অর্থ-চিন্তায় ধুঁকছে সংস্কৃত সাহিত্য পরিষৎ
প্রায় শতবর্ষ জুড়ে শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতি চর্চায় অজস্র অবদানের কৃতিত্ব আছে তার। ৯৮ বছরের পুরনো সেই সংস্কৃত সাহিত্য পরিষৎ এখন অর্থসঙ্কটে ধুঁকছে। অর্থাভাব এমনই যে, পরিষদের ১৮ জন কর্মীর বেতন ১০ মাস ধরে বন্ধ। প্রতিষ্ঠানের তরফে অভিধান তৈরির কাজ শেষ করেও তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
ওই প্রতিষ্ঠান চলে মূলত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুদানে। কিন্তু কেন্দ্রের অনুদান এখন বন্ধ। রাজ্যের অনুদানও প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানাচ্ছেন পরিষৎ-কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে পরিষদের সম্পাদক মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থসাহায্যের আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দফায় দফায় পাঁচটি চিঠি দিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁরা জেনেছেন, সেই আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আশ্বাস, প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে তিনি খতিয়ে দেখবেন।
সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতার মেয়র থাকাকালীন সংস্কৃত সাহিত্য পরিষৎ গড়ার জন্য উত্তর কলকাতায় জমি দিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় ২০ হাজার প্রাচীন পুথির বিশাল সম্ভার আছে ওই প্রতিষ্ঠানের।সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা হয় সেখানে। সেই সঙ্গে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে যাঁদের উল্লেখযোগ্য অবদান আছে, তাঁদের জীবনী প্রকাশ করছে ওই প্রতিষ্ঠান। গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও স্থাপত্যবিদ্যার বিভিন্ন পরিভাষা সংস্কৃত থেকে ইংরেজিতে তর্জমা করে তিনটি অভিধান প্রকাশের কাজও চলছে। গণিতের অভিধানটি ইতিমধ্যেই প্রকাশিত।
কিন্তু অন্য দু’টি অভিধানের কাজ প্রায় শেষ করেও সেগুলিকে আলোর মুখ দেখানোর ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। অর্থাভাবই এর একমাত্র কারণ, আক্ষেপ পরিষৎ-কর্তৃপক্ষের।
কেন্দ্র টাকা বন্ধ করল কেন?
মানবেন্দুবাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থান আগে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন এবং জার্নাল প্রকাশ বাবদ টাকা দিত। বই প্রকাশ এবং গবেষণা প্রকল্পের জন্যও আলাদা করে অর্থ মঞ্জুর করত। কিন্তু এখন তারা কোনও টাকা দেয় না।”
আর মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, বছর তিন-চারেক আগে এক বার একটি প্রকল্পের জন্য পরিষৎ তাদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা অনুদান চেয়ে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছিল। তার পরে আর কেন তাদের কোনও অনুদান দেওয়া হয়নি, ওই মন্ত্রকের কাছেও সেটা স্পষ্ট নয়। মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সম্ভাব্য তিনটি কারণে অনুদান বন্ধ হয়ে থাকতে পারে।
হয় পরিষৎ আগের প্রকল্পের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দেয়নি।
নয়তো পরিষৎকে ফের অনুদান দেওয়ার বিষয়টি উচ্চতর পর্যায়ে কোথাও আটকে আছে।
অথবা রাজ্য সরকার পরিষৎকে অনুদান দিচ্ছে না বলেই হয়তো কেন্দ্রের অনুদানও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
মানবেন্দুবাবু জানান, এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থসাহায্য না-পেলে প্রতিষ্ঠান চালানো কঠিন। রাজ্য বরাবর পরিষৎকে বার্ষিক অনুদান দেয়। কিন্তু তার পরিমাণ সামান্য। ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে ২০১৩ সালে ওই বার্ষিক অনুদান এক লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। মানবেন্দুবাবু জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জানান, প্রতিষ্ঠানের সব কাজ ভাল ভাবে চালাতে এবং কর্মীদের বেতন দিতে মাসে দেড় লক্ষ টাকা প্রয়োজন। রাজ্য সরকার বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করুক। ওই বক্তব্যের সমর্থনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষকও স্বাক্ষর করেছেন। পরিষদের সদস্য সঞ্জিত মুখোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, “রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও চিঠি দিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়েছি। কিন্তু এখনও সাড়া মেলেনি।” পরিষদের আর্থিক দুর্দশার কথা জেনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবেদন পেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.