রবিবাসরীয় প্রবন্ধ
ডাকঘর ওয়ারশ ১৯৪২

কলকাতা, ১৯৪১
রোগশয্যায় এক কবি। বয়স পরিণত। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উৎকণ্ঠিত অগণন মানুষ, পৃথিবীর নানা প্রান্তে। কবি তাঁর নিজের জীবনে প্রিয়জনদের মৃত্যু দেখেছেন অনেক। তাঁর নানান লেখায় মৃত্যুকে নিয়ে ভাবাবার আর বোঝবার, শোকের সঙ্গে যুঝবার, তাকে উত্তীর্ণ হওয়ার, জয় করবার, নানান ভাবনার উদ্ভাস। তিনি লিখেছেন মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান। লিখেছেন, কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়, জয় অজানার জয়। লিখেছেন, জীবন মরণের সীমানা পারায়ে বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে। আবার যারা ‘পরকে আপন করে, আপনারে পর’, তাদের নিয়ে গান বেঁধে গেয়েছেন, ‘মরণেরে করে চির জীবননির্ভর’। তাঁর নাটকে আমরা কখনও পাই অন্ধকারের রাজাকে, কখনও বা ডাকঘরের অমলকে। অমলকে আমরা সবাই চিনি। শরীর তার ভাল নয় মোটে। ঘরের বাইরে বেরুনো তার মানা। সে আছে রাজার চিঠির অপেক্ষায়। জানলা দিয়ে বাইরের দুনিয়ার কত খবর রাখে সে। কী তার আগ্রহ। কখনও দইওয়ালার সঙ্গে কখনও বা প্রহরীর সঙ্গে আড্ডা জমায়। কোথাও যে তার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। শরীর যদি না দেয়, বয়েই গেছে। মন তার চলে যেতেই পারে পাঁচমুড়া পাহাড়ের তলায়, শ্যামলী নদীর ধারে।
১৯৪১-এ চলে গেলেন রবীন্দ্রনাথ।
ওয়ারশ, ১৯৪২
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ। ইতিহাসের এক বিখ্যাত শহর। এক দিকে রুশ সাম্রাজ্য আর নানান ইউরোপীয় শক্তির মধ্যেকার দ্বন্দ্বে বারবার অধিকৃত আর বিধ্বস্ত, অন্য দিকে সঙ্গীত, কারিগরি, বিজ্ঞানচর্চার প্রসিদ্ধ কেন্দ্র। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে কিংবদন্তি শপ্যাঁর শহর, নানান অপেরা আর লোকনাট্যের শহর। কিন্তু ১৯৪২ সালে ওয়ারশ বিজয়ী আর্যবাহিনীর অধিকৃত এক জনপদ। ওয়ারশ শহরের এক প্রান্তে অনার্যদের ঠেলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে কুখ্যাত ওয়ারশ গেটো। সেখানে কার্যত বন্দি এই ইহুদিরা। আমরা জানি লক্ষ লক্ষ মানুষের কী পরিণতি হয়েছিল নাতসি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে। সেই সব মানুষের কয়েক জনকে নিয়ে আজকের গল্প।
কয়েক জন অমল এদের মধ্যে আছে কয়েক জন অমল আর সুধা। তারা সবাই কিন্তু রাজার চিঠির অপেক্ষায়। তারা থাকে ইহুদি শিশুদের জন্যে পরিচালিত এক অনাথাশ্রমে। গত কয়েক মাসে তাদের ঠিকানা বদলাতে হয়েছে কয়েক বার। কারণ, রাজার পেয়াদারা বারবার ডেকে পাঠিয়েছে তাদের ঠাকুরদাকে। আমাদের এই ডাকঘরের গল্পে, ঠাকুরদা মানে জানুস করজ্যাক। এক ইহুদি ডাক্তার, তাঁর সহকর্মী স্টেফা আর কয়েক জনকে নিয়ে নানান মানুষের দান আর সরকারি অনুদানের ভরসায় গড়ে তুলেছিলেন এই অনাথাশ্রম। চালিয়েও যাচ্ছিলেন বেশ ভালই। নাতসি বাহিনী এসে প্রথমেই জানিয়ে দিল অনুদান-ফনুদান সব বন্ধ। তা ছাড়া তাঁদের অনেক কষ্টের সঞ্চয়ে কেনা বাড়িটিও ছাড়তে হবে, কারণ সেখানে তৈরি হবে জুতোর কারখানা কে না জানে বিজয়ী সেনার পায়ের দাম অনার্যের বাচ্চার জীবনের থেকে বেশি। তাই তাদের ঠেলে পাঠানো হল ঘিঞ্জি একটা ঠিকানায়। সেই ঠিকানাও টিকল না বেশি দিন। সেখানে নাকি হবে কম্বলের কারখানা, আবার সেই সেনাদের জন্য। বাচ্চাদের ঠেলে পাঠানো হল কুখ্যাত ওয়ারশ গেটোয়। যাওয়ার সময় তারা বেশি কিছু তো নিতে পারল না, কিন্তু নিয়ে গেল তাদের বাগান থেকে একটা ফুল গাছ।

অমলেরা ও চিজওয়ালা
এই অনাথ আশ্রমে বন্দি বাচ্চাগুলোর জানলায় কি আসত কোনও চিজওয়ালা? বলত, ‘চিজ চিজ ভাল চিজ।’ তা হলে কি এই রকম হতে পারত তাদের কথোপকথন?
চিজওয়ালা তুমি কোথা থেকে আসছ?
আমাদের গ্রাম থেকে।
তোমাদের গ্রাম? অ-নে-ক দূরে তোমাদের গ্রাম?
সেই টাট্রা পাহাড়ের তলায়, মরস্কি-অকো হ্রদের ধারে।
মরস্কি-অকো নামটার মানে তো সাগরের চোখ, আর টাট্রা পাহাড় যার রংটা গহন নীল, কী জানি হয়তো তোমাদের গ্রাম দেখেছি।
আমাদের গ্রাম যে অনেক দক্ষিণে, তুমি গিয়েছিলে নাকি ও দিকে?
না, যাইনি। কিন্তু আমার মনে হয় আমি দেখেছি। টাট্রা পাহাড়ের কোলে তোমাদের গ্রাম, সেখানে বছরের অনেক দিনই দুধ সাদা বরফ জমে থাকে।
ঠিক বলেছ বাবা।
সেখানে পাহাড়ের গায়ে সব গরু আর ভেড়া চরে বেড়ায়।
কী আশ্চর্য ঠিক বলছ, আমাদের গ্রামে গরু, ভেড়া চরে বই কী! খুব চরে।
মেয়েরা সব সেই গরু আর ভেড়ার দুধ মিশিয়ে বড় বড় কাঠের জালায় রাখে। তাদের পরনে ফুলতোলা গোলাপি উলের স্কার্ট, সুতির জামা আর লাল ভেলভেটের কোট, তাতে বড় বড় জরি আর বোতামের কাজ।
বা! বা! ঠিক কথা! আমাদের সব গয়লাপাড়ার মেয়েরা তো সারা দিন চিজ বানানোর কাজ করে, তবে তাদের সবার স্কার্টের রং গোলাপি নয়। কিন্তু বাবা তুমি নিশ্চয় সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলে।
সত্যি বলছি চিজওয়ালা, এক দিনও যাইনি। যে দিন ডাক্তার আমাকে বাইরে যেতে বলবে, সে-দিন তুমি আমাকে নিয়ে যাবে তোমাদের গ্রামে?
যাব বই কী বাবা, খুব নিয়ে যাব।
আমরা সবাই রাজা জানুস করজ্যাককে যে দিন ডেকে পাঠালেন আর্যবাহিনীর স্থানীয় প্রতিনিধি ম্যুলের, এই অনাথাশ্রম সম্পর্কে ডাক্তারকে অনেকগুলো প্রশ্ন করেছিলেন তিনি। প্রশ্ন করার কারণ ছিল। অনাথাশ্রম চালাত এই বাচ্চারাই। একটা পার্লামেন্ট ছিল, তাতে অনাথাশ্রমের পরিচালনার নানান দিক নিয়ে সবাই মিলে আলোচনা হত, সিদ্ধান্তও নেওয়া হত। আসলে এই করজ্যাক নামের মানুষটি ছিলেন একটু অদ্ভুত। বাচ্চাদের হাতে কী করে অনেক বেশি নাগরিক ক্ষমতা দেওয়া যায়, তাই নিয়ে ভাবনাচিন্তা লেখালিখি করেছেন সারা জীবন। এই অনাথাশ্রমে সেই চিন্তাগুলো হাতেনাতে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। বাচ্চারা খুবই যোগ্যতার সঙ্গে সেই দায়িত্বগুলো পালন করত, প্রায় সব সময়েই বাচ্চারা যেমন করে। পার্লামেন্ট চলত, খবরের কাগজ প্রকাশিত হত নিয়মিত, তাতে থাকত আশেপাশের খবর আর নানান লেখা, গোটাটা চালাত বাচ্চারাই।
নাতসিরা অনার্য সব মানুষের সব রকমের ক্ষমতা, এমনকী বেঁচে থাকার অধিকারকে খুন করতে চেয়েছিল, এমন একটা গণতন্ত্র আর নাগরিক অধিকারের গল্প তাদের ভাল লাগবে কেন? লক্ষ লক্ষ ইহুদি মানুষদের পাশাপাশি ডাক্তার করজ্যাক, স্টেফা আর ওই অনাথ বাচ্চাদের ইহুদি বলে চিনে নেওয়ার চিহ্ন ‘স্টার অব ডেভিড’ পরিয়ে দিয়েছিল তারা।
ভাবতে ইচ্ছে করে, বিচ্ছিন্নতার, হীনতার এমনকী আসন্ন মৃত্যুর চিহ্ন হিসেবে পরিয়ে দেওয়া সেই তারা চিহ্ন পরে সেই সন্ধ্যায় সেই অনাথাশ্রমে গান উঠেছিল: আজি যত তারা তব আকাশে, সবে মোর প্রাণ ভরি প্রকাশে... আমরাই তো বাচ্চাদের গল্প বলি যে, আকাশের তারারা সব আসলে হারিয়ে যাওয়া মানুষের চির উজ্জ্বল অভিজ্ঞান।

রাজার চিঠি
এ কথাটা স্বীকার করতেই হবে, আর্যবাহিনীর ম্যুলের কিন্তু কোনও শঠতার আশ্রয় নেননি। তিনি ডাক্তারবাবুকে পরিষ্কার বলে দেন, বাচ্চাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা আর্যবাহিনীর পড়তায় পোষাচ্ছে না। যুদ্ধের খরচ অনেক, সে সব মেটানো জরুরি। কাজেই ইহুদি বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। ওদের ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়া হবে ট্রিবলিঙ্কা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে, সেখানে নিয়ে ওদের শেষ করে দেওয়া হবে। তাতে বাকি জীবন যে খরচপাতি হত, সেগুলো বেঁচে যাবে, (আর সেই টাকাটা ব্যবহার করা যাবে ওদের মতো আরও বহু মানুষকে মারতে। কী কুৎসিত ফ্যাসিবাদী যুক্তি, তাই না? কিন্তু ফাসিস্তদের হারিয়ে যারা দুনিয়ার নৈতিক আর সামরিক নেতা হয়েছে, তারাও ঠিক একই ভাবে বাচ্চাদের মুখের ভাত কেড়ে অস্ত্রের পেছনে টাকা খরচ বাড়িয়ে চলেছে। আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়ে চলার যুক্তি নিয়ে আমরা ভাবি কি?)
বাচ্চাগুলোকে মারবেন জানালেও ম্যুলের কিন্তু ডাক্তার করজ্যাককে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কারণ, এক জন ডাক্তার ওই বাচ্চাগুলোর মতো ফালতু বোঝা নন। অনার্যদের মারতে যে বাহিনী লড়ছে, তাদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দরকার। তাই করজ্যাককে বলা হয়েছিল বাচ্চাগুলোকে বধ্যভূমিতে পাঠিয়ে তিনি নিজে বাঁচতে পারেন। ডাক্তারের সহকর্মী স্টেফা নিজেও যেহেতু রক্তসূত্রে আর্য, তাঁকেও বধ্যভূমিতে পাঠানো হবে না।

অমল ও ম্যুলের
যদি সেই ওয়ারশ গেটোর জানলায় কখনও দেখা যেত ম্যুলেরের মুখ, তা হলে কী হতে পারত কোনও শিশুর সঙ্গে এই ধরনের একটা সংলাপ?
পেয়াদা ও পেয়াদা।
কী বলছিস তুই? আমি কর্নেল ম্যুলের। কোথাকার বাঁদর তুই?
বাঃ, সে দিন তো তুমিই এসে আমাদের তারা চিহ্ন পরালে। তোমাকে তো সবাই খুব মানে।
মানে বই কী, না মেনে যাবে কোথায়।
রাজার ডাকহরকরাকে একটু বলে দেবে, আমি জানলায় বসে থাকি।
তো ডাকহরকরা কী করবে?
চিঠি এনে দেবে।
চিঠি? তোকে আবার কে চিঠি লিখবে?
রাজামশাই।
হা! হা! তা লিখবেন বই কী। তুই তো রাজার পরম বন্ধু।
চিঠি এল বলে, আজই আসে কী কালই আসে। আমিই ব্যবস্থা করে দেব।
তুমি এত রেগে রেগে কথা বলছ কেন?
সে কী রে? তোর ওপর রাগ করব? আর্যবাহিনীর এক জন কর্নেলের এত বড় সাহস! না, ওই ডাক্তারের বড্ড বাড় বেড়েছে। ভিখিরি অনাথদের ঘরে রাজাবাদশা ছাড়া কথা নেই। রোসো, তোমাদের আমি মজা দেখাচ্ছি। ওরে ছোঁড়া, তোদের সবার জন্যে রাজামশাই মহাযাত্রার ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস টিকিট পাঠিয়ে দেবেন। বেশি আস্পর্ধা হয়েছে তোদের, তাই না?

প্রাণের ঠাকুর
রাজার চিঠি পেয়ে কী অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল ডাক্তার করজ্যাককে সে আমরা কেবল অনুমানই করতে পারি। ম্যুলেরের ছুড়ে দেওয়া জীবন তিনি লালায়িত হয়ে কুড়িয়ে নেননি। যে অনাথ বাচ্চাগুলোকে বাঁচানোটাই জীবনের কাজ বলে বেছে নিয়েছিলেন, মরণেও তাদের হাতে হাত রেখে চলতে চেয়েছিলেন তিনি। আর্য স্টেফাও শেষ অবধি এই বাচ্চাদের সঙ্গে বধ্যভূমির ট্রেনে উঠেছিলেন।
রাজার চিঠির মর্ম এই শিশুদের বলবেন কি না, তা নিয়ে নিশ্চয়ই দোলাচলে পড়েছিলেন জানুস করজ্যাক। ওরা যে বড্ড ছোট, ওদের ডেকে কী বলা যায়, রাজামশাই তোদের মেরে ফেলবেন। বাঁচার কোনও উপায় নেই। জীবন-মৃত্যুর বোধের এই অকাল বোধনের দায়িত্ব নিয়ে এই ডাক্তার কিন্তু কোনও ধর্মের স্তোত্র আওড়াননি। তিনি বেছে নিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’। ১৯৪২ সালের ৫ বা ৬ অগস্ট ওয়ারশতে জীবনের শেষ দিন ওই শিশুরা অভিনয় করেছিল রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’।

ভেঙে মোর ঘরের চাবি
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, আর্যবাহিনী যখন ওই ১৯২টি অনাথ শিশুকে বধ্যভূমির ট্রেনে চড়াতে নিয়ে যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে কোনও ভয়ের চিহ্ন দেখা যায়নি। রঙিন জামা পরে তারা সহজ ভাবে তাদের ডাক্তার আর দিদিদের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল।
না। আমরা এখনও নিশ্চয় ভাবব, এটা সত্যি নয়। এটা হতে পারে না। শেষে কিছু একটা হবে। এটা কী করে হয়? কেউ কি নেই? ওরা কোনও ভাবেই বাঁচবে না?
এই অবিশ্বাসে আমরা একা নই। বাচ্চারা চলে যাওয়ার পরের দিন ওয়ারশ গেটোতেও ছড়িয়ে পড়েছিল একটা খবর শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গিয়েছে ওদের শাস্তি, বেঁচে গিয়েছে বাচ্চাগুলো। কিন্তু সেটা নিছক গুজব, আমাদের ব্যর্থ মানতের মতো অসহায় আশা। সত্যিই কেউ ছিল না। কোনও দৈব ঘটনা ঘটেনি। বাচ্চারা মরেছিল বীভৎস মৃত্যু।
হয়তো নিজেদের বাঁচাটাকে সহনীয় করার জন্যেই বীভৎস ইতিহাসকে আমরা বীরত্বের কাচ দিয়ে দেখি, নইলে গ্যাস চেম্বারে দম আটকে আসা শিশুর ছবি আমাদের নিশ্বাস রূদ্ধ করে তোলে। আমরা প্রাণপণে ভাবতে চাই, কোথাও কিছু একটা আশ্রয় ওদের নিশ্চয় মিলেছিল। ওরা নিশ্চয় পেরেছিল বীরের মতো সেই শেষ মুহূর্তটাকে আলিঙ্গন করতে।
আমরা ভাবতে চাই, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’র মধ্যে যে বন্দিত্ব থেকে চিরন্তনে উত্তীর্ণ হওয়ার ডাক আছে, সেই ডাক গ্যাস চেম্বারে মরতে থাকা শিশুদের অন্য এক রাজার চিঠি পাঠিয়েছিল। ওরা শান্তি পেয়েছিল। কারণ, ওরা যে রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছিল। আর রবীন্দ্রনাথের থেকে বড় শান্তি, আর শক্তির আশ্রয় আমরা কী-ই বা চিনি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, নিশ্চয় করজ্যাকও চেয়েছিলেন, ‘ডাকঘর’ নাটক বাচ্চাদের দুয়ারটুকু পার হওয়ার সংশয় কাটানোর জোর জোগাবে, ওরা এগিয়ে যাবে জয় অজানার জয় বলে।
সেই জোর, যাকে আমরা আমাদের বোতাম আঁটা জামার নীচে শান্তিতে শয়ান জীবনের নিরীহতর সমাপ্তির মুখে দাঁড়িয়েও রোজ খুঁজি।

সংহার ও উপসংহার
১৯৪২ সালে, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরের বছর ওয়ারশ শহরে জানুস করজ্যাক ও শিশুদের ‘ডাকঘর’ অভিনয়ের আশ্চর্য গল্প এখানেই শেষ। কিন্তু ইতিহাসের শেষ নয়।
জেরুজালেম শহরে করজ্যাকের একটা মূর্তি আছে। মনে রাখা ভাল, ওয়ারশ গেটোয় যাঁরা নাতসি হিংস্রতার শিকার ছিলেন, সেই ইহুদিরাই কিন্তু আবার জেরুজালেম থেকে হাজার হাজার আরব আবালবৃদ্ধবনিতাকে উৎখাত করে নানান গেটোয় পাঠিয়েছেন। আমাদের চার পাশে এক সময়কার উৎপীড়িতরাই হয়ে উঠছেন নতুন দিনের উৎপীড়নকারী। রাবণ থেকে রাম, বা রাম থেকে রাবণ লঙ্কায় ক্ষমতায় এলেও গল্প বদলাচ্ছে না। আমরা জানি না কোনও দিনই বদলাবে কি না।
শুধু জানি, আজও প্রতিদিন বহু আরব শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, বোমায়, গুলিতে, অনাহারে, বিনা চিকিৎসায়। আরও বড় করে দেখলে এই কাহিনি ইরাকের, সার্বিয়ার, রোয়ান্ডার, আফগানিস্তানের এমনকী অসমের কী কাশ্মীরের।
অমল আর সুধারা আজও রোজ মরছে।

সূত্র: করজ্যাক অ্যান্ড দ্য চিলড্রেন, জে ই ফ্যারেল
ছবি: অমিতাভ মালাকার
First Page Rabibasariyo Golpo


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.