সস্তা বিদ্যুৎ সরকারি স্কুলে, কমিশনের নির্দেশে স্বস্তি
রকারি সহায়তায় চলা রাজ্যের স্কুলগুলির বিদ্যুৎ খরচ এপ্রিল মাস থেকে এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যাচ্ছে। ওই সব স্কুলকে এপ্রিল থেকে কম দামে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। এত কাল ওই সব স্কুলকে বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হতো বাণিজ্যিক হারে। এপ্রিল থেকে তারা সাধারণ গৃহস্থের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম হারের থেকেও কম দামে বিদ্যুৎ পাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
রাজ্যের স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ২ এপ্রিল থেকে সরকারি, সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলির জন্য এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। রাজ্যের প্রাক্তন স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস বর্তমান সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “অনেক আগেই এটা আমাদের করা উচিত ছিল। এখন যে হল, তাতে খুবই খুশি।”
বিদ্যুৎ বিল মেটানো স্কুলগুলির কাছে দীর্ঘকালের সমস্যা। তাদের বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হয় বাণিজ্যিক হারে। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য গৃহস্থকে যে টাকা খরচ করতে হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিতে হয় স্কুলগুলিকে। অথচ এই সব স্কুল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চলে না। রাজ্য সরকারও বিদ্যুৎ বিল বাবদ তাদের কোনও টাকা দেয় না। উপরন্তু ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে স্কুলের উন্নয়নের জন্য কত টাকা নেওয়া যাবে, তা-ও রাজ্য সরকারই নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এই সমস্যার কথা স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল মেটাতে আর্থিক অসুবিধায় পড়তে হতো স্কুলগুলিকে। অথচ তাদের প্রতি সরকারে একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই কারণেই আবেদন জানানো হয়েছিল রেগুলেটরি কমিশনে।” স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের স্কুলগুলি মূলত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা (ডব্লিউবিএসইডিসিএল) এবং সিইএসসি-র বিদ্যুৎ গ্রাহক। ব্রাত্যবাবু জানান, দুই সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গেই এই ব্যাপারে কথা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অধীন গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুতের বাণিজ্যিক হার (২০১৩-’১৪) প্রথম ১৮০ ইউনিটের জন্য ইউনিট পিছু ৫ টাকা ৪৬ পয়সা এবং শহর এলাকায় ৫ টাকা ৫১ পয়সা। ইউনিট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই হারও ধাপে ধাপে বাড়ে। ৯০০ ইউনিটের বেশি খরচ হলে ইউনিট পিছু ৮ টাকা ১২ পয়সা হারে দিতে হয়। সিইএসসি এলাকায় বাণিজ্যিক হার হল প্রথম ৬০ ইউনিটের জন্য ৫ টাকা ৪০ পয়সা এবং ৩০০ ইউনিটের বেশি হলে ৭ টাকা ৯৯ পয়সা। এত কাল স্কুলগুলির জন্যও এই হার বহাল থেকেছে। সম্প্রতি কমিশন তাদের নির্দেশিকায় জানিয়েছে, স্কুলগুলি ইউনিট পিছু ৪ টাকা ১২ পয়সা দরে বিল মেটাবে। যত ইউনিটই খরচ হোক না কেন, হার একই থাকবে।
রাজ্যের ৫১ হাজার প্রাথমিক স্কুল বিদ্যুৎ বিল মেটানোর জন্য কোনও না কোনও ভাবে সরকারি সহায়তা পায়। তবে নয়া ব্যবস্থায় সব চেয়ে বেশি উপকৃত হবে সরকারি ও সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত প্রায় ১৩ হাজার মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। স্বভাবতই তারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। হিন্দুস্কুলের কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের জন্য ওই স্কুলে ২৮ হাজার ৯১৮ টাকা বিদ্যুতের বিল এসেছে। বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫০০ ইউনিট। কমিশনের নতুন নির্দেশ বলবৎ হলে ইউনিট প্রতি প্রায় ২ টাকা কম দিতে হবে। অর্থাৎ একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও অন্তত ৯০০০ টাকা কম খরচ হবে।
বীরভূমের কেশাইপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক আচার্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “গ্রীষ্মে গড়ে মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল হয়। টাকা মেটাতেও সমস্যা হয়। এ বার নিশ্চয়ই খরচ অনেকটা কমবে। তবে বিদ্যুৎ অপচয় যাতে না হয়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে।”
ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণস্বরুপ নিগম এ দিন বলেন, “কমিশনের বিজ্ঞপ্তি এবং নতুন মূল্যসূচি আমাদের হাতে এসেছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে তারা এই ছাড় দেওয়ায় আমরাও খুশি।” কিন্তু এতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আয় তো কমে যাবে! নারায়ণস্বরুপ বলেন, “বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল মেটানোর সামর্থ্য ছিল না বলে অনেক স্কুল এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়নি। এ বার তারাও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে আবেদন জানাতে পারবে। তাতে বণ্টন সংস্থার আয় বাড়বে।” সিইএসসি-র এক পদস্থ কর্তা বলেন, “রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশ আগেই পেয়েছি। কয়েকটি ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই তা প্রয়োগ করা শুরুও হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.