আঁতুড়েই নাভিশ্বাস মেধা উদ্যোগের
ভাড়া করা গ্যারাজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হস্টেল রুম’। মার্কিন মুলুক-সহ উন্নত দুনিয়ায় বেশির ভাগ প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাই উঠে এসেছে এমন ‘আঁতুড় ঘর’ থেকে। গুগ্ল কিংবা ফেসবুকের মতো শাণিত মেধা আর উদ্ভাবনী পরিকল্পনার ফসলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে খুঁজে নিয়ে তাতে বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন উদ্যোগ পুঁজি সংস্থা (ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড)।
একই পথে হেঁটে রাতারাতি মেধাসম্পদের মক্কা হতে চেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গও। সরকারি বদান্যতায় তৈরি হয়েছিল উদ্যোগ পুঁজি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, উদ্ভাবনী পরিকল্পনা নিয়ে গিয়েও প্রথম থেকেই তার দরজায় ঠোক্কর খেয়েছেন উদ্যোগপতিরা। শুধু দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। আর গত ছ’মাস ধরে তো প্রায় অকেজো হয়েই পড়ে রয়েছে এই পুঁজি। থমকে রয়েছে আবেদনকারী সংস্থাগুলি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে বাছাই করার প্রক্রিয়া। বৈঠক হয়নি ‘স্ক্রিনিং কমিটি’-রও। ‘সৌজন্যে’ সেই প্রশাসনিক উদাসীনতা আর লাল ফিতের ফাঁস।
এই অভিযোগ অবশ্য পুরোপুরি অস্বীকার করছেন উদ্যোগ পুঁজি সংস্থা ওয়েবেল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল-এর চেয়ারম্যান ধ্রুবেশ বিশ্বাস। আইআইটি খড়্গপুরের এই অধ্যাপকের দাবি, “বিধানসভা নির্বাচনের কারণেই কাজ করা সম্ভব হয়নি গত কয়েক মাস। কিন্তু গত চার বছরে ৩.৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ১৬টি সংস্থাকে।”
সংস্থা যাই বলুক, এ বিষয়ে নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন একাধিক উদ্যোগপতি। যেমন, তথ্য-কিয়স্ক নির্মাতা কমিউনেট সিস্টেমস-এর বোধিসত্ত্ব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, প্রায় এক বছর এই ফান্ডের পিছনে ঘুরেও এখনও টাকার মুখ দেখেননি তিনি। বোধিসত্ত্ববাবু বলেন, “সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক বার বৈঠকে ডাকা হয়েছে। নির্দেশিকা মেনে গাঁটের কড়ি খরচ করে ব্যবসার পরিকল্পনা জমাও দিয়েছি আমরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।”
২০০৮ সালে টাকার জন্য আবেদন করেছিল আর একটি সংস্থাও। ধাপে ধাপে প্রশাসনিক বাধা কাটিয়ে ২০০৯-এ আংশিক টাকা পায় তারা। মূলধনের প্রতিশ্রুতি পাওয়ায় হাত দেয় পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজে। কিন্তু বিস্তর দৌড়ঝাঁপের পরও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে গড়িয়ে যায় আরও দশ-দশটি মাস। স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা কলকাতার সংস্থা অ্যাপ্টসোর্স-এর মণীষা চৌধুরী মনে করেন, “এ ধরনের উদ্যোগে প্রশাসনিক ঢিলেমি রয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রেই। থাকে স্বচ্ছতার অভাবও।”
পশ্চিমী দুনিয়ায় বাজার ধরার উপযুক্ত কোনও ব্যবসায়িক পরিকল্পনার সন্ধান পেলে, সেই ‘স্টার্ট আপ’ বা নতুন ব্যবসাকে একেবারে গোড়ায় (‘আঁতুড়ে’) মূলধন জোগায় বিভিন্ন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড। যাতে পরে সেই ব্যবসা বড় হলে, নিজেদের অংশীদারি বেচে মুনাফা করতে পারে তারা। এই ‘মডেল’ মাথায় রেখেই মেধা সম্পদকে পুঁজি করে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাজি ধরতে ২০০৬ সালে নিজস্ব ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড সংস্থা তৈরির কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। যা কাজ শুরু করে ২০০৮-এ। পাঁচ কোটি টাকা থেকে ক্রমশ বেড়ে তহবিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫ কোটিতে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, তহবিলের বহর বাড়লেও, নিজেদের কাজটুকু সুষ্ঠু ভাবে করতে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে সংস্থা। যে কারণে ব্যবসায় মূলধন মেলার প্রতিশ্রুতি পেয়েও, তা হিসেবের খাতায় তুলতে গলদঘর্ম হয়েছে রাজ্যের একাধিক ছোট অথচ সম্ভাবনাময় ব্যবসা।
ধ্রুবেশবাবু অবশ্য জানান, এই সব ত্রুটি শুধরে ওয়েবেল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল-কে কলকাতার বাইরেও ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য। যাতে দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি বা খড়্গপুরের মতো জায়গাতেও একে কাজে লাগাতে পারেন আরও বেশি মানুষ।
Previous Story Business Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.