পূর্ব কলকাতা:লেকটাউন, বারাসাত
ব্যাহত নিকাশি
বিপন্ন খাল
শ্যাওলা আর আবর্জনায় ঢেকে রয়েছে ফতেসা খাল। উত্তর দমদম, নিউ ব্যারাকপুর ও মধ্যমগ্রাম পুরসভা এলাকার বিরাট অংশের জল নিকাশির মাধ্যম এই খালটি। অথচ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব আর অসচেতন বাসিন্দাদের একাংশের ফেলা ময়লায় ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই নিকাশি খাল। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, খাল পরিষ্কারে উদাসীন পুরসভা ও সেচ দফতর।
উত্তর দমদম পুরসভার ফতেল্লাপুর থেকে শুরু হয়ে সাহাপাড়ার মধ্য দিয়ে বিশরপাড়া রেল লাইন পেরিয়ে নিউ ব্যারাকপুরের লেনিনগড়, নবপল্লি এলাকায় প্রবেশ করেছে ফতেসা খাল। এখান থেকে মধ্যমগ্রাম পুরসভার সুকান্তনগর, ঘোষপাড়া ও সাহাড়া এলাকার মধ্য দিয়ে এসে মাইকেলনগরের নোয়াই খালে মিশেছে এটি।
এই সব এলাকার ছোট-বড় নর্দমা দিয়ে আবর্জনাময় বর্ষার জল এসে পড়ছে এই খালে। তার উপর ক্রমাগত প্লাস্টিক ও আবর্জনা জমে খালে জলের স্রোত প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই নোংরা জল জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায়। বাসিন্দা অলোক দাসের কথায়: “পুরসভার ময়লা সংগ্রহের গাড়ি এলাকার সর্বত্র আসে না। তার উপর ভ্যাট দূরে থাকায় অধিকাংশ বাসিন্দাই নর্দমায় আবর্জনা ফেলেন। সচেতনতারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে।”
উত্তর দমদম পুরসভার বিশরপাড়া ও সাহাপাড়া এলাকার খালপাড় সংলগ্ন দু’টি বাজারের বর্জ্যও নিত্য দিন খালে ফেলা হয়। দু’টি বাজারেরই পাশে রয়েছে জনবসতি। আর ভ্যাট রয়েছে জনবসতি ও বাজারের মাঝামাঝি জায়গায়। এক দোকানদার জানান, ভ্যাটে সারা দিনই গৃহস্থালির বর্জ্য ও বাজারের আবর্জনা ফেলা হয়। অথচ ভ্যাট নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে ময়লা জমে থাকে। তাই বাধ্য হয়েই খালে ময়লা ফেলতে হয়। নিউ ব্যারাকপুর ও মধ্যমগ্রাম পুরসভার নবপল্লি ও সুকান্তনগর বাজারেও ভ্যাট নিয়ে একই সমস্যা থাকার জন্য সাফাইকর্মীরা বাজার পরিষ্কারের পর আবর্জনা খালের মধ্যেই ফেলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা অরুণাভ বিশ্বাস বলেন, “আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার ব্যাপারে পুরসভার আরও কঠোর হওয়া দরকার। খাল রক্ষণাবেক্ষণেও পুরসভার উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।” যদিও পুরসভাগুলি নিজেদের গাফিলতির কথা মানতে নারাজ। মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের রথীন ঘোষ বলেন, “সর্বত্র ভ্যাট থাকা সত্ত্বেও কার্যত ইচ্ছা করেই কিছু অসচেতন মানুষ নর্দমায় ও খালে আবর্জনা ফেলেন। ফতেসা খালের মালিক সেচ দফতর। আমাদের কাজ সেচ দফতরকে জানানো। বহু বার জানিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি।”
নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের নির্মিকা বাগচী বলেন, “গত এক বছর ধরে সেচ দফতরকে চিঠি লিখছি। খালটি সংস্কার হলে নিচু এলাকার জল নিকাশির সমস্যা মিটে যাবে। কিছু দিন আগেই নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার লেনিনগড়, পশ্চিম মাসুন্দা, খড়ের মাঠ ও বিদ্যাসাগর পল্লির বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়। আমাদের দলের পক্ষ থেকে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় লকগেটের কচুরিপানা পরিষ্কার করে জল নামানো হয়।” উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের সুনীল চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিবেশী পুরসভাগুলির সঙ্গে এখনও এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে সেচ দফতরকে একাধিক বার জানিয়েছি।”
সেচ দফতরের ক্যানাল ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার অমিয় বেরা বলেন, “টাকার অভাবে ফতেসা খালের পূর্ণ সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রতি বছর বর্ষার আগে খালের কচুরিপানা ও আবর্জনা তোলা হয়। এ বছর বর্ষার আগে ভোটের বিধিনিষেধের জন্য পরিষ্কার করা হয়নি। টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শেষ। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”
ছবি সুদীপ ঘোষ
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.