঙ্গুইন বুকস) সঙ্গে তাঁর অভিনীত ছবি থেকে জনপ্রিয় গানের একটি সিডি দেওয়া হচ্ছে পাঠককে। গান শোনার সঙ্গে সে-দৃশ্যে মধুবালা-কে দেখতেও পাবেন পাঠক। বইটি অনেকটাই ভক্তের ভঙ্গিতে লেখা, যেন-বা দেবী-বন্দনা! গত শতকের তিরিশ-চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকের চলচ্চিত্র সংক্রান্ত যাবতীয় পত্রপত্রিকার উপর ভর করেই মূলত মধুবালা-র জীবন আর কাজের হদিশ করেছেন খতিজা, তাঁকে ঘিরে তাঁর নায়কদের কথাবার্তা থেকে, কিংবা তাঁর ছবিকে ঘিরে সে-সময়কার সমালোচনা, সাংবাদিকদের মতামতকে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে এ-বই। দিলীপকুমার অবশ্য খতিজা-র কাছেই এক সাক্ষাৎকারে কবুল করেছেন যে তাঁর ‘ফেভারিট’ নায়িকা দু’জন, একজন মীনাকুমারী, অন্যজন মধুবালা। মধুবালা-কে নিয়েও ডাকটিকিট হয়েছে, সে-ছবি আছে এ-বইয়ের শেষ অধ্যায় ‘হার লাস্ট ইয়ারস’-এ, আর আছে তাঁর অন্তিম ইচ্ছের কথা: ‘আই ওয়ান্ট টু লিভ’।
নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে রুপোলি পর্দার নেপথ্য-নায়ককে নিয়েও বই বেরোচ্ছে এখন। বিশিষ্ট আলোকচিত্রী দিলীপ গুপ্ত-র (১৯১১-’৯৯) সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে তাঁকে নিয়ে লিখেছেন, এবং তাঁর সম্পর্কে নানা লেখার সংকলন-সম্পাদনা করেছেন তাঁর কন্যা চম্পা রায় (গুপ্ত): আ পোর্ট্রেট অব দিলীপ গুপ্ত/ দ্য আর্টিস্ট হু পেন্টেড উইথ লাইট অ্যান্ড শেড (৫০০.০০)। অভিনেতা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও তিরিশের দশকের মাঝামাঝি সিনেমাটোগ্রাফির কাজ শিখতে পাড়ি দেন আমেরিকা। হলিউডের স্টুডিয়োতে কাজ শিখে এখানে এসে প্রথমে নিউ থিয়েটার্স, পরে চলে যান মুম্বই। প্রমথেশ বড়ুয়া, নীতীন বসু, বিমল রায়, এ রকম বহু বিশিষ্ট পরিচালকের ছবিতেই ক্যামেরার কাজ তাঁর। তাঁর কাজ নিয়ে মুগ্ধতা জানিয়েছেন নিজেও আলোকচিত্রী এমন দুই চলচ্চিত্রকার গোবিন্দ নিহালানি ও গৌতম ঘোষ। তথ্যনিষ্ঠায় এ-বই দিলীপ গুপ্তের পরিচয়-জ্ঞাপক।
শুধু কি হিরো-হিরোইন, ভিলেন-কে নিয়েও বই। বব ক্রিস্তো কুরবানি, নমক হালাল, মর্দ, মিঃ ইন্ডিয়া, অগ্নিপথ ইত্যাদি বলিউডের ছবি মনে করলেই যাঁকে মনে পড়ে যায়, সেই মানুষটি নিজেই লিখেছেন ফ্ল্যাশব্যাক/ মাই লাইফ অ্যান্ড টাইমস ইন বলিউড অ্যান্ড বিয়ন্ড (পেঙ্গুইন বুকস, ৩৯৯.০০)। অস্ট্রেলিয়ার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার থেকে কী ভাবে হয়ে উঠলেন বলিউডের অভিনেতা, বা আরও স্পষ্ট করে বললে প্রতিভাবান ভিলেন, সে ‘জার্নি’টাই ধরা আছে বব-এর আত্মকথনে। ভূমিকায় তাঁর সম্পর্কে টম আলটার-এর একটি বাক্য: ‘ফুল অব অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড হিউমার...।’
Previous Item Alochona Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.